শা’বী ও সঙ্গীত
ইমাম শা’বী হজরত ওমরের খিলাফতে ইয়েমেনে জন্ম নেন। ‘আমের বিন শুরাহবিল তার ভাল নাম।
যাহাবী লিখেছেন,
قلت : رأى عليا -رضي الله عنه- وصلى خلفه ، وسمع من عدة من كبراء الصحابة
“তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দেখেছেন ও তার পেছনে নামাজ পড়েছেন। বড় বড় সাহাবীদের কথা শুনেছেন।”
رَوَى عَقِيْلُ بنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ مَنْصُوْرٍ الغُدَانِيِّ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، قَالَ: أَدْرَكْتُ خَمْسَ مائَةِ صَحَابِيٍّ، أَوْ أَكْثَرَ
আকিল বিন ইয়াহিয়া বলেন, আবু দাউদ আমাকে বলেছেন শুবা থেকে, তিনি মনসুর আল গাদানি থেকে যে, শা’বী বলেছেন, “আমি পঞ্চাশের অধিক সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছি।”
(সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
বিখ্যাত এই তাবেয়ী ইমাম কেবল বড় মুহাদ্দিস ছিলেন না, একজন সঙ্গীত সমঝদারও ছিলেন।
আন্দালুসের আলেম ইবনে আব্দি রাব্বিহ (৩২৮ হি) তার বিখ্যাত “আল ইকদুল ফরিদ” গ্রন্থে ইমাম শা’বীর সঙ্গীত রুচি নিয়ে একটি ঘটনা লিখেছেন —
وحدث عباس بن المفضل قاضي المدينة، قال: حدثني الزبير بن بكار قاضي مكة عن مصعب بن عبد الله قال:
“মদীনার কাজী আব্বাস বিন মুফাজ্জল বলেন, আমাকে মক্কার কাজী যুবায়ের বিন বক্কর, মুসআব বিন আবদুল্লাহর সূত্রে বলেছেন,
دخل الشعبي على بشر بن مروان وهو والي العراق لاخيه عبد الملك بن مروان، وعنده جارية في حجرها عود؛ فلما دخل الشعبي امرها فوضعت العود، فقال له الشعبي: لا ينبغي للامير ان يستحي من عبده. قال: صدقتم:
ثم قال للجارية: هاتي ما عندك. فأخذت العود وغنت:
ইমাম শা’বী বিশর বিন মারওয়ানের দরবারে প্রবেশ করেন, যিনি তার ভাই আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের পক্ষ থেকে ইরাকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সেখানে তিনি এক বাঁদি দেখলেন যার কোলে ছিল একটি উদ। শা’বীকে দেখে সেই মেয়েকে গভর্নর থামতে বলেন, ফলে সে তার উদ রেখে দেয়।
শা’বী বললেন, “আমিরের উচিত নয় নিজের দাসের ব্যাপারে লজ্জা পাওয়া।” গভর্নর বলেন, “হ্যাঁ, আপনি সত্য বলেছেন।” তারপর মেয়েটিকে বলেন, “তোমার কী আছে দেখাও।”
এতে মেয়েটি তার উদ তুলে নেয় এবং গেয়ে ওঠে,
ومما شجاني أنها يوم ودّعت … تولت وماء العين في الجفن حائر فلما أعادت من بعيد بنظرة … إليّ التفاتا أسلمته المحاجر
“বেদনার ছিল যেদিন সে বিদায় নিয়েছিল।
মুখ ছিল ফেরানো, চোখে ছিল অশ্রুর ঘনঘণ্টা।
দূর থেকে যখন সে ফিরে তাকালো
বাঁধ ভেঙে প্লাবন বয়ে গেল।”
فقال الشعبي: الصغير أكيسهما . يريد الزير، ثم قال: يا هذه، أرخي من يمّك، وشدّي من زيرك .
শেষ হলে শাবী বললেন, “দুই উদের মধ্যে ছোটটাই বেশি ভালো।” তিনি ‘যির’-এর কথা বলছিলেন। তারপর তিনি গায়িকাকে বললেন, “শোন মেয়ে, আরো ছেড়ে দিয়ে গাইবে, আর ‘যির’ শক্ত করে বাঁধবে।”
فقال له بشر: وما علمك؟ قال: أظن العمل فيهما. قال:
صدقت، ومن لم ينفعه ظنّه لم ينفعه يقينه.
বিশর শাবীর কথা শুনে বললেন, “আপনি কীভাবে এসব শিখলেন?” তিনি বললেন, “আমি দুটো নিয়ে চিন্তা করে বলেছি।” বিশর বললেন, “সঠিক বলেছেন। যার ধারণা তার কাজে আসে না, তার নিশ্চিত জ্ঞানও কোন উপকার করে না।”
(সমাপ্ত)
সূত্র:
আল ইকদুল ফরিদ,
ইবনে আব্দে রব্বিহি আল আন্দালুসি (৩২৭ হি),
খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ১৫-১৬।
সঙ্গীতবোদ্ধা ইমাম শা’বী একজন সাহসী যোদ্ধাও ছিলেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে তিনি শামিল হয়েছিলেন। বনি উমাইয়ার যুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি ইমাম আবু হানীফা ও তার উস্তায হাম্মাদ দুজনেরই শিক্ষক ছিলেন। বিরাশি বছর তিনি জীবিত ছিলেন। ১০৫ কিংবা ১০৭ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। রহিমাহুল্লাহু তা’আলা।