স্বয়ং আল্লাহ তাঁর রাসূল পাক (সা:) এর উপর মিলাদ পড়েন।
মিলাদ আরবী শব্দ। এর অর্থ – জন্মকাল। এককথায় বিশ্বনবী হযরত রাসূলে করীম সঃ এর জন্মকালীন ঘটনাবলীকে মিলাদ বলা হয়ে থাকে।
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ স্বয়ং ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর উপরে দরুদ পাঠ করেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও তাঁর উপরে দরুদ পড় এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ কর।” (সূরা আহযাব, আয়াত নং ৫৬)।
রাসূল পাক সঃ বলেন,
“একদা বিখ্যাত সাহাবী হজরত আব্বাস (রাঃ) তাঁর ঘরে লোকদেরকে একত্রিত করে রাসূল পাক সঃ এর জন্ম দিনের বর্ণনা করছিলেন, যা শুনে উপস্থিত সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে রাসূল (সঃ) এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। এমন সময় হযরত রাসূল পাক সঃ সেখানে উপস্থিত হলেন এবং খুশি হয়ে তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন – তোমাদেরকে শাফায়াত করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে।” (সাবীলুল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্তফা কিতাব, জালালুদ্দিন সুয়ূতি)।
নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে মিলাদ শরিফ পেশ করা হলো।
দরুদ শরিফ:
আল্লাহুমা ছাল্লেআলা ছাইয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মদ ওয়ালা আলি ছাইয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মদ!!
নুর নবীজির আগমনে জগৎ হলো উজালা
পড় দরুদ তাঁর উপরে ওহে আশেক নিরালা!
আপনার এশকে সকল সৃজন ঐ আকাশ আর এই জমিন
সকল সৃষ্টির মূলে আপনি রাহামাতাল্লিল আলামিন!!
তুর পাহাড়ে মুসা নবী জুতা খোলার আদেশ পায়
দয়াল রাসূলের জুতার ধূলায় আল্লাহর আরশ ধন্য হয়।
আপনি আল্লাহর জ্যোতি ঝলমল হে ইমামুল মুরসালীন
পড়েন দরুদ ফেরেশতাদের নিয়ে স্বয়ং রাব্বুল আলামীন!!
দরুদ আরো সালাম জানাই রাসূল আপনার পাক রওজায়
আল্লাহুমা ছাল্লেআলা ছাইয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মদ
ওয়ালা আলি ছাইয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মদ!! (প্রতিটি অন্তরার শেষে এই দরুদ শরিফ একবার করে পাঠ করতে হবে )
কাছিদা শরীফ:
ইয়া রাসূল আল্লাহ ইয়া হাবীব আল্লাহ (৬ বার )।
আমার মউতের নিদানকাল
আসিবেন মোর্শেদ গো রাসূলকে নিয়ে!
দেখিব আমি হৃদয় জুড়াইয়া!!
পাই যদি রাসূল আপনার দিদার
মউতের কষ্ট থাকবে না আমার
শান্তি পাবো গো আপনাকে দেখিয়া!!
মুনকার নকীর আসিয়া ছাওয়াল করবে বসাইয়া
জবাব দিব আমি আপনাকে দেখিয়া
চুমিব আমি আপনার কদম ধরিয়া!!
আশেকের মিলাদে হাজির হন রাসূলে
দেখা যায় তাঁরে অন্তরচক্ষু খুলিলে
তাঁর সম্মানে আসুন সালাম জানাই দাঁড়াইয়া!!
ইয়া রাসূল আল্লাহ ইয়া হাবীব আল্লাহ (প্রতি অন্তরার শেষে ৬ বার করে বলতে হবে )
সালাম:
ইয়া ইমাম/ ইয়া নবী ছালামুয়ালাইকা ইয়া রাসূল ছালামুয়ালাইকা
ইয়া হাবীব ছালামুয়ালাইকা ছালাওয়া তুল্লাহ আলাইকা!!
আরবের মরু প্রান্তরে পাঠালেন প্রভু আপনারে
হযরত আব্দুল্লাহর শাহী প্রাসাদে হযরত আমিনা মায়ের উদরে!!
১২ই রবিউল আউয়ালে সোমবারের প্রভাতকালে
জন্মিলেন নূরের ছেলে হযরত আমিনা মায়ের কোলে!!
কুল মাখলুক উদ্ধার করিতে কত কষ্ট করলেন ধরাতে
কাঁদিতেন উম্মতের মায়ায় এখনও কাঁদেন মদিনায়!!
হাশরে রাসূল দো-জাহান কাঁদিয়া হবেন পেরেশান
বলবেন হে পরওয়ারদিগার মাফ কর উম্মত আমার!!
দেখা দেন দয়া করিয়া এ আরজ আপনার কদমে!!
ইয়া ইমাম ছালামুয়ালাইকা ইয়া রাসূল ছালামুয়ালাইকা
ইয়া হাবীব ছালামুয়ালাইকা ছালাওয়া তুল্লাহ আলাইকা!! (প্রতি অন্তরার শেষে এটি পাঠ করতে হবে)।
মিলাদ অর্থ রাসূল পাক সঃ উপর দরুদ ও সালাম পেশ করা হয়। অর্থাৎ রাসূল পাক সঃ এর জন্ম বৃত্তান্ত ও গুণকীর্তন পেশ করার নামই হলো মিলাদ। যাহা পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন: সূরা আজহাব ৫৬ নং আয়াতে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফের কোথাও ঘোষণা দেন নাই যে, আমি নামাজ পড়ি, হে মুমিন বান্দা তোমরাও নামাজ পড়। আমি রোজা রাখি, তোমরাও রোজা রাখ। সর্বোপরি বলা যায় যে, আল্লাহ নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্ব ইত্যাদি কোন ইবাদতই করেন না। আল্লাহ যদি নামাজ পড়তো, তাহলে সেজদা দিতো কারে, নিশ্চয়ই আরেকটি আল্লাহ নেই। কারণ আল্লাহ তো এক এবং অদ্বিতীয় অতুলনীয়। মহান আল্লাহ তায়ালা সকল ইবাদতের মালিক আর আমরা হলাম ইবাদতকারী। সুতরাং আল্লাহর কোন ইবাদতের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু আমার আল্লাহ তায়ালা তাঁর মহান বন্ধু হযরত রাসূল পাক সঃ এর উপর তাঁর ফেরেশতাদের নিয়ে দরুদ ও সালাম পড়ে। (যাকে আমরা মিলাদ বলি)। শুধু তাই নয়, সকল বিশ্বাসী বান্দাকে দরুদ ও সালাম পেশ করতে বলা হয়েছে। কোন অবিশ্বাসীকে বলা হয়নি। আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে শুধু তাদেরকেই আল্লাহ মিলাদ পড়তে বলছেন। তাহলে স্পষ্ট বুঝা যায় আল্লাহ তায়ালা মহান পরম বন্ধুকে কতোটা ভালোবাসে এবং সম্মান করে। এখানে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে নিবিড় প্রেমের সম্পর্ক বিদ্যমান। গভীর ভালোবাসার বন্ধন আছে বিধায় আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের নিয়ে রাসূল পাক সঃ এর উপর মিলাদ পড়ে এবং তাঁর সকল বিশ্বাসী বান্দাদেরকে মিলাদ পড়তে বলছেন।
আমাদের বর্তমান সমাজে দেখা যায় তাবলীগ জামাত, আহলে হাদিস এবং অধিকাংশ ওহাবী মোল্লারা এই মিলাদকে বিদাত হারাম ফতোয়া দিচ্ছে। এখন বিচারের ভার আপনার উপর অর্পণ করলাম, এরা কি আমার আল্লাহ এবং রাসূল পাক সঃ এর ঘোরতর দুশমন নয়? এদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন, এরাই সেই কারবালা প্রান্তরের কাফের এজিদের প্রেতাত্না দোসর। এদের কাছ থেকে সাবধানে থাকুন এবং নিজের ঈমান বাঁচান।
সূত্র: মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা।
নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।