রাসূল (সাঃ) বোরাকে আরোহন করার রহস্য ভেদ।
বোরাক আরবী শব্দ। এর অর্থ উজ্জ্বল, আলোকময় ইত্যাদি। বারকুন শব্দ থেকে এর উৎপত্তি, যার অর্থ বিজলী।
প্রচলিত ধারণা মতে, হযরত রাসূল পাক সঃ যে বাহনে আরোহন করে মেরাজে গমন করেছিলেন, তাকে বোরাক বলা হয়। দুই পাখা বিশিষ্ট বোরাকের চেহারা ছিল নারী আকৃতির, আর দেহ ছিল ঘোড়ার আকৃতি।
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“পবিত্র ও মহিমাময় আল্লাহ, যিনি তাঁর বিশিষ্ট বান্দাকে তাঁর নিদর্শন দেখাবার জন্য রাতে সফর করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় (বায়তুল মোকাদ্দাস), যার পরিবেশ তাঁরই আর্শীবাদ পুষ্ট, তিনি তো সব শোনেন, সব দেখেন।” (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত নং ১)।
পবিত্র কুরআনের বর্ণনার পাশাপাশি তাসাউফের সাধনা করে আমি যা উপলব্ধি করেছি, তা হলো হযরত রাসূল পাক সঃ মেরাজের রজনীতে আল্লাহ প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা বলে স্বর্গীয় বাহনে আরোহন করে স্বশরীরে কাবা ঘর থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে উর্ধ্বলোকে আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেছিলেন। হযরত রাসূল পাক সঃ এর ঐ পরিভ্রমণ বিদ্যুৎ গতিতে হয়েছিল বিধায় ঐ স্বর্গীয় বাহনকে বোরাক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বোরাক বলতে মানুষের জীবআত্নার ইচ্ছা শক্তি বা নফসকে বুঝায়। এ জীবাত্মা বিদ্যুতের ন্যায় দ্রুত গতি সম্পন্ন হওয়ায় চোখের পলকে হাজার হাজার মাইল দুরে গমনে সক্ষম। যেমন,স্বপ্নের মধ্যে মানুষ দেখতে পায়, সে হাজার হাজার মাইল দূরের কোন জায়গায় গেছে। যদিও প্রকৃতপক্ষে তাঁর স্হূল দেহ তখন বাড়ীতেই ঘুমিয়ে আছে। হযরত রাসূল সঃ এর পরমাত্মা তাঁর জীবাত্মার উপর সওয়ার হয়ে সুদুরের মাকাম থেকে শুরু করে নশর, শামসি, নূরী, কুরব, মকীম হয়ে নাফসির মোকাম তথা আনার মোকাম পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন এবং সমগ্র সৃষ্টির সব রহস্য তিনি অবগত হয়েছিলেন। হযরত রাসূল পাক সঃ এর ঐ শিক্ষা লাভ করে সূফী সাধক অলী আল্লাহগণ এখন আধ্যাত্নিক পরিভ্রমণ করে বিভিন্ন মাকাম অতিক্রম করে থাকেন।
হযরত রাসূল পাক সঃ এর বোরাকে আরোহণের রহস্য হচ্ছে, তার পবিত্রতম নফস রুহকে বহন করে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। আল্লাহপ্রাপ্ত সাধকগনও এ পদ্ধতিতে তাঁদের সাধনাময় জীবনের উচ্চতর মাকাম হাসিলের সময় রুহানীভাবে সায়ের করে স্রষ্টা ও সৃষ্টি জগতের বহু রহস্য অবলোকন করে থাকেন।
পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিশেষে বলা যায় যে, হযরত রাসূল পাক সঃ এর পরমাত্মা তাঁর জীবাত্মার উপর সওয়ার হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে যে স্বশরীরে গমন করেছিলেন, এর প্রমাণ পাওয়া যায় অলী আল্লাহগণের সায়ের বা আত্মিক পরিভ্রমণ থেকে। অলী আল্লাহগণ বিভিন্ন প্রকার সায়ের করতে করতে অন্তর জগতের বিভিন্ন মাকাম অতিক্রম করে আরেফ বিল্লাহর স্তরে উপনীত হন। আর তখন তিনি মুহূর্তের মধ্যেই সৃষ্টিজগতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে স্বশরীরে যেতে পারেন।
গ্রন্থসূত্র: আল্লাহ কোন পথে।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।