আমলনামা কি এবং উহা কিভাবে সংরক্ষিত হয়ে থাকে?
পোস্টটি সবার জন্য নহে। আত্মজ্ঞান লাভের উদ্দেশ্য যারা সূফিবাদ চর্চা করে পোস্টটি শুধু তাদের জন্য।
আমল আরবী শব্দ, যার অর্থ কাজ, কর্ম, প্রশাসন, রাজত্ব ইত্যাদি। নামা ফারসী শব্দ, যার অর্থ লিখিত, দলিল ইত্যাদি। আমলনামার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে লিখিত কর্ম বিবরণী।
পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফের কোথাও আমলনামা শব্দটি ব্যবহার হয়নি। বরং এই ক্ষেত্রে কিতাব শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। তবে, প্রচলিত ধারণা মতে – শেষ বিচারের দিনে প্রাপ্ত মানুষের ভালমন্দ কর্মের সংরক্ষিত হিসাবকে আমলনামা বলা হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“অতঃপর যার লিখিত কর্মবিবরণী তার ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবে, লও আমার আমলনামা পাঠ কর।” (সূরা আল হাক্বক্বাহ, আয়াত নং ১৯)।
“কিন্তু যার লিখিত কর্মবিবরণী তার বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, হায় আমাকে যদি আমার লিখিত কর্মবিবরণী না দেয়া হতো।” (সূরা আল হাক্বক্বাহ, আয়াত নং ২৫)।
“প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্ম আমি তার গ্রীবাদেশে ঝুলিয়ে দিয়েছি ও কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য একটি লিখিত কর্মবিবরণী বের করে দেব, যা সে খোলা পাবে। আমি বলবো – তুমি তোমার লিখিত কর্মবিবরণী পড়। আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব নিকাশের জন্য যতেষ্ট।” (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত নং ১৩ ও ১৪)।
হযরত রাসূল পাক সঃ বলেন,
“প্রত্যেক লোকের জন্য প্রতিদিন এক একটি নতুন আমলনামা তৈরি হয়। যে লোক কেবল পাপই করে, তওবা করে না, তার সে দিনের আমলনামা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। কিন্তু যে লোক তওবা এস্তেগফার করে আল্লাহ তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন, যার ফলে তার আমলনামা উজ্জ্বলভাবে বিকশিত হয়।” (দাকায়েকুল আখবার, পৃষ্ঠা নং ১৩৮)।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বর্ণনার পাশাপাশি তাসাউফের সাধনা করে আমি যা পেয়েছি, তা হলো – আমলনামা বলতে মানুষের সৎ কর্ম দ্বারা আত্মার উন্নতি এবং অপকর্ম দ্বারা আত্মার অবনতিকে বুঝায়। মানুষের কর্মের চিত্র আত্মার স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকাকেই আমলনামা বলা হয়েছে। ভাল কর্মের ফল যেরুপ স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে, তেমন মন্দ কর্মের ফলও স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন, মানুষ তার কর্মফল নিজেই স্পষ্ট দেখতে পাবে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, বর্তমান এই বিজ্ঞানের যুগে ভিডিও ক্যাসেটের মাধ্যমে যেরুপ কোন ব্যক্তির কথা ছবিসহ রেকর্ড করা হয়ে থাকে, প্রয়োজনবোধে পিছনে অথবা সামনে ফিতা ঘুরিয়ে উক্ত ব্যক্তির কথা শোনা ও ছবি দেখা যায়, অনুরুপভাবে আল্লাহ মানুষের আমলনামা প্রয়োজনবোধে তাকে (বান্দাকে) দেখিয়ে দিবেন, ফলে বান্দার অস্বীকার করার কিছুই থাকবে না।
গ্রন্থসূত্র: আল্লাহ কোন পথে।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।