হোমপেজ আত্ম সচেতনতা সূফীগণ নিজেরা সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য কি এদেশে আগমন করেছেন?

সূফীগণ নিজেরা সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য কি এদেশে আগমন করেছেন?

495

সূফীগণ নিজেরা সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য কি এদেশে আগমন করেছেন?

অনেকে বলে বেড়ায় যে- “কাজ-কর্ম না করে আরামে থাকা আর অন্যদেরকে ধোঁকা দিয়ে নিজেরা সমৃদ্ধ হওয়ার জন্যেই এদেশে সূফী ও সূফীবাদের আগমন হয়েছে।” তারা সম্ভাবত জানেই না যে- এদেশের সূফীরা তাদের ধন-সম্পদের বিশাল ভান্ডার লাত্থি মেরে সূফী হয়েছেন। সেই আদিকাল থেকেই হৃদয়ের প্রশান্তি লাভের জন্য ধন-সম্পদওয়ালারা তাদের পায়ের কাছে পরে থাকতো। কারণ ধন-সম্পদ ভিতরে শান্তি আনে না। পরম শান্তির খোঁজ দিতেন সূফীরা। সূফীদের মধ্যে এমন সূফীও ছিলেন যারা রাজা-বাদশাহ ছিলেন। রাজত্ব ত্যাগ করে সূফীত্ব গ্রহণ করেছেন।

বাংলার সূফীদের নিয়ে এধরনের কথা বলা হয়। আচ্ছা, বাংলাদেশে কে আসতে চায় অর্থের লোভে? সবাই তো উন্নত জীবনের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পারি জমায়। পূর্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন কেমন ছিল? খুব সুখের নাকি কষ্টের? এটা সবাই জানে পূর্বের জন-জীবন কতটা কষ্টের ছিল। সেখানে ইরাক-ইরান ছিল সমৃদ্ধশালী দেশ। সেই সমৃদ্ধশালী ইরান-ইরাক থেকে বাংলাদেশে আরাম খুঁজতে কোন ব্যক্তি আসবেন? কিভাবে সম্ভব? নিজের বুঝ তো পাগলেও বুঝে। পাগল না হলে ঐ সময় কেউ ইরাক-ইরান থেকে বাংলাদেশে আসে নাকি? আসলে সূফীরা পাগলই ছিলেন, তবে আল্লাহর পাগল। তাই ঐ সময়ে ইরাক-ইরানের উন্নত জীবন ছেড়ে বাংলাদেশে এসে ইসলাম প্রচার করেছেন। এসব বুঝতে তো খুব বেশি ইতিহাস জানা দরকার নেই আর খুব শিক্ষিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। এদেশের দরিদ্র মানুষেরা তা ভালো করেছেই বুঝতে পেরেছিলেন বলেই সূফীদের তারা সম্মান করতেন।

আর হ্যা, সূফীদের রাজা বাদশারা কদর করতেন, কারণ রাজারা মূর্খ ছিল, সূফীদের উচ্চ-শিক্ষিত ব্যক্তির সম্মান করেন, কারণ উচ্চ-শিক্ষিত ব্যক্তিরাও মূর্খ। সূফীবাদ বিরোধী এধরনের লোকদের থেকে আমরা নতুন একটি থিওরী পেয়েছি। আর তা হল- শিক্ষিত, জ্ঞানী-গুণী, প্রভাবশালী, হত-দরিদ্র থেকে শুরু করে আমাপর সকল শ্রেণীর মানুষ যাদের সম্মান করেন, সেই সমস্ত সম্মানিত সূফী ব্যক্তিদের সমালোচনা করতে পারলেই প্রকৃত শিক্ষিত ও জ্ঞানী হওয়া যায়।

৮ ঘন্টার শিক্ষকতা পেশাতেও আজ অনেক টাকা। বসে বসে শিক্ষা দান। এটিও পরিশ্রম এবং পেশা। এনিয়ে কারো দ্বিমত নেই, আর অনেক সম্মানের পেশা। অথচ একজন সূফী সারাজীবন ব্যয় করে দেন আধ্যাত্মবাদের শিক্ষকতায়। অর্থাৎ বস্তুবাদী চিন্তাতেও তো সূফীরা অন্যদের চেয়ে বেশি পেশাদার ও পরিশ্রমী। কিন্তু তাদের এই শ্রম ও পেশাদারিত্ব শুধু আল্লাহকে কেন্দ্র করেই।

মানুষ ঠকানো এই পুঁজিবাদী-ভোগবাদী সমাজে ত্যাগ ও ভালোবাসার শিক্ষা দিয়ে সূফীরা অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছেন। আমরা ত পছন্দ করি সেইসব ব্যক্তিদের; যারা আমাদের সুদ খাওয়া সেখাবে, কিভাবে মানুষ ঠকিয়ে ব্যবসা করা যায়, কিভাবে অন্যকে ধোঁকা দিয়ে দ্রুত ধনী হওয়া যায়। আমাদের আইডল বা আদর্শ হলো তারা- যারা দুর্নীতিতে পারদর্শী, যারা ধর্মকে পূঁজি করে হারাম উপায়ে হালাল ব্যবসা করে, যারা অর্থ ও ক্ষমতার মাঝে সুখ খোঁজার অনুপ্রেরণা দেয়।

শক্ত মাটিকে চাষের উপযুক্ত করে বীজ বোনা কৃষকের পরিশ্রম চর্ম চোখে দেখেও আমরা তাদের পরিশ্রমের সম্মান দিতে জানি না; সেখানে চর্ম চোখে দেখা যায় না প্রেমচাষী সূফীদের আমরা কিভাবে পছন্দ করতে পারি! সূফীরা মানুষের অনুর্বর হৃদয়ে প্রেমের চাষাবাদ করেন, এই কৃষকদের পরিশ্রমকে তারাই মূল্যায়ন করতে পারেন, যাদের হৃদয়ে প্রেম রয়েছে। ভোগবাদী-বস্তুবাদী বা পুঁজিবাদীরা সূফীদের পরিশ্রম দেখতে পারে না। এই পরিশ্রম দেখার সেই চোখ তাদের নেই, এই ভাববাদ বুঝার প্রেমের সেই হৃদয় তাদের নেই।

লেখা: DM Rahat