কালের বিবর্তনে ঈশ্বরেরও বিবর্তন হয়েছে৷

কালের বিবর্তনে ঈশ্বরেরও বিবর্তন হয়েছে৷

যুগ যত উন্নত হয়েছে ঈশ্বরও তত উন্নত হয়েছে, যদিও একথা শুনতে অদ্ভুত তথাপি ইহাই সত্য৷ মানুষের ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা ক্রমশ পরিবর্তন হয়েছে এবং তাঁর প্রচার প্রসারও লাভ হচ্ছে। সর্বকালে’ই ঘটে আসছে এই ঈশ্বর বিষয় ধারণাটি তোমাদের’ই সৃষ্টি, এবং এটি তোমাদের’ই কল্পনার প্রকাশ আর কিছু নয়, এই ঈশ্বরের প্রকাশ সব সময়’ই পরিবর্তন হয় এবং তাতে অন্তরালবর্তী সত্যটিও উত্তরোত্তর প্রকাশিত হচ্ছে।

তোমরা কালের বিবর্তন ভুলে যাও, এটি তোমাদের মস্তবড় ভুল, যানা উচিত কালের বিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের মস্তিষ্ক, সমাজ ও জীবন কাঠামোর বিবর্তন ঘটে৷ এই বিবর্তন শুধু তোমাদের জীবনের উপরে’ই নয়, বরং এটি সকল ধর্মের উপরেও প্রভাবিত হচ্ছে। কালের বিবর্তন অস্বীকার করে তোমরা কখনো’ই কোনো কিছুতে সমন্বয় ঘটাতে পারবেনা। তোমরা সারাজীবন ধরে এই মস্ত বড় ভুলটি করে আসছো যে আগের সব কিছুর সাথে বর্তমানকে মাপতে চাইছো৷ পাঁচ হাজার বছর আগের কালচার আর চৌদ্দশত বছর আগের কালচারের সাথে এখনকার কালচার মিলাইতে যাওয়াটা’ই অনেক বড় অজ্ঞতা।

তোমাদের মনে রাখতে হবে যে আজকে তোমরা যেমন আদর্শ মেনে চলছো এটিও ভবিষ্যতে বিবর্তনের আওতাধীন, কাজে’ই তোমাদের বর্তমান আদর্শকেও অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না৷ যদি ঐ যুগ তোমার আদার্শকে গ্রহণ না করে, এতে তোমাদের কিছু করার নেই। মনে রাখবে তোমারদের আদর্শ দিয়ে কেবল বর্তমানকে পরিচালনা করা যেতে পারে, এটি দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের বিচার করিওনা, তাহলে তোমাদের আদর্শ টিকবেনা। প্রত্যেককে’ই তার নিজ যুগ আদর্শ দিয়ে’ই বিচার করতে হয়, তোমরা যীশুকে দিয়ে কৃষ্ণের বিচার করতে চাইছো, তোমরা কৃষ্ণকে দিয়ে বুদ্ধের আর মুহাম্মদকে দিয়ে সকলের বিচার করতে চাইছো এটি তোমাদের অনেক বেশি অজ্ঞতা, যার ফলে আজ তোমরা মানুষে মানুষ বিভাজন হয়েছো।

তোমরা কোনো ভাবে’ই মানতে পারছোনা যে যার যার নিজস্ব আদার্শ রয়েছে, এবং যার যার সমকাল যেমন ছিলো সে ঠিক তেমন’ই আদর্শ বিবর্তনে ছিলেন৷ মুসলিমরা তাদের ফেরেশতা দিয়ে সনাতনীদের দেবতাকে বিচার করেন, যার ফলে তাঁরা সনাতনীদের দেব দেবতাদের অস্বীকারছেন৷ তোমরা যদি তোমাদের উদ্দেশ্য দিয়ে অপরের উদ্দেশ্য’কে বিচার না করতে তবে তোমরা কেহ কারো উদ্দেশ্যকে অস্বীকার করতেনা৷ তোমরা উপাসনার ক্ষেত্রেও একই ভুল করে আসছো তোমরা মসজিদে উপাসনা করছো দেখে মন্দিরে শিরক হয় এটা ভেবে বসে আছো, তোমরা মাজারে যাচ্ছোনা দেখে তোমরা মাজারকে শিরক বিদাতের আখড়া ভেবে ফতোয়া দিচ্ছো।

এখানে’ই তোমরা তোমাদের মতাদর্শ ও তোমাদের উদ্দেশ্যকে অপরের মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছো, একইভাবে নাস্তিকদেরকেও দেখি ধর্মগুলির উপর তাঁরা খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছে, এরা বিগত কালের যীশু, কৃষ্ণ, মুহাম্মদ, বুদ্ধর কর্মকে এই কালে এসে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, তাঁরাও বুঝতে চাইছেনা যে কালের বিবর্তনের ফলে সকল ভাবাদর্শের’ই পরিবর্তন ঘটে৷ একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে যে তোমরা প্রাচীন কালের মানুষদের ঈশ্বর ও দেবদেবী বিশ্বাস ধারণাকে নিয়ে এখন উপহাস করতেছো এবং এটা যুক্তিযুক্ত, ঠিক সেই ভাবে’ই তোমাদের বর্তমান ভাবনার চেয়েও উন্নত ভাবনা নিয়ে ভবিষ্যতে যারা আসবেন তাঁরাও তোমাদের ধারণাকে উপহাস করবেন৷ এক’ই ভুল আধ্যাত্মবাদেও দেখা যায়, আধ্যাত্মবাদের গুরুগণ তাদের শিষ্যাদিগকে প্রাচীন শিষ্যদের ত্যাগের ন্যায় ত্যাগী দেখতে চান, আবার শিষ্যরাও বর্তমান গুরুদেরকে প্রাচীন আধ্যাত্মিক গুরুদের কালচার ধারণকারী দেখতে চান, এই কালের বিবর্তন তাঁরাও মেনে নিতে হিমসিম খাচ্ছেন৷

এ কথা’ই সত্য যে যুগের ফেরে সকল দেব দেবতাদের বিবর্তন হয়েছে এবং ঈশ্বরেরও বিবর্তন হয়েছে। প্রতিটি ধর্মের ধর্মশুরুদের এই বিবর্তনের সাথে পরিচিত হওয়া জরুরী বলে আমি মনে করছি৷ তাঁরা যদি কালের বিবর্তনের সাথে পরিচিত না হতে চায় তবে তাদের ধর্মশুরু হওয়া উচিত নয়, কারণ তাঁরা প্রাচীন নিয়ম নীতি এ যুগেও বয়ান করে যাচ্ছেন যার ফলে নিজধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ ও উপহাসের সম্মুখীন হচ্ছে। আমি তোমাদেরকে কোনো ধর্মের ঘোর ধার্মিক হতে বলছি না, কারণ ঘোর ধার্মিক না হয়েও অনেক বড় ধার্মিক হওয়া যায়, ঈশ্বর সম্পর্কে একটি কথাও না বলে ঈশ্বরপ্রেমী হওয়া যায়, ঈশ্বরে অবিশ্বাসী এটা স্বীকার করেও ঈশ্বর বিশ্বাসীদের চেয়েও বড় বিশ্বাসী হওয়া যায়। ঈশ্বর বিষয় না জেনেও ঈশ্বরকে উপস্থিত করা যায়৷ এখানে আমি তোমাদেরকে আস্তিক বা নাস্তিক কোনোটা’ই হতে বলিনি, আমি বলছি না যে তোমরা আস্তিক হও বা নাস্তিক হও, তোমাদেরকে এই দুটোর একটাও হতে হবেনা, মূলত আমি বলতে চাইছি তোমরা শুধু তৃতীয়টা হও, মানে তোমরা একজন অনুসন্ধানকারী হও।

অনুসন্ধানকারী হতে চাইলে তোমরা আস্তিক বা নাস্তিক এই দুটোর একটাও হতে পারবেনা, এখানে তোমাদের কোনো মতাদর্শের মাঝে আবদ্ধ থাকা চলবেনা, তোমরা যদি সত্য’ই কিছু জানতে চাও, তবে তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে শূন্য হয়ে যেতে হবে, সকল মতাদর্শ থেকে তোমাদেরকে উন্মুক্ত হতে হবে, তবে’ই তোমরা একজন খাঁটি অনুসন্ধানকারী হয়ে উঠতে পারবে৷ সবাই দুটো পথে পরিচালিত হচ্ছে, হয় ভালো, আর না হয় মন্দ, হয় আস্তিক আর না হয় নাস্তিক, কিন্তু কেহ আস্তিক নাস্তিকের বাহিরের পথে হাঁটেনা এবং এ পথে হাঁটার জন্যও কেহ পরামর্শ দেয় না।

আমি তোমাদেরকে বলছি তোমরা এই দুটো পথ ত্যাগ করে অন্য পথে হাঁটো, কারণ এই পথটি’ই তোমাদেরকে মহান গড়ে দিতে পারে, আর এই অনুসন্ধানীয় পথ’ই তোমাকে ঈশ্বরে পরিনত করে দিবেন, কালের বিবর্তন অনুসন্ধানকারীকে কখনো’ই বাধাগ্রস্ত করতে পারেন না৷

লেখা: বুদ্ধ মুহাম্মদ কৃষ্ণ

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel