এ বিশ্বজগতের মালিক কি ঈশ্বর?
এ বিশ্বজগতের মালিক কি ঈশ্বর? আমি বলছি, না এটি একটি মিথ্যা কথা, এ জগতের মালিক তোমাদের ঈশ্বর নয়, এ জগতে ঈশ্বরের রাজত্ব চলে না৷ এই বিশ্বজগতের মালিক মায়া, এবং এখানে মায়ার রাজত্ব চলছে, এখানে তোমাদের ঈশ্বর নেই। তোমরা মায়ার কাছে এই জগতের রাজত্ব দিয়ে দিয়েছো, তোমরা মায়াকে এই বিশ্বজগতের মালিক বানিয়েছো৷ এটা ঈশ্বরের নয়, তোমরা তোমাদের জগতকে ঈশ্বরের মালিকানাধীন করে দিতে পারোনি, তোমরা ঈশ্বর রাজত্বের জগৎ বানাতে ব্যার্থ হয়েছো।
তোমরা তোমাদের জগৎ থেকে ঈশ্বরকে তাঁড়িয়ে দিয়েছো৷ মায়াকে তোমরা জগতের পরিচালক বানিয়েছো৷ যদি এ জগৎ ঈশ্বরের হতো, তবে জগতে ঈশ্বরের রাজত্ব চলতো, এবং তাতে জগৎ পরম করুণাময় পূর্ণ থাকতো। তোমরা আমাকে প্রশ্ন করতে’ই পারো এই বিশ্বজগৎ কীভাবে ঈশ্বরের নয়? কীভাবে এই বিশ্বজতের রাজত্ব মায়ার হাতে? আমি তোমাদের বলছি, এই বিশ্বজগতের সকল তত্ত্ব বিবরণ সারাংশতে’ই মায়াকে পাবে৷ মায়া তোমাদের পালনকর্তা এটা শুনে তোমরা এখন ভয় পেয়েও না, কারণ এটা তোমাদের’ই জীবন দ্বারার কৌশলগত পছন্দের জন্য মায়া তোমাদের পালনকর্তা হয়েছে।
তোমরা জন্মের পর পর’ই তোমাদের অভিভাবকগণ তোমাদেরকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনেছেন, এক বড় আশা পুষে রেখে’ই তোমাদেরকে গড়ে তুলছেন। তোমরা যখন একটু বুঝতে শুরু করো, তখন তোমাদের কানে দেয়া হয় তাদের পুষে রাখা শত সোনালি স্বপ্নের কথা। এবার তোমরা যৌবনে এসে ঠিক সেই স্বপ্নগুলোর পিছনে ছুটে চলছো, এবং তোমরা এমন ভাবে এই স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলো যে তোমরা ভুলে’ই যাও একদিন তোমাদের জীবনের অবসান ঘটবে, তোমরা ভুলে যাও যে তোমরা একদিন সকল কিছু ত্যাগ করবে, তোমরা স্বপ্নের পিছনে ছুটতে ছুটতে জীবন অবসানের মহা সত্যটি ভুলে যাও, এটাই হচ্ছে মায়ার রাজত্ব এবং এখান থেকে’ই শুরু হয় মায়াকে পালনকর্তা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া।
তোমরা যদি মনে রাখতে তোমাদের একদিন পরাজয় বরন করে নিতে হবে, এবং তোমাদের জীবন একদিন বিরাট ধ্বংসস্তূপ মরণের মুখোমুখি হবে, তা হলে মায়া তোমাদের পালনকর্তা হতো না,এখানে’ই তোমাদের অস্তিত্ব ঈশ্বরময় হয়েও অস্তিত্বহীনের দিকে ধাবিত হচ্ছে৷ মায়ার কাছে তোমরা তোমাদের রাজত্ব দিয়ে ভুলে যাও যে এসব স্বপ্নের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা যার নাম মৃত্যু। বিশ্বজগতে সব কিছুর’ই মৃত্যু রয়েছে, তোমাদেরও সকল স্বপ্ন, সকল অহংকার, সকল প্রকার বিলাসিতা ধনসম্পদের সমাপ্তি ঘটাবেন এই আশ্চর্য অতিথি মৃত্যু, এবং এইটা নিশ্চিত ও অনিবার্য। মোল্লা,পুরোহিত, বুদ্ধ ভিক্ষু, ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, পাপী, সাধু সকলের’ই মৃত্যু হবে।
তবুও তোমাদের জীবনের প্রতি তোমরা প্রচুর আসক্ত, সবার মাঝে’ই রয়েছে বেঁচে থাকার লড়াই, এবং সুখী ও সমৃদ্ধিশালী হওয়ার প্রতিযোগিতা সবার আগে তোমরা’ই করবে, মৃত্যু সকল সময় জগতের উপর প্রভাবশালী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তবুও তোমরা স্বপ্ন দেখো অনন্তকাল ধরে তোমরা বিশ্বজগতে বেঁচে থাকবে। তোমরা নিজেরাও দেখতে পাচ্ছো চোখের সামনে কত সৃষ্টির ধ্বংস হচ্ছে, কত রাজা বিশ্বনেতার উত্থান পতন হচ্ছে, কত মস্তবড় অবিশ্বাস্য জিনিসও ভেঙ্গে খণ্ড খণ্ড হয়ে ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে, তবুও তোমাদের স্বপ্ন দেখা থেমে নেই, কারণ তোমাদের এই বিশ্বজগতের মালিক মায়া, তোমাদের পালনকর্তা মায়া।
তোমরা সবাই চাও জগৎকে সুন্দর করে দেখার জন্য, এবং আমিও তাই চাই জগৎটা সুন্দর হোক। কিন্তু একে সুন্দর করে গড়ে তোলার মতন মানুষ খুব’ই কম। যদি সত্যই জগতকে মায়ার রাজত্ব থেকে মুক্ত করা যেত তা হলে যীশু, কৃষ্ণ, কনফুসিয়াস, মহাবীর, বুদ্ধ, লাওৎসি, মুহাম্মদ, জরথুস্ত্রদের মতন যত সব মহামানবগণ ছিলেন তাঁরা সবাই পারতেন তোমাদের পালনকর্তাকে ঈশ্বরময় গড়ে দিতে। তাঁরা সবাই চেয়েছিলেন তোমাদের বিশ্বজগতের রাজত্ব যেন ঈশ্বরের হয়, কিন্তু সেখানেও তোমরা তাদেরকে’ই বিতাড়িত করেছো, এদের দোষ একটা তাঁরা চেয়েছিলেন যেন মায়া তোমাদের উপর রাজত্ব করতে না পারে৷ কিন্তু তোমরা বরাবরই মায়ার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে নিয়েছো, মায়ার তত্বাবধানে’ই তোমরা জগৎ গড়ে তুলছো।
যীশুর নীতি ঈশ্বরময় জগৎ না সাজিয়ে তোমরা খ্রীষ্ট অনুসারী নাম ধরে নিজেরা সমৃদ্ধিশালী হয়ে অখ্রীষ্টজাতিদের উপর জুলুম নামিয়ে দিয়েছিলে, তোমরা অখ্রীষ্টদের ধন সম্পদ অপহরণ করেছিলে, তাদের উপর জুলুম করে তোমরা বিশ্বজগতের রাজত্ব করেছিলে৷ তোমরা অখ্রীষ্ট দূর্বল মানুষের উপর অত্যাচার করেছিলে৷ অখ্রীষ্টদের উপর ধ্বংস লীলা বসিয়ে তোমার সর্বোচ্চ সমৃদ্ধিশালী হয়েছিলে, যীশু তোমাদের কল্যাণ শিক্ষা দিয়েছিলেন আর তোমরা গ্রহণ করেছিলে দূর্বলদের উপর জুলুম।
অন্যদিকে কৃষ্ণ তোমাদেরকে প্রেম লীলা জগৎ ব্রহ্মার আরাধ্য শিক্ষা দিয়েছিলেন আর তোমরা কি করেছিলে? তোমরা বুদ্ধ অনুসারীদের উপর রোলার চালিয়েছিলে৷ নৃশংস ভাবে বুদ্ধ ভিক্ষুদের উপর অক্রমন করেছিলে৷ বুদ্ধ ভিক্ষুদের অপরাধ? তাঁরা গৌতমকে অনুসরণ করতো। তোমরা গৌতম অনুসারীদের নাস্তিক আখ্যায়িত করে তাদের উপর জুলুম করেছিলে৷ মুহাম্মদ তোমাদেরকে নিয়ে শান্তিময় জগৎ সাজানোর স্বপ্ন দেখতেন, কালেমা নামক সুতার বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন৷ ‘মান আরাফা নাফসাহু’ পদ গেয়েছিলেন, এবং তিনি তোমাদের এ পথের পথ প্রদর্শক হয়েছিলেন৷
কিন্তু তোমরা কি করলে? তোমরা মুহাম্মদের ‘মান আরাফা নাফসাহু’ পদ গ্রহণ না করে মুসলমান পরিচয় দিয়ে যুদ্ধ বিজয়ী হয়ে অমুসলিমদের কাফের মুশরিক বলে তাদের ধন সম্পদ লুট করে গনিমতের মাল হালাল হিসেবে গ্রহণ করেছিলে, অপরের সম্পদ লুট হালাল! তাদের নারী ভোগ করা হালাল! সত্যই তোমাদের কাছে এসব হালাল হতোনা, এবং তোমরা অপরের সম্পদ লুট করতে পারতেনা যদি তোমরা মুহাম্মাদের ‘মান আরাফা নাফসাহু’ পদটি শুরুতে’ই গ্রহণ করতে পারতে৷ তোমাদের পালনকর্তা মায়ার এই বিশ্বজগতে আজীবন’ই বলবানরা দুর্বলদেরকে শোষণ করে এসেছে।
না তোমরা কখনো’ই ঈশ্বরকে জগতের রাজত্ব দাওনি৷ এসব কিছুর মালিক ঈশ্বর এটি মিথ্যা বলছো তোমরা৷ জগতের মালিক যদি ঈশ্বর হতো, জগতের রাজত্ব যদি ঈশ্বরের থাকতো তবে জগতের সব কিছু’ই মঙ্গলময় থাকতো৷ তোমাদের সুখী হওয়ার চাহিদা যত বেড়ে যাচ্ছে তত’ই তোমাদের দুঃখভোগের সম্ভবনা বেড়ে যাচ্ছে। তোমরা বুঝতে চেষ্টা করছোনা যে মায়া তোমাদের ঈশ্বরের বিরোধিতা করেন, এবং এ তোমাদের আপন সত্তার বিরুদ্ধে লেগে আছেন, মায়াকে প্রতিরোধ করতে হলে তোমাদের জীবন দ্বারার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।
একমাত্র স্বার্থহীনতা’ই প্রকৃত মঙ্গল, এবং এটি গড়তে পারলে’ই তোমাদের জগৎ হবে ঈশ্বরের জগৎ। তখন এই জগতে রাজত্ব চলবে একমাত্র ঈশ্বরের, আর তোমরা সকলে’ই হবে প্রকৃত ঈশ্বরময়৷
লেখা: বুদ্ধ মুহাম্মদ কৃষ্ণ