পোশাকের আড়ালে ধর্মের ছদ্মবেশ
ধর্ম এখন আর একমাত্র আধ্যাত্মিক অনুশাসন নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ইন্ডাস্ট্রি। মোল্লা, পুরোহিত, পীররা এখন ধর্মকর্মী, যাঁরা আধ্যাত্মিক কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে ধর্মের ব্যবসা করেন। তাদেরও পোশাক বদলে গেছে—ধর্মের পরিচয়, আবেগের পরিসর থেকে হয়ে উঠেছে পেশাগত লেবাস।
যেমন প্রতিটি পেশার কর্মীদের আলাদা পোশাক থাকে, তেমনি ধর্মকর্মীদেরও নিজস্ব পোশাক থাকে। এই পোশাকই তাদের ধর্মীয় পরিচয়। কিন্তু কেবল পোশাকের মাধ্যমে ধর্ম পরিচয় করানোর প্রচেষ্টা একটি বিশাল ভুল ধারণা। এখন ধর্মে রঙিন সুট, চকচকে গহনা, কিংবা ধর্মীয় লেবাসের অভ্যন্তরে বসবাস করা মানুষও ধর্মের আদর্শ বহন করার দাবিদার।
অন্যদিকে, ধর্মীয় পোশাক পরিধানকারী নারীরা একদিকে সংক্ষিপ্ত পোশাক পরিধান করে আধুনিকতা ও ধর্মের যোগসূত্র খোঁজে, আবার অন্যদিকে তারা পা-ফুলিয়ে চাদর পরে শরীর আবৃত করে কেবল ধর্মের শোভা দ্যাখে। এভাবে তারা ভেবে নেয় যে, প্রকৃত ধর্ম পালন করছে, কিন্তু প্রকৃত ধর্ম হলো মনুষ্যত্ব, যার পোশাকের কোনো প্রয়োজন নেই।
পোশাক কিন্তু ধর্ম নয়, তা শেখ সাদি বহু আগেই বলেছেন। ধর্মের পোশাক নয়, পোশাকের ধর্মই সবচেয়ে বড়। পোশাকের উদ্দেশ্য শুধু শীত, উত্তাপের প্রতিকার নয়, এটি মানুষকে একে অপরের কাছে শ্রদ্ধাশীল, মার্জিত এবং সদাচারী করে তোলে।
এখন যে ধর্মীয় পোশাক রয়েছে, তা মূলত ধর্মীয় পরিচয়ের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে—গণনায়, দৃশ্যপটে। কিন্তু একজন প্রকৃত সাধক, যিনি প্রকৃত ধর্মের পথে চলেন, তিনি কখনোই পোশাককে ধর্মের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেন না। তার চোখে, পোশাকের ধর্ম আছে, কিন্তু ধর্মের পোশাক নেই। তিনি জানেন, আসল ধর্ম কখনো আড়ালে নয়, বরং অন্তরের অন্তস্থল থেকে উৎকীর্ণ হয়ে আসে।
ধর্মকে যেন এক ব্যবসায়িক পণ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে, যেখানে পোশাকের মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাসকে আংশিকভাবে বিক্রি করা হয়। অথচ প্রকৃত ধর্ম হলো মানুষের অন্তরপরিবর্তন, যার কোনো পণ্যের লেবাস বা আলঙ্কারিকতার প্রয়োজন হয় না। ধর্মের পোশাকের গুণাবলী হলো নিঃস্বার্থ সেবা, সত্যের অনুসন্ধান, এবং পরিশুদ্ধ জীবন—যা দৃশ্যমান নয়, মনের গভীরে অনুভব করা হয়।
শেষ কথা—
ধর্মের পোশাক প্রথাগত চিন্তার ফল, যা মানুষের অন্তরের বিশুদ্ধতার প্রতিফলন নয়, বরং বাহ্যিক আড়াল। তাই প্রকৃত ধার্মিকরা কখনোই পোশাকের ধারায় বন্দী হয় না, তারা পোশাকের ধারাকে ছেড়ে অন্তরের সত্যের দিকে যাত্রা শুরু করে।
–ফরহাদ ইবনে রেহান