কাম ও প্রেমের মধ্যে প্রার্থক্য (সূফিতত্ব)।
এশক বা প্রেম কি? কাম ও প্রেমের মধ্যে প্রার্থক্য কি? এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
এশক বা প্রেম শব্দের অর্থ ভালোবাসা, কোন কিছু একান্তভাবে পাওয়ার আকাংখা। প্রচলিত অর্থে প্রেম বলতে নর ও নারীর মধ্যকার গভীর সম্পর্ককে বা পারস্পরিক আকর্ষণকে বুঝায়।
প্রেম ২ভাগে বিভক্ত। যথা –
১/ পার্থিব প্রেম
২/ স্বর্গীয় প্রেম বা সৃষ্টিকর্তাকে পাপয়ার প্রেম।
পার্থিব প্রেম বলতে – মাতা-পিতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও ধন-সম্পদ ইত্যাদি পার্থিব বিষয়ের প্রতি ভালোবাসাকে বুঝায়। পক্ষান্তরে, পার্থিব জগতের লোভ লালসাকে সম্পূর্ণরুপে পরিহার করে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের আকাংখাকে স্বর্গীয় প্রেম বা সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়ার প্রেম বলা হয়। পার্থিব জগতের প্রেম বা ভালোবাসাই মানুষকে প্রভু প্রেম থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। ফলে অনেকে দুনিয়ার লোভ-লালসা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
মানুষ ষড়রিপুর কু-প্রবৃত্তিযুক্ত অবস্থায় কখনো প্রভু প্রেম হাসিল করতে পারে না। কেননা, ষড়রিপুর কু-তাড়না হতে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিশুদ্ধ প্রেমের সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ স্বর্গীয় প্রেম হাসিল করতে হলে, রিপুসমূহ সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ করতে হয়। আর এ জন্য কোন মহামানবের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর নির্দেশিত পথে সাধনা করা একান্ত প্রয়োজন।
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন,
“(হে হাবীব) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করে, তবে আল্লাহও তোমাদের ভালবাসবেন, তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ৩১)।
সাধনার মাধ্যমে স্বর্গীয় প্রেম হাসিল হলে তখন দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ কমে গিয়ে আল্লাহর প্রতি প্রবল আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। এমতাবস্হায় সে আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়ে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে।
সে অবস্থা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরিফে এরশাদ হয়েছেঃ-
“হে প্রশান্ত নফস! তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এসো। এমতাবস্থায় যে, তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট, আমার বান্দাদের মধ্যে শামিল হও, আর আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।” (সূরা আল ফজর, আয়াত নং ২৭ থেকে ৩০)।
“মানুষের মন অবশ্যই মন্দ কর্ম প্রবণ, কিন্তু যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন সে এর অন্তর্ভুক্ত নয়। আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত নং ৫৩)।
আল্লাহ প্রাপ্তির জন্য যে আকাংখা সৃষ্টি হয়, তার নাম প্রেম বা এশক এবং নারী পুরুষের দৈহিক মিলনের যে আকাংখা উহাকে কাম বলে। অন্য কথায় – রিপু মুক্ত আকাংখাকে প্রেম এবং রিপুযুক্ত আকাংখাকে কাম বলে।
পবিত্র কুরআনের বর্ণনার পাশাপাশি তাসাউফের সাধনা দ্বারা আমি যা উপলব্ধি করেছি, তা হলো প্রেম বলতে একমাত্র প্রভুর সান্নিধ্য লাভের আকাংখাকেই বুঝায়। কাম ও প্রেম সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। কেননা, রিপু জীবআত্নার অবিচ্ছেদ্য অংশ। যতক্ষণ রিপু পার্থিব বিষয় লাভের আকাংখায় মগ্ন থাকে, ততক্ষণ উহা ষড়রিপু অর্থাৎ কাম বলে গণ্য হয়। আর যখন এই রিপু পরিশুদ্ধ হয়ে আল্লাহকে পাওয়ার আকাংখায় নিমগ্ন হয়, তখন উহা বিশুদ্ধ প্রেমে পরিণত হয়।
সূত্র: আল্লাহ কোন পথে।
নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।