অন্তরালে (মুক্ত ভাবনা)
কিছু দুঃখের-ও দুঃখ থাকে, কিছু শব্দের ভিতরে শব্দ লুকিয়ে থাকে, কিছু বলার ভিতরে না বলা লুকিয়ে থাকে, একটি অভিনয়ের ভিতর অনেক সত্য লুকিয়ে থাকে, সত্যের-ও সত্য থাকে। কেউ কি দেখতে পাই? আপন পরম সত্য ব্যতীত! সকল কিছুর বিলুপ্তি ঘটে মহাশূন্যে পরিভ্রমণে এ-এক দীর্ঘ পথ..।
আমরা শুধু অভিনয়ে আছি, অভিনয় টুকুন সত্যের রূপ ধরেছে। সকল সত্যের রূপ মহা প্রলয়ে রিক্ত হয়ে আছে।
আমরা সকল অর্জন বিসর্জনে সুক্ষ্ণভাবে চাহিদা লুকিয়ে রাখি, সকল চাহিদার মধ্যে যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকে।
বিশ্বাস সত্যের পথ, আমরা প্রচলিত বিশ্বাসের পথে চাহিদার কাটাঁ বিছিয়ে রেখেছি।
সকল আনুষ্ঠানিকতা চাহিদার নয়, আমরা সত্যিই পরম সত্যকে আনুষ্ঠানিক চর্চার মাধ্যমে আকৃতি দিয়ে ফেলছি।
আমরা সকল উপাসনালয়কে চাহিদা জন্মানোর প্রজনন কেন্দ্রে পরিনত করেছি, প্রার্থনা/সাধনা/শুদ্ধতার নামে চাহিদার বীজ বুনেছি।
সময়কে বেধে রাখা যায়না দুঃখকে কেন আটকে রাখি! দুঃখ প্রকৃত পক্ষে দুঃখ নয় অন্ধত্বের সীমাবদ্ধতা। যখন ধৈর্য্যকে শক্তি মনে করা হয় তখন দুঃখের জায়গা হয়না। সকল কিছুতেই বেশ নেশা, এই নেশা ওয়াইর্স করুনি কিংবা রুমির নেশা নয়, নয় নির্জাতনে শিকার হয়ে অমরত্ব সৈনিকের। এই নেশা পরিশুদ্ধ শুদ্ধতার পথের পথিকের, নফছ তথা বিষয়-আশয় যুদ্ধের নেশা।
মাওলানা রুমি বলেন “আমাদের কাছে প্রচুর মদ রয়েছে কিন্তু রাখার কোন কাপ নেই” সত্যিই,আমাদের মন খন্ডে খন্ডে বিভক্ত। পথ পাওয়ার জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ ওয়াইনের (নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগের)। ঢেলে রাখার মতো পাত্রে পরিণত হতে পারছিনা। অর্থাৎ পাত্রটি শুন্য বা রিক্ত হয়নি। পাত্রে প্রচুর চাহিদার আবর্জনা জমে আছে।
আজও কি জানা হয়েছে কে আমি? কোথা থেকে এসেছি? কোথায় যাব? কি নিয়ে এসেছি? কি নিয়ে যাব? কি নেওয়ার আছে? এই বাড়ী-ঘর, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি কি সম্পর্ক আমার সাথে এতো কিছুর। উত্তর কি পেয়েছি?
আমরা পুরপুরি অন্ধে পরিণত হয়েছি, অন্ধ কি কখনো আলোর নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারে?
নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতা যন্ত্রণার অংশ, আমরা কর্ম করি টিকে থাকতে কর্ম শেষে রাতে গভীর ঘুমের অপেক্ষায়, গভীর ঘুম যন্ত্রণাকে ভুলিয়ে সত্যের বার্তা বহন করছে।
সত্যের কোন অংশীদার নেই, আমরা হাসতে থাকি, গাইতে থাকি, বলতে থাকি, শুনতে থাকি সব কিছুতেই সত্য লুকিয়ে, তবু সত্য স্বতন্ত্র।
আমরা বীজ হয়ে আছি আমাদের পচার স্বভাব নেই, বীজ অংকুরিত হয়না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না মাটির আদ্রতায় পচে খোলস বেধ করতে পারে।
সকল সৃষ্ট স্রষ্টার স্বতন্ত্রতায় বিলীন হয়ে স্রষ্টার সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। চাহিদা ও স্বতন্ত্রতা সত্য যেন এক দীর্ঘ মহাপ্রলয়। নিত্য নতুন রূপে রূপান্তরিত হচ্ছে। সকল চাওয়া জমাট বেঁধেছে ছোট এক তরীর ভিতর।
মহাকালের মহাকাব্যে অনন্তে বিলীন থাকিতে-ও কি এমনটা ঘটেছিল? চাহিদার তিক্ততা! ছোট্ট একটি ভ্রমণে আস্থ পৃথিবী গিলে খাওয়ার নেশে পেয়েছে। এ-এক চাহিদার নেশা। আবার যখন অনন্তে পারি দিব মহাকালের মহাশূন্যে সেথা-ও কি থাকিবে তাহা? গ্রন্থে-তো তাহার গন্ধ পাওয়া যায়!
-সাদিকুল ইসলাম