বায়েজিদ বোস্তামী ও এক কুকুরের ঘটনা
কুকুরের থেকে শিক্ষা অর্জন করলো বায়েজিদ বোস্তামী (রঃ)
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) একদিন রাস্তা দিয়ে হাটছিলেন। রাস্তার দুই পাশে ছিলো কাদা-পানিতে ভরা গম ক্ষেত৷ ক্ষেতের আইল পথে তিনি যাচ্ছিলেন এমন সময় হঠাৎ সামনে থেকে একটি কুকুর আসতে দেখলেন৷ কুকুরকে দেখে তিনি কুকুরের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন৷ রাস্তাটি ছিল খুব চিকন। কুকুরের গায়ে ছোঁয়া লেগে নাপাক হওয়ার ভয়ে হযরত বায়েজীদ (রঃ) কাপড়ের প্রান্তভাগ গুছিয়ে নিলেন। কুকুর তার ভাবের ভাষায় বললো, আপনি কাদায় নামছেন না, আর আমার কাদায় নামার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন?
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) বললেন, তোমার তো নামাজ পড়তে হয় না, কাদায় নাপাকি থাকলে তোমার কোনো ক্ষতিও হবে না৷ আর আমার জন্যে এই কাদা পানি সন্দেহযুক্ত৷ পানিতে নামলে আমার নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে৷’৷ তারপর কুকুর বললো, তাহলে আমার গায়ে ছোঁয়া লেগে নাপাক হওয়ার ভয়ে কাপড় গুটালেন কেন? আলামত দেখে তো মনে হয়, আপনি আমাকে তুচ্ছ আর নিজেকে বড় মনে করছেন৷ তাহলে মনে রাখবেন! আমার বাহিরেই শুধু নাপাক আর আপনার ভিতরে অহংকারের নাপাক স্পর্শ করেছে৷
আপনি নিজেকে বড় মনে করছেন, তাই কাদায় নামছেন না ৷ আর আমার দেহের নাপাকির কথা বলছেন?
তাহলে মনে রাখবেন, আমার দেহের নাপাকী সাতবার পানি প্রবাহিত করলে পাক হয়ে যাবে৷ আর আপনার ভিতরের অহংকারের নাপাকী সাত সমুদ্রের পানি দিয়ে ধৌত করলেও পাক হবে না৷ এই কথা শুনে হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। বললেন তোমাকে তুচ্ছ মনে করছি না আমরা দুজনই একই আল্লাহর সৃষ্টি৷ এখন তোমার বাহির নাপাক আর আমার ভিতর নাপাক হয়েছে। এসো তাহলে আমরা বন্ধু হই।
কুকুর বললো, আপনার সাথে আমার বন্ধুত্ব কিসের? আপনি যেখানেই যান, সেখানেই আপনাকে সম্মান করা হয়। আর আমি যেখানেই যাই, সেখানেই আমাকে দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এই কথা শুনে তিনি আবার কাঁদলেন৷ বললেন, ‘হায় রে! যে ব্যক্তি এখনও কুকুরের বন্ধু হওয়ার যোগ্য হয়নি, সে ব্যক্তি আবার আল্লাহর বন্ধু হওয়ার যোগ্য হবে কবে?
আরেক বার হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রাঃ) ঈদের দিন গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে উত্তম পোষাক পরেছিলেন৷ বাড়ি থেকে বাহির হয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি ভুল করে তার বাড়ির উপর থেকে ঝুড়ি ভর্তি ছাই – মাটি ও আবর্জনা নিক্ষেপ করলো৷ এতে হযরতের সমস্ত শরীর ও কাপড়-চোপড় ময়লায় ভরে গেল৷
কিন্তু তাঁর চেহারা সামান্য কুঞ্চিতও হলো না৷ কাহারো বিরুদ্ধে অভিযোগও উথিত হলো না৷ শুধু নিজেকে সম্বোধন করে বললেন, হে মন! তুমি তো জাহান্নামের যোগ্য,এখন যদি এই ছাই মাটির দ্বারা জাহান্নামের সাথে শান্তি চুক্তি হয়ে যায়, তবে সেটা তো তোমারই সৌভাগ্য৷
একেই বলে পবিত্র অন্তর৷ যত অভিযোগ সব নিজের উপর অন্যের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই৷ আমরা এই শান্তির সন্ধান পাইনি৷
সূত্র: (খুতুবাতে হাকীমুল উম্মত ৮ম খন্ড- পৃষ্ঠা নং-৬১৯)।