কামালিয়াত লাভের সঠিক উপায়

কামালিয়াত লাভের সঠিক উপায়

পুস্তকভিত্তিক শিক্ষা ও ব্যবহারিক কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালনের মাধ্যমে ডিগ্রিধারী হাওয়া যায়, এবং সে হিসেবে আলেম বলে সমাজে এক ধরনের পরিচিত পাওয়া যায় বটে, কিন্তু মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-এর যথাযথ পরিচয় এবং তাঁদের ভালোবাসা লাভের বিদ্যা সম্পুর্ন স্বতন্ত্র।

মাদ্রাসা কিম্বা অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যতই ডিগ্রি লাভ করা হোক না কেন, মারেফাতের এ বিদ্যা হাসিলের জন্য মানুষকে কামেল অলীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজের আত্নাকে পরিশুদ্ধ করতে হয়।

মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন- “তিনিই রাহমান তথা পরম দয়ালু আল্লাহ, তাঁর সমন্ধে যে অবগত আছে, তাঁকে জিজ্ঞেস করে দেখো।” (সূরা-আল ফুরকান-২৫ : আয়াত-৫৯)

সাধনার মাধ্যমে নিজের অন্তরে আল্লাহর সুপ্ত নূর জাগ্রত করে, তাঁর পরিচয় লাভ করত সাধক যখন আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী হন, এবং এবং কেবল আল্লাহরই নির্দেশে নিজেকে পরিচালিত করতে সক্ষম হন, তখন তিনি কামেলে পরিণত হন।

সে অবস্থায় তিনি আল্লাহর খলীফা হাওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেন। এজন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ডিগ্রি লাভ কর অব্যশক নয়। বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক এ সকল ডিগ্রি মানুষের মনে অহংকারের জন্ম দেয়, এবং সাধনা থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। ফলে এটা আত্মার উন্নতির পরিপন্থী হয়। কামালিয়াতের পূর্বশর্ত-বিনয়, ভক্তি ও ভালোবাসা, এবং এর সাথে কঠোর সাধনা।

বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত রাসুলে আকরাম (সাঃ) পুস্তকের বিদ্যায় বিদ্বান ছিলেন না, অথচ তিনি জবালে নূরের হেরা গুহায় একাধারে পনের বছর গভীর ধ্যান-সাধনার মাধ্যমে আল্লার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করেন। ফলে তিনি যে ঐশী জ্ঞানের অধিকারী হন, জগতের কোনো বিদ্যাপীঠ থেকে বিন্দুমাত্রও লাভ করা সম্ভব নয়। আর হযরত রাসুল (সাঃ) যে নিরক্ষর তথা কালির অক্ষরে লিপিবদ্ধ জ্ঞান থেকে পবিত্র ছিলেন, এবং নূরের আলোতে আলোকিত ছিলেন, বিষয়টি সুমহান আল্লাহই বলে দিয়েছেন।

এরশাদ হচ্ছ- “তিনিই নিরক্ষরদের মধ্যে তাদের একজনকে রাসুল করে প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনান, এবং তাদের পবিত্র করেন, আর তাদের কে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা ইতিপূর্বে ছিলো ঘোর পথভ্রষ্ট নিপতিত।” (সূরা-আল জুমু’আ-৬২: আয়াত-২)

যে কারণে মোরাকাবা বা গভীর ধ্যান-সাধনার গুরুত্ব অপরিসীম। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন- “এক ঘন্টা ধ্যান করা ষাট বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।” (তাফসীরে দুররে মানছুর -৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা -৪১০)

অনুরূপভাবে অন্যত্র হাদীস শরীফ বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এরশাদ করেন- “এক ঘন্টা মোরকাবা করা ষাট বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। ” (যাদুত তাকওয়া-২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১২৫ এবং আল-কাওলুল জামিল ও ফয়সালায়ে হাফতে মাসআলা,পৃষ্ঠা -৩৪)

পূর্ববর্তী নবীগণ ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ লাভ করেছেন এবং ঐশী জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন। অনুরূপভাবে কামালিয়াত হাসিল করার জন্য ঐশী জ্ঞানসম্পন্ন কোন মহামানবের নির্দেশে সাধনা করে, এ বিদ্যা আপন অন্তরে ধারণ করতে হয়। কালির অক্ষরে লিপিবদ্ধ বই পুস্তক থেকে ক্বালবের মধ্যে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে বিদ্যা অর্জনের কোন সুযোগ নেই

এছাড়া একজন মানুষের পুঁথিগত বিদ্যা অাপাত দৃষ্টিতে যতই থাকুক না কেন, এটি খুবই সীমিত,এবং আত্মঅহমিকা বৃদ্ধি করতে সহায়ক,এবং তা আল্লাহর প্রতি প্রেম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

এজন্য হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “বাহ্যিক জ্ঞান আল্লাহ্কে পাওয়ার পথে একটি বড় বাধাস্বরূপ। ”

মোটকথা কামালিয়াত অর্জনের জন্য ধর্মীশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি লাভ করা আবশ্যক নয়। তবে যারা ধর্মের উপর ডিগ্রি লাভ করেন, তাদের পক্ষে ধর্মে প্রবিষ্ট ভুল- ভ্রান্তি চিহ্নিত করা সহজ হয়। আর তারা যদু কামেল অলী- আল্লাহর সান্নিধ্যে এসে আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণের দীক্ষা নিয়ে আল্লাহ্ ও রাসুল(সাঃ) – কে লাভ করার উদ্দেশ্যে সাধনায় নিবিষ্ট হন,তবে তাদের পক্ষে আল্লাহ্ ও রাসূল(সাঃ)- এর পরিচয় লাভ করার সম্ভাবনা থাকে। কারো কারো মত, পীর হতে হলে কমপক্ষে তাফসীরে জালালাইন পড়তে ও বুঝতে হবে। আসলে এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। প্রকৃতপক্ষে নবুয়ত ও বেলায়েত আল্লাহর বিশেষ রহমত,যা কেবল তিনিই নিজ অনুগ্রহে দান করেন।

আল্লাহ্ বলেন- “আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা নিজ রহমতের জন্য বিশেষরূপে মনোনীত করেন, এবং আল্লাহ্ মহাঅনুগ্রহশীল।” (সূরা- আল বাকারাহ-২ঃ আয়াত-১০৫)

উল্লেখ্য, হযরত রাসুল (সাঃ) কোন তাফসীর পড়ে নবী হননি। কামালিয়াতের জন্য তাফসীর পড়া আবশ্যক নয়, কামেল অলী- আল্লাহর সাহচর্যে গিয়ে গভীর সাধনা করে কামলিয়াত অর্জন করা বাধ্যতামূলক।

– মুক্তি কোন পথে

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel