হোমপেজ ইলমে মারেফত নিষ্কাম তত্ত্ব – পর্ব ১

নিষ্কাম তত্ত্ব – পর্ব ১

1793

নিষ্কাম তত্ত্ব – পর্ব ১

নিষ্কাম তত্ত্ব তৃতীয় পর্বের (১ম পর্ব):

আত্মারবিজ্ঞানী, সাধক কবি, শাহজাহান শাহ আঃ এর স্বরচিত এলহামি গীতিকাব্য সংযমের সংবিধান কিতাব। নিষ্কাম তত্ত্ব কবিতাটি সংযমের সংবিধান কিতাবের অংশবিশেষ। খুদি তত্ত্বে পরমসত্তার, গুপ্তভেদের স্বরূপ,  কীভাবে প্রস্ফুটিত করা যায়, তা কোরানিক দর্শন আলোকে নিষ্কাম তত্ত্বে অন্তর্নিহিত অভিনবর স্বরূপটির তাৎপর্য কেমন, তা মুক্তেসার আলোচনা করা প্রচেষ্টা করবো।

আত্মারবিজ্ঞানী সাধক কবি দেখিছেন যে, অলিয়্যাম মুর্শিদের চরণাশ্রয়ে থেকে মুর্শিদের ইসলাহের মাধ্যমে কীভাবে সংযমী হওয়া যায়। এবং কী রূপে আল্লাহর নিত্যসঙ্গী সবরকারী হওয়া যায়। কেমন কেরে সৃষ্টির শ্রেষ্ট ইনসানুল কামালিয়াত অর্জন করা যায়, অর্থাৎ সৃষ্টির উপর আশরাফিত অর্জন করা যায়, তার স্বরূপ দর্শন প্রকাশ করেছেন। মাসুম জম্ম ব্যতীত প্রত্যেক জীব স্বভাবের মানুষ জীনগ্রস্থ। প্রতিনিতই এই জীব স্বভাবের মানুষ প্রকৃতির আকর্ষণ স্বরূপ রিপু নামক প্রস্তরাঘাতে জড়জড়িত। এই আঘাত প্রাপ্ত মানুষদের কোরানিক দর্শন জালেম বলে অভিহিত করেছেন। যাদের জীবন জুলুমের উপর দাড়িয়ে রয়েছে, তারাই জালেম। তারা আপন আপন কামনা – বাসনা, খেয়াল- খুশির উপর প্রতিষ্ঠি (সূরা ফুরকান২৫ঃ৪৩, সূরা জাসিয়া ৪৫:২৩)।

এই জামেলরা জাহান্নামে যাবে না বরং তারা বর্তমানে জাহান্নামে আছেন। অলিয়্যাম মুর্শিদের রহমতে নফস উপর রিপুনামক খান্নাসের মায়ার সাগর অতিক্রম করে ইখলাসপ্রাপ্ত হয়ে চীর শান্তির আবাস জান্নাতে অবস্থান করেন। অচিনদেশ, মুক্তির শহর, জান্নাতে প্রবেশ করার একমাত্র বাঁধা হলো কামনহর তথা মায়ার সাগর। জান্নাতে কামের মোহ থাকে না, আর কামে জান্নাত থাকে না। যেখানে কামের আকর্ষণ বন্ধ হয়, সেখান থেকেই জান্নাতের দ্বার খোলে। পরমসত্তার সহিত জীবসত্তার মিলেনর পরীক্ষা হলো কামনহর। এই পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদেরকে কোরানিক দর্শন ইন্দ্রজিৎ তথা মুমিন তথা অলিয়্যাম মুর্শিদ তথা সংযমী তথা নিষ্কামিক বলে অভিহিত করেছেন। (ওয়া সাইয়েদান, ওয়া হাসুরান)।

তাঁরা সবাই আল্লাহর রহমত তথা প্রেমসাগরে নিরাপদ আশ্রয় রয়েছেন । তাই কোরানিক দর্শন জানান দিচ্ছে ” যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং তাহাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করে নাই, নিরাপত্তা তাহাদেরই জন্য এবং তাহারাই সৎপথ প্রাপ্ত। (সূরা আন’আম ৬:৮২)।

কিন্তু কামনহর অতি জটিল, পিচ্ছিল ও কন্টকময়। কাম ত্যাগের পথ আর বিষপান একই কষ্টের সাথে তুলনা করে যায়। তাই সাধক কবি বলেন ” আমি জেনে বিষ করিলাম পান “। এই বিষ তো আর হেমলক বিষ নয় , কাম বিষ। যা ইচ্ছা করলেই পান করা যায় না। এই কামনহরের বাঁকে বাঁকে পাতা থাকে ভয়ংকর কামিনীর ফাঁদ। কামিনীরা তাদের রূপের মায়া ও ছলাকলায় ভুলিয়ে ডুবিয়ে রাখে কামনহরে। তাই সাধক কবি বলেন ” সাতরিয়ে কুল পাবি না”। যাঁরা অলিয়্যাম মুর্শিদের কাছ থেকে কামনহরে সাঁতার কাটার কৌশলরূপ্ত না করে, আপন নফসের খেয়াল খুশিমত সাঁতার কাঁটার জন্য ওপারে যেতে নামে, তাদেরকে একা পেয়ে মায়াবিনী ছলাময়ী কামীনীরা নারারূপে সাধককে আক্রমণ করে। তাই কোরানিক দর্শন সর্তকবানী জানান দিচ্ছে “আপনি বলুন, আমি তো তোমাদেরকে শুধু একটি উপদেশ দিতেছি, আর তাহা হইতেছে এই যে, তোমরা আল্লাহর জন্য দাঁড়াও (ধ্যানযোগে তথা সালাতে) প্রথমে জোড়ায় জোড়ায় (দুইজন করিয়া) এবং তাহার পর একা একা। তোমরা ফারাক করিয়া দেখ তোমাদের সাহেব জিনগ্রস্তদের মধ্যে নহেন। নিশ্চয়ই তিনি তো সতর্ককারী কঠোর শাস্তি সম্পর্কে” (সূরা সাবা ৩৪:৪৬)।

উপারে যাওয়ার একমাত্র সম্পদ (সম্পত্তি নয়) হল সাধকের আদ্যরস তথা নুৎফা তথা সিমেন তথা বীর্য। যা সাধক মায়াবিনী কামীনীদের ফাঁদে পড়ে জ্ঞান – বিবেক শূন্য করে খরস্রোতা সাগরের লোনা পানি পান করে। তাই সাধক কবি বলেন “ব্যাঙ সাপ খায় যেখানে, হুসজ্ঞান নাই সেখানে। কামে প্রেমে একই ভান্ড ঠিক থাকা যায় না বিষণ কষ্ট। কাকে মরিচ খাইল, ব্যাঙের গলায় ফাঁসি লাগলো।”

তাই কোরানিক দর্শন জানান দিচ্ছে “যাক্কা সাজারা” নিষিদ্ধ বৃক্ষের স্বাদ গ্রহণ কর না। ফল ভোগ নয়।  কোরানিক দর্শন সতর্ক করে বলতেছেন “এবং নিশ্চয়ই তোমরা জানিয়াছ প্রথমবার সৃষ্টি(সম্পর্কে), সুতরাং কেন তোমরা ধ্যান কর না?” (৫৬ঃ৬২)।

“ওয়া লাকাদ আলিমতুমুন নাশয়াতাল উলা ফালাওলা তাজাক্কারুন” অজ্ঞান, মূর্খ সাধক কামীনীর কামের ফাঁদে পা দিয়ে উপার যাওয়ার সমম্বল আদ্যরস তথা জীবন প্রদীপ তথা বীর্য কামীনী শোষণ করে, সাধককে পুঁজি শূন্য তথা আমানত শূন্য ফতুর করে অসীম সাগরে ছেড়ে দেয়। সাগরে হাইল ছাড়া নৌকার যে অবস্থা হয় তদ্রূপ বীর্যহীন সাধকের অবস্থা। দিকভ্রান্ত পথিকের মতো ঘুরতে ঘুরতে উপার যাবার আগেই সাগরে ডুবে ভবলীলা সাঙ্গ হয়। কিন্তু যারা অলিয়্যাম মুর্শিদের দীক্ষায় দীক্ষিত তাদেরকে কামনহরে কামীনীরা কামের ফাঁদে আটকাতে পারে না। কারণ তাঁরা মুর্শিদের প্রেমে নিমজ্জিত। তাই কামীনীরা সাধককে কামে প্রলুপ্ত করতে পারে না। কারণ তারা সাধকের মনকে মুর্শিদের নিরিখ, বর্জক ও তাসাব্বুর থেকে টলাতে পারে না।যার কারনে কামীনীরা সাধককের কাছে পরাজয় বরণ করে, এবং দাসত্ব গ্রহণ করে সাধককে মুক্তির দেশে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

সুতরাং জাহান্নাম নামক দুনিয়া (পৃথিবী নয়) পাড়ি দিতে হবে। (পৃথিবী আল্লর দ্বীনে অবস্থান করে আর দুনিয়া মানুষের অন্তরে অবস্থান করে)। এবং আখিরাত তথা জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য একজন অলিয়্যাম মুরশিদের দাসত্ব গ্রহণ করা আবশ্যক। কোরানিক দর্শন জানান দেয় একটিমাত্র ফর্মূলা ইহা কোরান গবেষকদের অভিতমত, সেটি হলো সূরা নাসের একটি আয়াত “মিন শাররিল ওয়াস ওয়া সিল খান্নাস” অর্থাৎ খান্নাসের কুমন্ত্রণা হতে তোমরা মুক্তি নাও। শয়তানের চাররূপের মধ্যে একটি বিশেষরূপ হল খান্নাস।

এই খান্নাসের বহুরূপ যেমন: কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা ও অহংকার। এই ষড়রিপু নামক অস্ত্র দিয়ে জীন আর ইনসানের মনে কুমন্ত্রণা দেয় (আদমকে নয়)। এই ছয়টি শক্তিকেই বলা হয় রিপুশক্তি। এই ষড়রিপুর বন্ধন থেকে মুক্তির জন্যই যাহেরী বাতেনি সকল ইবাদতের প্রায়োগিক আয়োজন। ইবাদতের মূখ্য উদ্দেশ্য হল খান্নাস নামক শয়তানটি মুসলমান বানিয়ে ফেলা। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে (আদমের মধ্যে নয়) একটি করে শয়তান দেওয়া হয়েছে। অতএব শয়তানকে সাধনার মারফত মুসলমান বানিয়ে ফেলার মহানবির আদেশ। আপন নফসকে খান্নাস মুক্ত করাই ধর্মের একমাত্র উপদেশ। (কালান্দার জাহাঙ্গীর)

নিম্নে নিষ্কাম তত্ত্ব কবিতাটি ব্যাখ্যাকারে তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি:-
“হাইল ধর জ্ঞান, শক্ত করে –
ধনী মানি মরছে ডুবে,
দেখ না চেয়ে কামসাগরে।”

তাভীল তথা ব্যাখ্যা:
চীরকুমার বেখুদী, পরমজ্ঞানী সাধক কবি, শাহজাহান শাহ আ: বুঝাতে যাচ্ছে যে, কামসাগর পাড়ি দিতে হলে জ্ঞানের বৈঠা যাতে শক্ত করে সাধককে ধরে রাখার উপদেশ দিয়েছেন। মানব তনকে রূপকথার রূপকাষ্ঠের নৌকা বলা হয়। এই দেহনৌকা কাম সাগরে পরিভ্রমণ করার জন্য, সাধক কবি জ্ঞানের হাইল শক্তভাবে ধরে থাকতে উপদেশ দিয়েছেন। যাতে করে দেহনৌকা কামসাগরে ডুবে না যায়। সাউন্ডগডে মন, জ্ঞান ও বিবেক এই তিনটি শক্তির উপাদান থাকে। সাউন্ডগড হলো আদ্যশক্তির আধার। যে শক্তি সাধককে নির্বিকল্প সমাধিতে নিয়ে যায়। সাউন্ডগডের তিনটি উপাদানের মধ্যে মানব মন অতি চঞ্চল, অস্থির, বিষয় মোহে আবদ্ধ থাকতে চায় (সূরা আম্বিয়া ২১:৩৭, সূরা মারিজ৭০:১৯)।

মন যাতে কামীনী কাঞ্চনের ফাঁদে না আটকায় মনকে নিয়ন্ত্রণকারী জ্ঞানকে শক্ত করে ধরে রাখতে বলেছেন।সাধকের জন্য অলিয়্যাম মর্শিদই হল জ্ঞানের হাইল। কামিল মুর্শিদকে জ্ঞানের হাইল ধরে যারা দেহনৌকা ক্রিয়াশীল করেন, সাগরের বাঁকে বাঁকে ওঁৎ পাতা কামীনীরা কিছুই করতে পারবে না। যাদের মুর্শিদ রূপ জ্ঞানের হাইল নাই, তারা যত প্রভাবশালী, বিত্ত ভৈরবের অধিপতিই হোক না কেন, যত ডক্টরেট ও ডিলিট ডিগ্রিধারী নরমন্ডধারী গ্লোল মেডেল হোক না কেন, তাদের দেহনৌকা সন্দেহাতীত ভাবে কামনহরে তলিয়ে যাবে।

“সে পারের আশা করে,
কত নাইয়া নৌকা ছাড়ে-
কাম বাতাসে পাইলে পরে,
দেয় রে নৌকার হাল ছেড়ে।”

ব্যাখ্যা:
সাধকরা কামনহর অতিক্রম করে, প্রেমসাগরে নিমজ্জিত হয়। আপন সত্তার অভ্যর্ন্তরে পরমসত্তা সুপ্ত অবস্থায় মাখনরূপে লুকিয়ে রয়েছে। এই পরমসত্তার স্বরূপ দর্শন করার জন্য সাধকসত্তা আপন সালাতে বিনয়ী ও বিনম্র থাকে এবং সালাত হিফাজত করেন। যে সত্তা হতে ষোড়আনা আমানত নিয়ে এসেছে, ঐ সত্তাতেই ভেজালমুক্ত হয়ে কর্জে হাসানা দিয়ে ফিরে যাওয়াই প্রত্যেক সাধকের একমাত্র লক্ষ্য। সাধক কবি বলেন “সে পারের আশা করে” বলতে বুঝায় এপার আর সেপার। এপার জীব জগৎ দুনিয়া, ওপার পরম জগৎ আখিরাত। মাঝখানটা পরীক্ষার ক্ষেত্র। কাম নহর অতিক্রম করে প্রেমসাগরে মজ্জতে হয়। ইহা ব্যতীত অন্য কোনো পন্থা নাই। (অবশ্য মাদারজাত অলিদের কথা ভিন্ন)।

কামিল মুর্শিদের হাইল না ধরে কেউ যদি সেপারের আশা করে, কামনহরে দেহ নৌকা নিয়ে সাঁতার কাটে, তাহলে কামাকর্ষণ কামীনীদের ফাঁদে পড়ে দেহনৌকার সম্বল ছেড়ে দেয়।

“নাই সে নদীর কূল কিনারা,
কত মানুষ গেছে মারা-
মাঝি- মাল্লা ছিল যারা,
আইল না আর কেউ ফিরে।”

ব্যাখ্যা:
কামনহর অসীম। যার কোনো থৈই নাই, তেমনিভাবে হুতামা এবং হাবিয়া নামক নরকেরও কোনো তলা নাই। কালান্দার জাহাঙ্গীর এর ভাষ্য হলো “যৌনবিশেজ্ঞদের অভিমত চরম উত্তেজনার সময় মিলনের আনন্দে দম্পতি বাক্য হারিয়ে যায়, এবং একটি বাক্যও ঐ মুহূর্তে শুদ্ধরূপে উচ্চারণ করতে পারে না। আবার শাহ আবদুল লতিফ ভিটাই এর ভাষ্য হলো “পরমআত্মা জাগরণে কথা থাকে না, যৌনমিলনের চরম মূহুর্তেও কথা থাকে না।”

অনেক কামদাস, কামাতু ও বক ধার্মিক আছে যারা কোরান – সুন্নাহ এবং মহাপুরুষদের বাণীকে অবজ্ঞা করে, শাস্ত্রীয়জ্ঞানের পন্ডিত হয়ে কেতাবের ফাঁকা বুলি আওরান। মাথার জ্ঞানী, কলংক মার্কা বিদ্বান, কাঠমোল্লা, পান্ডা- পুরোহিত ও ধর্মযাজক, তাদের অনুসারীরা কামনহরে দেহনৌকা ছাড়ার পর ধর্মযাজক মাঝি ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গারা কাম নহরে তলিয়ে যাচ্ছে না ফেরার দেশে।

“মদনগঞ্জের বাঁকে গেলে পরে,
কত মুনি ঋষীর মন যায় রে টলে;
লাই খেলাইতে নামে জলে,
নৌকা যায় রে অতল তলে।। ”

ব্যাখ্যা:
অনেক লেবাসী সাধক, যোগী, মুসল্লি, পীর ও ফকির সাধনায় সিদ্ধ না হয়ে কামের তাড়নায় ছল করে মদনগঞ্জ নামক বাঁকার ঘাট তথা তিনইঞ্চি নদীতে নামেন লাই খেলাতে। কামিনী আর বাঘীনী স্বরূপ কুমিরের ফাঁদে আটকা পড়ে। যার কারণে লেবাসীদের বীর্যশক্তি শোষণ করে সাধকের দেহ নৌকা ছিদ্র তথা যাজরা করে ফেলে। যার কারণে দেহ নৌকা দিকভ্রান্ত হয়ে যায়।

তাই সাধক কবি উপদেশ দিচ্ছে- “নফস রোজা রেখে যেন সাধক নারী সঙ্গ করে, সাধক পূর্ণসংযমী না হয়ে যেন সাধক বিয়ে না করে। আপন নফস থেকে অপবিত্র খান্নাস ত্যাগ না করে যেন বিয়ে করে, আমানু যেন মুমিন হয়ে বিয়ে করে।”

কোরানিক দর্শন মুমিনকেই সফলকাম বলেছেন এবং তাকেই আপন স্ত্রী ব্যতীত অগণিত প্রেমিকা তথা ডানহাতের অধিবাসী দেওয়া হয়েছে। কোনো আমানুকে এই অনুমোদন কোরান দেন নাই।

“ত্রিবেনীর বাঁকে গিয়া,
দিক হারাইল কত নাইয়া –
ভিরল না আর ওপার গিয়া,
ডুবল মন কাম সাগরে।।”

ব্যাখ্যা:
মস্তিষ্ক হল ত্রিবেনীর ঘাট।যার অবস্থান দ্বিদল পদ্মে।মানুষের চোখ আর দৃষ্টিভঙ্গি হলো প্রধান যৌনক্রিয়ারস্থল।যার অবস্থান মানব মস্তিষ্ক। মন, জ্ঞান ও বিবেক তিনটি দ্বার রয়েছে মস্তিষ্কে। জ্ঞান বিবেক জাগ্রত না করে, সাধুসঙ্গ না করে, মনচোরার পরামর্শে কামীনীর সঙ্গে গিয়ে অনেক দেহনৌকা ডুবলো কাম সাগরে। সে ওপার গিয়ে ভিরলো না, কারণ সে তার দেহের শক্তি রত্মহারিয়ে ফেলেছে, সে আপন রবের আদেশ অমান্য করে বিশ্বাসের ধন আমানত খেয়ে দেনা হয়েছে।

“রতি রনে গেলে পরে,
কয়জনে ধন রাখতে পারে,
হারানো ধন পূর্ণ হয় না,
যৌনশক্তি ঝড়ে পরে।”

ব্যাখ্যা:
মানবদেহের একমাত্র সম্বল যৌনশক্তি। যৌবনের সূর্য নিবে গেলে অথবা যৌনশক্তির পতন হলে মানুষকে সহজেই রোগজীবাণু ও সংক্রমক ভাইরাসে আক্রমণ করে।মানুষকে বার্ধক্যে আক্রমণ করে ফেলে। ধৈর্য শক্তি কমে যায়, ব্রেইনশক্তি তথা সৃম্মিশক্তি হ্রাস পায়, মন স্থির থাকতে চায় না, মন অস্থির হয়ে যায়, কর্মে উদাসীন হয়ে যায়, শারীরিক ও মানসিক অবসাদগ্রস্তা, ধর্মে কর্মে মন বসে না, মুর্শিদের ধ্যান করতে মন চায় না, হতাশা আর অস্থিরতা মধ্যে ভোগান্তি। নানান অপদ্রব্য ও মাদক সেবন করে। অতি অল্পসংখ্যকই যৌবনসূর্য ধরে রাখতে পারে। যারা দেহরস নিজ দেহে রেখে সিদ্ধ হয়েছেন তাঁরাই মহামানব। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মধ্যবর্তী সালাত হেফাজত করতে বলেছেন।

চলবে…

নিবেদক: আর এফ রাসেল আহমেদ

নিষ্কাম তত্ত্ব (সবগুলো পর্ব)