কোন প্রেমে হয় গুরু ভক্তি?

কোন প্রেমে হয় গুরু ভক্তি?

(গুরু) রঘুদেবঃ বলতো হরিদাস! কোন প্রেমে হয় গুরু ভক্তি? কোন প্রেমে পূজিলে গুরুরে সেই ভক্ত পায় চিরমুক্তি?

(ভক্ত) হরিদাসঃ প্রভু! সখ্য প্রেমে হয় গুরু ভক্তি সখ্য প্রেমেই ভক্তি করে ভক্ত পায় চিরমুক্তি।

(গুরু) রঘুদেবঃ এই প্রেম ত কিছুই নয়রে হরিদাস কতজনের মাঝেই ত বন্ধুত্ব হয়, এক সখা অন্য সখার সাথে কত মিলে মিশে ভালবাসায় রয়।

(ভক্ত) হরিদাসঃ তাহলে প্রভু শান্ত প্রেমে শ্রী গুরুর পূজা হয়, সন্তান কত ভালবাসিয়া পিতা-মাতার যত্ন লয়।

(গুরু) রঘুদেবঃ এহ বারযো আগে কহ এপ্রেমের মাঝেও থাকে মোহ।

(ভক্ত) হরিদাসঃ তবে ত প্রভু হয় বলিতে বাৎসল্য প্রেমে গুরুকে পূঁজিতে।

(গুরু) রঘুদেবঃ পিতা-মাতার ভালবাসা জানি তুলনাহীন কিন্তু এই প্রেমে গুরু হয় না ভক্তের কাছে ঋণ।

(ভক্ত) হরিদাসঃ তাহলে প্রভু দাস্য প্রেমে হয়গো পূজা তোমার দাসের মত প্রভুর চরণে থাকিয়া কাটিল জীবন যাহার।

(গুরু) রঘুদেবঃ এহো বারযো আগে কহো হরিদাস এতো অল্পতেই কি মুক্তি পেতে চাস!

(ভক্ত) হরিদাসঃ তাহলে ত প্রভু মধুর প্রেমে হয় গো তোমার আরতি প্রিয় আর প্রিয়ার মাঝেই ত হয়ে থাকে শ্রেষ্ঠ প্রেম-পিরিতি। প্রিয়া কভু পারে না থাকিতে তাহার প্রেম প্রিয় সখা ছাড়া এক মূহূর্ত না দেখিলেই প্রিয়াকে প্রিয় হয়ে যায় পাগল পারা।

(গুরু) রঘুদেবঃ এবার হলো যৎকিঞ্চিত যৎসামান্য গুরুর আরাধনা এহো বারযো আগে কহো বলো কোন প্রেমে হয় গুরু ভজনা।

(ভক্ত) হরিদাসঃ (হরিদাস এবার ধুলায় লুটিয়া করিতে লাগিল গড়াগড়ি, নয়ন বাড়ি ছাড়িয়ে বলিল) আমি কেমনে দিব পারঘাটা পারি! এই পঞ্চপ্রেমের বাহিরে প্রভু আর প্রেম কোথায় পাই! তবে ত প্রভু আমার গুরু ভজনই হয় নাই।

(গুরু) রঘুদেবঃ (রঘুদেব এবার হরিদাসকে নিলেন বুকে তুলিয়া, বলিলেন তিনি গুরু প্রেমের কথা পূর্ণ ব্যক্ত করিয়া) এইতো হয়েছে গুরু ভক্তি এই প্রেমেই মিলেরে চিরমুক্তি। যতক্ষন বলিবে ভক্ত আমি পারিয়াছি গুরু পূজা, তবে শত প্রেমেও মিলিবে না মুক্তি গুরুপ্রেম নয়রে এতো সোজা। যেদিন ভক্তি দেহ মন প্রাণ করিয়া দিয়া উজার তবু নয়ন বাড়ি ছাড়িয়া বলিবে আমি দাসের যোগ্য নই তাহার, সেদিন ভক্তের অধীন হবে ভগবান পূর্ন মুক্তি মিলিবে তাহার।

রঘুদেব আর হরিদাস এর নাম শুনে নাই এমন গুরুভক্ত মানুষ খুব কমই আছে। এই ঘটনা গুরুভক্তির এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। আমি কবিতার আকারে ঘটনাটা লিখলাম। সাধারণ ভাবে লিখলেই মনে হয় ভাল হত, তবুও কেন যেন দয়াল ছন্দাকারে ঘটনাটা আমাকে দিয়ে লিখাইলো।

পঞ্চপ্রেম সম্পর্কে যাদের ধারনা নাই, তারা এই ঘটনার মহত্ব বুঝতে পারবেন না। তাই পঞ্চ প্রেম এর ব্যাখ্যা জানতে হবে। পঞ্চপ্রেম নিয়ে আমার একটা পোস্ট ছিল, সেটা দেখতে পারেন।

সংক্ষেপে পঞ্চ প্রেম এর ব্যাখ্যা উল্লেখ করলাম সহজ ভাষায়…
সখ্য প্রেম হয় বন্ধুর সাথে, শান্ত প্রেম হয় পিতা মাতা প্রতি, বাৎসল্য প্রেম সন্তানের প্রতি, দাস্য প্রেম মুনীবের প্রতি, মধুর প্রেম হয় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে।

এই পঞ্চ প্রেমের বাইরে কোনো প্রেম নেই, অনেকে আবার এই পঞ্চ প্রেমের বাইরে ভক্তের এই প্রেমকে কান্ত বা কান্তা প্রেম নামে অবিহিত করেছেন।

ঘটনার মূল কথা হল, পঞ্চ প্রেমে গুরুকে ভালবাসলেও গুরু পূজা হয় না। বরং পঞ্চ প্রেমে ভালবাসার পরেও যে ভক্ত নিজেকে দয়ালের দাসের অযোগ্য মনে করে, সেই ভক্তের পূজাই শুধু পূর্ণ হয়
যেমন লালন সাইজি বলেছেন
“নইলে মোর দশা কি এমন হয়
আমি ঐ চরণে দাসের যোগ্য নই”

রঘুদেব তার ভক্ত হরিদাসকে গুরু ভক্তির ব্যপারে জিজ্ঞাস করলে হরিদাস একেকটার পর একটা প্রেমের নাম বলে যাচ্ছিলেন। আর হরিদাস বলতেছিলেন, “এসব কিছু না, এর চেয়ে এগিয়ে বল”। শেষে যখন মধুর প্রেমের কথা বলেছিলেন, তখন রঘুদেব বলেছিলেন ‘(এই প্রেমে গুরু ভক্তি হয়) যৎকিঞ্চিত, মানে খুব সামান্য”। তখন হরিদাস ধুলায় গড়াগড়ি করেন, কারন এই প্রেমের বাইরে ত প্রেম নেই, আর তিনি তাহলে গুরু ভজনা করতেই পারেন নাই, তাই তিনি দয়ালের চরনে লুটিতে পরে কাঁদতে লাগল, তখন রঘুদেব বললেন এইটাই হল গুরু ভক্তি। অর্থাৎ ভক্তের মনে সব সময় এই ভাবটা থাকতে হবে যে, “আমার দ্বারা বুঝি কিছুই হল না”। তবেই মুক্তি মিলবে ভক্তির বলে।

লেখাঃ DM Rahat

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel