হোমপেজ ইলমে মারেফত শিল্প আর শিল্পীর নন্দনতত্ত্ব

শিল্প আর শিল্পীর নন্দনতত্ত্ব

শিল্প আর শিল্পীর নন্দনতত্ত্ব

১: “ভেজা কাষ্ঠকে প্রথমে তাপ দিয়ে শুষ্ক কাষ্ঠে পরিণত করতে হয়, পরিণত শুষ্ককাষ্ঠকে অগ্নিদহন করলে পূর্ণকয়লায় রূপান্তিত হয়, কয়লাকে পূর্ণদহন করলে শ্বেত ছাইয়ে পরিণত হয়।”

২: “একজন মানবের নাসপ্রকৃতির রূপটি হল ভেজাকাষ্ঠের ন্যায়, এই নাসপ্রকৃতির সত্তাটি জ্ঞানাগ্নিতে দহন হলে ইনসানে রূপান্তিত হয়, রূপান্তিত ইনসান প্রকৃতির সত্তাটি ভক্তিমার্গে উত্তীর্ণ হলে, রূপান্তিত ইনসান প্রকৃতির সত্তাটি ভক্তে রূপান্তিত হয়। রূপান্তরিত ভক্তটি যখন ইষ্টের ধ্যানমার্গে মগ্ন হয়, তখনই ভক্ত প্রকৃতির সত্তাটি যোগী হন, যোগময়ীসত্তাটি প্রকৃতির স্বাদের গুণে পরিতৃপ্ত হয়, পূর্ণতৃপ্তসত্তা হতে পরমবোধ আত্মবোধ উদয় হয়, নিষ্কামপ্রেম জাগ্রত হয়।”

৩: প্রেম হল সিগারেট, মিলনে আলিঙ্গন, উপসংহারে ছাই।

৪: খাঁচা আর পাখি দুইটিই আলাদা, পাখি খাঁচায় বন্দি থাকে, খাঁচা থেকে পাখি বের হয়ে গেলে পাখি মুক্ত।
মানব দেহটি খাঁচার ন্যায়, আর পাখিটি হল প্রাণের ন্যায়, দেহখাঁচায় বিদ্যমান প্রাণপাখির মধ্যে পরমপাখির
প্রকাশ পেলে আত্মা মুক্তপাখি। মোহের বন্ধনে আবদ্ধ পরমপাখি, মোহকেটে গেলে পরমপাখি মহাশূন্যে বিচরণ করে। পরমপাখি প্রকাশ হওয়ার কণ্টক হল মোহনদী।

৫: কাঁচা ইট অদগ্ধ, পাকা ইট দগ্ধ। কাঁচা ইট প্রকৃতির আকর্ষণে গলে যায়, কিন্তু পাকা ইট প্রকৃতির আকর্ষণ (আগুন, পানি, বায়ু, মাটি) থেকে মুক্ত। ইটের উপাদান হলো মাটি। ভক্তিতে প্ররাকাষ্ঠ মানুষ মাটির ন্যায়। কারণ, মাটির অহংকার নেই, মাটি সহনশীল, নমনীয়, উর্বর মাটি হতে নানা প্রকৃতির ফসল, ফলাদি, ঔষধ ও উদ্ভিদের জন্ম হয়। তেমনিভাবে মাটির ন্যায় বিনয়ী মানুষের অন্তরে আল্লাহর মারফতের ফুল ফুটে। জ্ঞানী মানুষ বিনয়ী হলে তিনি হন গুণীমানুষ । শিষ্টাচার বহির্ভূত মানুষ দোষনীয়, জ্ঞানী মানুষ সম্মানিত, গুণপ্রাপ্তমানুষ পূর্জনীয়। স্বভাবের দোষে কেউ পায় জুতার মালা, আবার স্বভাবের গুণে কেউ পায় ফুলের মালা।

৬: “ওয়া ইয, কা-লা রাব্বুকা লিল্‌মালা~ইকাতি ইন্নী খা-লিকম্ বাশারাম্ মিং সাল্‌সা-লিম্ মিন্
হামাইম্‌ মাছ্‌নূন্।”

অনুবাদ: এবং পশ্চাৎ ধাবন কর, যখন তোমাাদের রব আজ্ঞাবহ দাসকে বলিলেন, ‘আমি গন্ধযুক্ত কদর্ম শুষ্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা হইতে মানুষ সৃষ্টি করেছি।

“ফাইযা- ছাওয়াইতুহূ ওয়ানাফাতু ফীহি মিরূহী ফাকা’উ লাহূ ছা-জিদীন্।”

অনুবাদ: সুতরাং ‘যখন আমরা মানুষকে সুঠাম (বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসবো) করিব এবং সুঠামকৃত মানুষটির মধ্যে আমাদের পক্ষ হইতে রূহ্ সঞ্চার করিব তখন তোমরা (আজ্ঞাবহ দাসগণ) উহার (রূহপ্রাপ্তসত্তার) প্রতি সিজ্দাবনত হইও। (সুরা হিজর: ১৫:২৮-২৯ নং আয়াত)

৭: শিল্পের কার্য হল কমদামি জিনিসকে অধিক দামি জিনিসে পরিণত করা। সল্পস্থায়ী জিনিসকে স্থায়ী জিনিসে পরিণত করা। শিল্প রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করে। একজন শিল্পী তার গুণ দিয়ে বৈচিত্র্যময় নান্দনিক রূপময় বস্তু আবিষ্কার করে উন্নতির দ্বার খোলে দেয়। সুতরাং আমারা রূপের মানুষ না হয়ে, গুনের মানুষ হয়ে উঠি। রূপে ভিন্নতা আনে, কিন্তু গুণে ঐক্য আনে, সাম্যের সুর সৃষ্টি করে। একজন গুণী সার্থক শিল্পী। শিল্পী তাঁর তুলি দিয়ে সৃষ্টিতে নানান আলপনার ছবিঁ একে দেয়,যা মানবের বোধিবৃক্ষকে বিকশিত করে। একজন শিল্পী আবিষ্কারের নেশায় উন্মাদ।

নিবেদক: আর এফ রাসেল আহমেদ