হোমপেজ ইলমে মারেফত আত্মবাদই সত্য পাওয়ার পথ

আত্মবাদই সত্য পাওয়ার পথ

159

আত্মবাদই সত্য পাওয়ার পথ

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই মুক্তির জন্য এক একটি ভিন্ন ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। হোক সে আস্তিক কিংবা নাস্তিক। যে স্রষ্টা ও ধর্ম অবিশ্বাসী সেও পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাসের জন্য একটি পথকে বেছে নেয়। সবাই নিজের মত ও পথকেই একমাত্র সত্য পথ হিসেবে মনে করে। কিন্তু সব পথই কি সত্য? অবশ্যয়ই নয়। তাহলে কি একটিমাত্র পথ সত্য আর বাকী সব পথ মিথ্যা? তাও নয়। তাহলে সত্য পথ কোনটা?

সাধক মোনমোহন বলেছেন “সেটাই শ্রেষ্ট পথ, যেখানে সকল পথের যোগ রয়েছে।” অর্থাৎ আমাদের এমন একটি পথ বেছে নিতে হবে যেই পথ ও মতের সাথে সব পথ ও মত সংযোগ হয়েছে। আর এই সত্য পথ হল নিজের আপন পথ। নিজের আপন পথ কি? আমি যা আমার ইচ্ছা অনুযায়ী করি তা-ই কি আমার পথ? না, এটা আমার পথ নয়। আমার পথ সম্পর্কে জানতে হলে সবার আগে আমার নিজেকে জানতে হবে। আমি যখন আমার নিজের পরিচয় পাবো তখনই আমি আমার পথ ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারব।

নিজেকে চেনারই জ্ঞানই হল আত্মজ্ঞান বা আত্মবাদ। আমি কে? আমার উৎস কি? আমি আবার কোথায় ফিরে যাবো? আমি যখন এসব জানতে পারব তখনই আমি আমার প্রকৃত পথ পেয়ে যাবো। ধরুন আপনি রাজপুত্র, কিন্তু কালের গহবরে আপনি ভুলে গেছেন আপনার অস্বিত্ব। আপনি নিজেকে এখন ভিকারী ভাবছেন, কারন আপনি নিজেকে চিনেন না। যদি আপনি জানেন যে আপনি একজন রাজপুত্র, তাহলে আপনি আপনি রাজপ্রাসাদের পথকে নিজের পথ হিসেবে গ্রহন করবেন, আর যদি নিজেকে যদি না চিনেন, তাহলে ভিখারীর মত রাজপথ বাদ দিয়ে পথে পথে হাটবেন।

তাই সঠিক পথ সম্পর্কে জানার একটিমাত্র উপায় হল নিজেকে জানা। আত্মবাদ বা আত্মজ্ঞানই একমাত্র আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। যদি আমি নিজেকে না চিনতে পেরে অন্যের দেওয়া পরিচয়ে নিজেকে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, আস্তিক, নাস্তিক ভাবা শুরু করি, এবং অন্যের দেখানো পথকে নিজের পথ হিসেবে গ্রহন করি, তাহলে নিশ্চিত আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাবো।

মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী (রহঃ) ছিলেন জগত বিখ্যাত শ্রেষ্ঠ একজন ইসলামী আলেম। নিজেকে একটি ধর্মের গন্ডিতে আবদ্ধ রেখে তিনি সত্যের সন্ধান পাননি, সঠিক পথ পাননি, তিনি তখনই সত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন যখন তিনি ধর্মীয় গন্ডি থেকে বের হয়ে আত্মজ্ঞান অর্জন করেছিলেন। বিশ্ব বিখ্যাত একজন ধর্মীয় গুরু নিজেকে অর্পন করেছিলেন হযরত শামস তাবরীজ (রহঃ) এর মত একজন অশিক্ষিত মানুষের কাছে। কারন শামস তাবরীজ ছিলেন আত্মজ্ঞানী একজন চেতন গুরু। মাওলানা রুমী (রঃ) নিজেই বলেছেন যে “আমি কখনোই মাওলায়ে রুম হতে পারতাম না, যদি না আমি শামস তাবরীজের গোলামী স্বীকার না করতাম।” আত্মবাদের দ্বারাই মাওলানা রুমী সত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন, পেয়েছিলেন সত্য পথ, পেয়েছিলেন নিজের পথ। যদি বাহ্যিক ধর্ম জ্ঞানের দ্বারাই সঠিক পথ লাভ করা যেত তাহলে মাওলানা রুমীর মত আলেমের জন্য আলাদাভাবে কারো কাছ থেকে আত্মজ্ঞান হাসিল করতে হতো না।

ঈমাম গাজ্জালী (রহঃ), ফরিদ উদ্দীন আত্তার, শেখ সা’দী, স্বামী বিবেকানন্দ, আল্লামা ইকবাল, কাজী নজরুল ইসলাম, লালন সাঁইজিসহ পৃথিবীর সকল সত্য পথ প্রাপ্ত মহামানবগনই আত্মবাদের কথা বলে গেছেন। তারা সকলেই ছিলেন মরমীবাদী মহাপুরুষ। পরিশেষে একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সূফীবাব তথা আত্মবাদ বা মরমীবাদই একমাত্র সত্য পথ।

লেখাঃ DM Rahat