ঈদে গাদীর বা মাওলা আলীর অভিষেক

ঈদে গাদীর বা মাওলা আলীর অভিষেক

মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ “ঈদ দিবস ” অর্থাৎ “আনন্দ দিবস ” হইল গাদিরের অভিষেক দিবস। রাসুল আ. তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির বুনিয়াদ উম্মতগণকে দান করিয়া গেলেন। আল্লাহর সমগ্র জ্ঞানের অধিকারী রাসুলাল্লাহ আ. তাঁহার জ্ঞানের দ্বার খোলা রাখিয়া গেলেন। মৃত্যুর পরশ লাগিয়া উহা অন্তর্ধান হইল না। যাহাতে সাধারণ মানুষও সেই দ্বার হইতে জীবন দর্শন এবং জ্ঞান আহরণ করিতে পারে সেই ব্যবস্থাই তিনি করিয়া গেলেন যোগ্য প্রতিনিধি নিয়োগ করিয়া।

ইরানে ইহাকে “নওরোজ ” বলা হয়, কারণ নবী অন্তরালে চলিয়া গেলেও জ্ঞানের নব দিগন্ত উন্মোচনের সকল এন্তেজাম মওজুদ রহিল। ইহা রাসুলাল্লাহ আ. তাঁর জ্ঞানরাজ্যের “প্রবেশ দ্বার “এর উদঘাটন দিবস। অতএব ইহা পরবর্তী সমগ্র মানবজাতির জন্য নবুয়তের জ্ঞান লাভের পথে দ্বার উদঘাটন দিবস। স্বর্গীয় জ্ঞান আহরণ ইচ্ছুক প্রতিটি মানবের জন্য ইহা একটি আশীর্বাদ।

রাসুলাল্লাহ আ. আল্লাহর সমগ্র জ্ঞানের অধিকারী। সমগ্র জ্ঞানের কোন একদিকেও যদি তিনি অসম্পূর্ণ থাকেন তাহা হইলে সেই বিষয়ে কোন প্রশ্ন যদি কেহ করে এবং নবী যদি উত্তরে বলেন :”আমি ইহা জানি না ” তাহা হইলে তিনি আল্লাহর রাসুল হইতে পারেন না। এইজন্য দেখিতে পাই নবী আ. জ্ঞানের যিনি দ্বার তিনিও বলিয়াছেন, “যাহা কিছু জানিতে চাও আমি বাঁচিয়া থাকিতে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লইতে পার “(হাদিস)। এদিক হইতে বিচার করিলেও দেখা যায় মানুষের নিকট জ্ঞানের ভাণ্ডার আগমনের মহান আনন্দ দিবস ঈদে গাদির হইল অতুলনীয়।

রাসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন : গাদিরে খুম দিবস আমার উম্মতের সকল ঈদ দিবস হইতে উত্তম। এবং উহা সেইদিন যেদিন আল্লাহতায়ালা আমাকে তাঁর (সঙ্গে) সংযোগের নির্দেশ দিলেন আমার ভাই আলী ইবনে আবু তালেবের বংশধরের সহিত- যাহাতে (তাহার) আমার পরে জ্ঞান দান করিতেছে পারেন আমার উম্মতের হেদায়েত লাভের জন্য। এবং উহা সেইদিন যেদিন আল্লাহ আদদ্বীনকে পরিপূর্ণ করিলেন। এবং তাহাদের (অর্থাৎ উপস্থিত উম্মতদের) আত্মসমর্পণের দ্বীনের উপায় আল্লাহ রাজি হইলেন। (“সৈয়দ ইবনে হাসান নফজী “এর লিখিত “গাদিরে খুম” নামক উর্দু পুস্তিকা হইতে উদ্ধৃত। ইহা ফারাত ইবনে ইব্রাহীম কুফির তফসির হইতে তিনি গ্রহণ করিয়াছেন)

ব্যাখ্যা:- এই হাদীসে রাসুলাল্লাহ আ. ঘোষণা করিতেছেন যে, উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য যত রকমের আনন্দ দিবস রহিয়াছে তাহার মধ্যেই সর্বোত্তম আনন্দ দিবস হইল খুম দিবস। এর কারণ খুম দিবস এমন একটি দিবস, যেদিন আল্লাহতায়ালা রাসুলকে (আ.)নির্দেশ দিলেন যেন রাসুলাল্লাহ আ. তাঁহার ভাই আলীর (আ.) বংশধরের সঙ্গে আল্লাহর সংযোগ লাগাইয়া দেন। নবী বিদায় গ্রহণ করিতেছেন, তাই নবীর অবর্তমানে উম্মতগণের হেদায়েতের জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁহার নবীকে নূরে মোহাম্মদীর ধারক এবং বাহক প্রতিনিধি তৈরি করিয়া জাহেরে বাতেনে তাহাদিগকে সেই নূরের অধিকারী করিয়া দেওয়ার নির্দেশ দিতেছেন এবং তাহা দ্বারা তাহাদিগকে আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত করিয়া দিতে বলিতেছেন।

নবী বর্তমান থাকতে উম্মতকে জ্ঞানদান করিবার অধিকার কাহারও নাই। তাই তাঁহার জাহেরী অবর্তমানে তাঁর যোগ্য প্রতিনিধি তৈরি করিয়া উম্মতগণকে জ্ঞানদান করিবার অধিকার আলী আ. ও তাঁহার বংশধরকে আনুষ্ঠানিক ভাবে (এই দিনে) অর্পণ করা হইল। কেহ হয়ত বলিবেন আলী আ. সঙ্গে তাঁর বংশধরের কাহারও অভিষেক সেদিন হয় নাই। তাহা হইলে এই হাদীসে বংশধরের কথা উল্লেখিত হয় কেমন করিয়া? এই অভিষেক দ্বারা আলীর (আ.) বংশ হইতে একের পর একজন করিয়া নবীর নায়েব নিয়োগ করিবার অধিকার দেওয়া হইল।

আল্লাহর দড়ি (হাবলুল্লাহ) প্রলম্বিত করিয়া দেওয়া হইল একের পর একজন করিয়া নায়েবে নবী নিয়োগ করিবার অধিকার দানের মাধ্যমে। এইসব নিয়োগ আল্লাহ এবং তাঁহার রাসুলের (আ.) ইচ্ছাক্রমেই একের পর এক হইতে থাকিল। নবী তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে জাহেরীভাবে বিদ্যমান থাকিলেন। কিন্তু বার জনের পর আল্লাহর এই দড়ি মানুষের অবাধ্যতার জন্য ছিন্ন হইয়া গেল।

খুম দিবসে উম্মতে মোহাম্মদীর দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ করিল, কারণ মোহাম্মদী দ্বীন আলোর দ্বার তথা জ্ঞানের দ্বার খুলিয়া দেওয়া হইল। নবীর এন্তেকালের দ্বারা উহার সমাপ্তি ঘটিল না। ফলত :রাসুলের (আ.) উম্মতের উপর আল্লাহর দেয়া নেয়ামত পূর্ণতা প্রাপ্ত হইল। আল্লাহতায়ালা খুমে উপস্থিত ব্যক্তিগণের দ্বীনের উপর সন্তুষ্ট হইলেন —যাহারা সত্যিকার আত্মসমর্পণ করিয়াছিল। অর্থাৎ আত্মসমর্পনের দ্বীনকে যাহারা খুম দিবসে আনুগত্যের দ্বারা গ্রহণ করিল তাহাদের উপায় আল্লাহ রাজি হইলেন।

সূত্র: (মাওলার অভিষেক: সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী)

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel