মাওলাইয়াত- এর বাতেন!

মাওলাইয়াত- এর বাতেন!

জাহেরী বিষয় হইতে “মাওলাইয়াত“-এর আধ্যা্ত্মিক বিষয়টি অধিকর ব্যাপক এবং সুগভীর অর্থবহ। রসুল (আ:) সারা সৃষ্টির রহমত রুপে সর্বকালে অবস্থান করেন এবং তাঁহার প্রতিনিধি‘’ মাওলা” বিরাজ করেন তাঁহারই মনোনীত অধি স্বামী রুপে (overlord) সকল দেশে সকল যুগে মানব গোষ্ঠীর হেদায়েতের জন্য মাওলার মনোনীত বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে বেলায়েতের মহা রাজা মাওলা আলী (আ:) যে মহান কর্তব্য বেনামীতে পালন করিয়া আসিতেছেন তাহা মুশকিল কুশা মাওলা আলীরই (আ:) কৃতিত্ব।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসুলুন রাহমাতুল্লিল আলামীন আলীউন মাওলা উল আলামীন। আধ্যাত্মিকতার শিখরে আরোহণ করিয়া মানবাত্মা যখন জ্যোতির্ময় তার সীমাহীন প্রসার দর্শন করে তখন জ্যোতির্বলয়ের ছটায় ছটায় আল্লাহতা’লার রবুবিয়ত, মোহাম্মদ সাল্লাললাহু আলাইহে অসাল্লামের রেসালত এবং হযরত আলী শেরে খোদার মাওলাইয়াত অপরুপ রুপে প্রতিভাত হইতে থাকে।

দর্শন বিমুগ্ধ মানবাত্মাকে বিশ্বজনীন মাওলাইয়াত সর্বকালীন রেসাল পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দিয়ে রেসালতের মহিমায় মানবাত্মা চির আরাধ্য আল্লাহতা’লার রবুবিয়ত পর্যন্ত উন্নীত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে। ইহা উর্ধ্বতন ব্যক্তিগণের জন্য “মাওলাইয়াত “-এর স্বরুপ।

এই রুপে আমরা কোরানে দেখতে পাই: মানবাত্মা শুদ্ধির পথে অগ্রসর হইয়া জান্নাতের উচ্চতম পর্যায়ে উপনীত হইলে যেই ভাবে বিশ্ব স্রষ্টাকে রব রুপে একান্ত ভাবে গ্রহণ করিতে পারিয়া তাঁহাকে প্রত্যক্ষ ভাবে ডাকিয়া থাকে তাহা হইল আলহামদুলিল্লাহে রাব্বুল আলামীন (দ্রষ্টব্য:১০:৫-১০) খোদার খোদায়ি যতদুর (বিস্তৃত) রাসুলের রেসালত ততদুর মাওলার মাওলাইয়াত ততদুর।

প্রার্থনা: “আলী (আ:) মাওলাইয়াত” এর প্রতি নতুন শপথ গ্রহণের মধ্যে আজকের এই দিনে জ্ঞানের নবদিগন্ত উন্মোচনের সহিত আমাদের সুপ্রভাত হউক। ইহাই আমাদের ঐকান্তিক বাসনা। মাওলাইয়াত দিবস পালন উপলক্ষে আমাদের এই ছোট একটি প্রার্থনা। মাওলাইয়াত হইল পারত্রিক কল্যাণ অর্থাৎ আখেরাত তৈরীর ব্যবস্থা অপর পক্ষে মানুষের ভোটের খেলাফত হইল দুনিয়া মুখী ব্যবস্থা।

দুনিয়ার খেলাফত খোদাই বিধান নহে, অর্থাৎ কোরানের অনুসারী নহে। ”মাওলাইয়াত” এর লক্ষ হইল মুসলমান জনগণের উপর কোরানী বিধান বল পূর্বক স্থাপন করা। কিন্তু যেহেতু মাওলাইয়াত মানুষের ব্যবহারিক জীবনে নিয়মানু বর্তিতা এবং সংযমের বাধন আরোপ করে সেইহেতু ইহা অধিক জন সমর্থন লাভ করে নাই।

যদি উম্মতগণ মাওলাইয়াতের অধীন তা মানিয়া লইতে রাজি থাকিত তাহা হইলে এমন এক দল সুদক্ষ এবং আত্ম ত্যাগী সমর্পিত প্রাণ ইসলাম প্রচারক দলের সৃষ্টি হইবে,তাহাদের প্রচার কার্যের কারণে খেলাফত এত স্বল্প স্থায়ী হইতে পারিত না। সামান্য পরিমাণ যেইটুকু ইসলাম খেলাফতে রক্ষিত হইতেছিল তাহারও চরমভাবে পতন ঘটিল।

ইহার একমা্ত্র কারণ মাওলাইয়াত তাহারা ভালবাসে নাই। তাই আলীকেও(আ:) তাহারা খেলাফতের পর্যায়ে নামাইয়া লইতে ভালবাসে, যাহাতে পরবর্তী উমাইয়া এবং আব্বাসীয় রাজত্ব গুলিকে ধর্মীয় রাজত্ব বলিয়া গ্রহণ করিবার মত আ্ত্ম্প্রসাদ লাভ করা যায়। এইরূপে ঐ সকল রাজাদের ইতিহাস আজও ইসলামের ইতিহাসের অন্তভুক্ত হইয়ার হিয়াছে, যদিও মোহাম্মদী ইসলামের কিছুই তাহাদের ছিল না।

খেলাফতের পাশাপাশি মাওলাইয়াত কে রক্ষা করিয়া চলিলে কারবালায় ইসলামের সমাধি রচনা হইত না। অতএব, আলীকে (আ:) ’চতুর্থ’ খলিফা বলা অধর্ম্। আশ্চর্য্কথা এই যে সুন্নি মুসলমানদের কেতাবে ভরা মাওলাইয়াতের উল্লেখ থাকা সত্বেও তাঁহারা কেমন করিয়া আলীকে (আ:) চতুর্থ খলিফা বলিয়া থাকে?

সুত্র: “মাওলার অভিষেক ও ইসলামের মতভেদের কারণ“— মাওলা সূফী সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel