আল্লাহর প্রতিছায়া হায়াতুন নবী মোহাম্মদ (সা:) – পর্বঃ১
আল্লাহ যেমন জাতী নূর আমাদের নবীও তেমনি ঐ জাতী নূরের অংশ। তাই আল্লাহপাক কোরানেই ঘোষনা করেছেন; ”আল্লাহু নূরুন” তথা আল্লাহ নূর। আবার ‘সূরা মায়দায়’ নবীকে নূর বলে ঘোষনা করা হয়েছে: এখানে বলা হয়েছে যে, ”ক্বাদযা-য়াকু মমেনাল লাহে নূর” তথা আল্লাহ বলেছেন আমার তরফ থেকে যে নবী পাঠিয়েছি তিনি হলেন নূর। এখানে আল্লাহও নূর তাই নবীকেও নূর বলা হয়, নূরে নূরে মিশে একাকার।
আবার দেখুন কোরানে বলা হয়েছে ”বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ‘সুরা তওবার’ মধ্যে নবীকে বলা হয়েছে ”রাউফুর রাহীম” লক্ষনীয় এখানে আল্লাহ নিজেকেও যেমন রাহীম বলেছেন, তেমনি নবীকেও রাহীম বলেছেন। আর এভাবেই আল্লাহর রাহীমি গুণ নবীর মাধ্যমে প্রকাশ করলেন। আবার দেখুন আল্লাহ সুরা ফাতেহার মধ্যে নিজেকে বলেছেন; “রাব্বিল আলামিন” ‘সুরা আম্বিয়ার’ মধ্যে নবীকে বলেছেন ”রাহমাতুল্লীল আলামিন” যার অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহ হলেন সারা বিশ্বের পালনকর্তা আর নবী হলেন সারা বিশ্বের রহমত দাতা।
পবিত্র কোরানের বর্ণনা মতে, যিনি সৃষ্টি জগতের রহমত সরূপ প্রেরিত হয়েছেন, তিনি যদি মৃত্যু বরণ করেন, তাহলে সৃষ্টি জগত রহমত থেকে বঞ্ছিত হয়ে ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার কথা। তাছাড়া আল্লাহ্ হলেন আসমান ও জমিনের নূর। তাঁর উপমা একটি জ্বালানো বাতির মত। আর হযরত নবীপাক (সা:) হলেন সেই প্রজ্বলিত প্রদীপ।
এখন প্রশ্ন হলো- আল্লাহ্ চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব। তাহলে আসমান ও জমিনের প্রজ্বলিত প্রদীপ স্বরূপ যাকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করলেন, সেই নূরে মোহাম্মদী কি জগত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে?
যদি তা হয়, তবে বিশ্ব জাহান যে রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা। পবিত্র কুরানের এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট ভাবেই বুঝা যায় যে, আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সঃ)-এর সম্পর্ক এত নিবিড় যে, রাসুল (সঃ) ব্যতিত আল্লাহ্র সৃষ্টি জগত যেন অস্তিত্ব বিহীন হয়ে যায়। সুতরাং রাসুল (সঃ) যদি হায়াতুন্নবী না হন তাহলে আল্লাহ্ সৃষ্টির সর্বত্রই তাঁর অস্তিত্ব বিদ্যমান কিভাবে থাকে?
কোরানেই আল্লাহ বলেছেন: ‘মাইউতিউর রাসুলা ফাকাদ আতা আল্লাহ্’ (সুরা নেসা-আয়াত -৮০)। অর্থ- যে ব্যক্তি রাসুলের অনুসরণ করলো প্রকারান্তরে সে আল্লাহ্কেই অনুসরণ করলো। যখন সাহাবীরা নবীপাকের হস্তের উপর হস্ত রাখিয়া বায়াত হয়েছিল, তখন আল্লাহ বললেন: “ইয়াদুল্লাহে ফাওকা আইদিহিম” অর্থাৎ “নবীর হাতের উপর আল্লাহর হাত” (সুরা-ফাতহ আয়াত -১০)।
তার মানে নবীর হাতই আল্লাহর হাত। আবার দেখুন যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহর নবী কংকর ছুঁড়ে ছিলেন তখন আল্লাহ বললেন; “ওয়ামা রামায়তা ইয রামায়তা ওয়ালাকিন্নাল্লাহা রামা।” অর্থাৎ “হে রাসুল আপনি কংকর নিক্ষেপ করেন নাই বরং তা আমিই নিক্ষেপ করেছিলাম”-(সুরা আনফাল আয়াত-১৭)।এখানে নবীর কাজকে আল্লাহ নিজের কাজ বলেছেন।
হাদিস শরীফে আছে: নবীপাক বলেছেন; “মান-রাআনী ফাকাদ রাআল হক্ক”- ‘যে আমাকে দেখলো সে মুলত আল্লাহকেই দেখলো।’ দলিল চাইলে অসংখ্য দলিল কোরান হাদিস থেকে উল্লেখ করা যাইতে পারে। কিন্তু দলিল শুধু মুখ্য ব্যপার নয় প্রয়োজন শুধু উপলদ্ধিতা।
তথ্য সহযোগী গ্রন্থসূত্র: হায়াতুন নবী ও ওলি।