ঈদ দিবস বা ঈদে গাদিরের মাহাত্ম:

ঈদ দিবস বা ঈদে গাদিরের মাহাত্ম:

১৮ই জিলহজ্ব মুসলমানদের “ঈদ দিবস” জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ  অর্থাৎ “আনন্দ দিবস”। যদিও আজ মুসলিম সমাজ এই গাদির সম্পর্কে অবহিত নন কারণ হলো প্রথম থেকেই ইতিহাসের পাতা হতে গাদিরে খুমের সত্য বাণী প্রায় বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। আর এ সুক্ষ কাজটি করেছে তৎকালীন সময়ের উমাইয়া আব্বাসীয় রাজ শক্তি।

রাসুলাল্লাহ (আ) জীবনে একবার মাত্র হজ্ব পালন করে ছিলেন। মক্কা শহরকে চিরবিদায় জ্ঞাপন করে তিনি জন্মস্থান ত্যাগ করলেন। এইজন্য ইহাকে বিদায় হজ্ব বলা হয় এবং তাঁর দেওয়া এই ভাষনকে “বিদায় ভাষন” বলা হয়, যেহেতু ইহা ছিল জন্মভূমির প্রতি শেষ ভাষন। মক্কায় অবস্থিত সকলকে বিদায় সম্ভাষণ করে নিজে এহরামের পোশাক না ছেড়েই মদীনার পথে রওনা হলেন।

প্রায় সোয়া লক্ষ লোক তাঁর সহ যাত্রী ছিলেন। পথে ১৮ই জিলহজ্ব তারিখে শনিবার দিন জোহর এবং আছরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী “জুফায়” যখন তিনি ‘গাদিরে খুম’ নামক জায়গায় উপস্থিত হলেন তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন:- ইয়া আইয়্যুহার রাসুলু বাল্লিগ মা-উনযিলা ইলাইকা মির রাব্বিক; ওয়াইল্লাম তাফ’আল ফামা বাল্লাগতা রিসালাতাহ, ওয়াল্লাহু ইয়া’ সিমুকা মিনান্নাস, ইন্নাল্লাহা লা ইয়াহ দিল ক্বাউমাল কাফিরীন।

হে রাসুল, আপনার রব হইতে যাহা নাজেল করা হয়েছে তা পৌঁছাইয়া দেন। আর যদি তা না করেন তাহলে তাঁর (আল্লাহর) রেসালাত পৌছাইয়া দেওয়া হল না। আল্লাহ আপনাকে মানব মন্ডলী হতে লইয়া আসবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের দলকে হেদায়েত করেন না। (সুরা মায়েদাঃ ৬৭)। ইহা কোরানের সব শেষের আগের আয়াত।

শেষ কথাটির প্রকৃত অনুবাদ হইলঃ আল্লাহ আপনাকে মনুষ্য হইতে (সরাইয়া) তাঁর সাথে লাগাইয়া লইতেছেন বা লইবেন। “গাদির” অর্থ জলাশয়। জায়গার নাম খুম।

খুমের জলাশয়ের নিকটবর্তী হইলে উক্ত আয়াত এইরুপে নাজেল হয়েছিলঃ “ইয়া আইউহার রাসুল বাল্লেগ মাউনজিলা ইলাইকা মিররাব্বেকা আন্না আলী উন মাওলাল মোমেনীন। অইনলাম্‌ তাফআল ফালাবাল্‌লাগতারে সালাহু। আল্লাহু ইয়া, সেমুকা মিনান নাস”।

ইহা হতে “আন্না আলী উন মাওলাল মোমেনীন” কথাটি কোরান হতে বাদ দেয়া হয়েছিল খলিফা ওসমানের (রা:) এর কোরান প্রকাশনা হতে। মুসা নবীর সঙ্গে যেমন হারুনের নাম কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই রুপে আলী (আ) নামও কোরানে কয়েক বার ছিল।

“ইবনে আবি হাতেম বর্ননা করেছেন, আবু সাঈদ খুদরী হতে উক্ত আয়াত হযরত আলীর শানে নাজেল হয়েছে। ইবনে মারদুইয়া ইবনে ওমর হতে বর্ননা করেন যে, আমরা উক্ত আয়াত রাসুলের (আ:) এর সামনে এইভাবে পড়তাম।” (তফসীরে দোররে মনসুর; জালাল উদ্দিন শিউতী; ২য় খন্ড, মিশর থেকে প্রকাশিত)”

উক্ত আয়াতের সমর্থনে হাদিস দু’টো হলোঃ

মানকুন্তুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু (বোখারী, মেশকাত)”।

হযরত রাসুল (সাঃ) যে হযরত আলী (আঃ) কে হযরত মুসা নবীর ভাই হযরত হারুন (আ:) এর সাথে তুলনা করেছেন তার প্রমাণ ” (বোখারী ২য় খন্ড ১৯৪ পৃষ্ঠায় এবং ৩য় খন্ডে ৫২৬ পৃষ্ঠায়, এবং ইবনে হিসাম ২৭৭ পৃষ্ঠায়।)

সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্নিত আছে যে, রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ হে আলী, তুমি আমার নিকট ঐ স্থানে আছো যেখানে মুসার নিকট হারুন ছিল। কিন্তু আমি ব্যতীত নবী নেই আমি শেষ নবী। যদিও আরও অনেক প্রমাণ রয়েছে তবে আমি মনে করি জ্ঞানীদের জন্য এই দুটোই যথেষ্ট।

তারপর রাসুলাল্লাহ (সাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেনঃ “আলাস্ত আওলা বেকুমমিন আনফুসিকুম” অর্থাৎ আমি কি তোমাদের আপন জীবন হতে অধিক প্রিয় নই? সবাই বললেনঃ “কালুবালা”-হ্যা ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)।

সমবেত জন মন্ডলী হতে তিনবার এই সম্মতি নিবার পর রাসুলাল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আঃ) এর দু’বাহু সমবেত জন মন্ডলীর সামনে তুলে ধরলেন আর বললেনঃ “মানকুন্তুম মাওলাহু ফাহাজা আলি উন মাওলাহু আল্লাহুম্মা ওয়ালে মান ওয়ালাহু, আদামান আদাহু,অন্সুরমান নাসারা অখ্‌জুলমান্‌ খাজালা, ফালইয়াছ হাদিল হাজেরুন খায়েরা”।

অর্থাৎ; “আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ! তুমি তাকে বন্ধু রুপে গ্রহণ কর যে তাকে বন্ধু রুপে গ্রহন করে, তাকে শত্রু রুপে গ্রহন কর যে তার সাথে শত্রুতা করে, এবং তাকে সাহায্য কর যে সাহায্য করে, এবং লাঞ্ছনা দাও তাকে যে লাঞ্ছনা দেয়।”

এহাদীসটি- “আহমদ ইবনে হাম্বল” সূত্রে “মেশকাতের” ১৫৭ পৃষ্ঠায় ৫৮৪৪ নং হাদিসে বর্নিত আছে, হযরত বারা ইবনে আযেব ওযায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে।

এ – হাদীসটির শেষে বর্ননা কারী বলেনঃ এরপর যখন হযরত আলী (আঃ) এর সাথে হযরত ওমর (রাঃ) এর সাক্ষাত হয়, তখন তিনি আলী (আঃ)-কে বললেনঃ “ধন্যবাদ হে আবু তালিব পুত্র! তুমি সর্বময় প্রতিটি নারী-পুরুষের প্রশংসিত হয়ে রইলে”। এই সব সত্য ঘটনা তৎকালীন সময়ে রাসুলের আহলে বাইত বিরোধী লেবাসধারী মুনাফিক মুসলমান কর্তৃক মিথ্যার চাঁদর দিয়ে এমন ভাবে মুড়িয়ে রেখেছে যার প্রেক্ষিতে বেশির ভাগ মানুষের কাছেই তা অজানা এবং জানাতে গেলেও নতুন মনে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা এমনভাবে সুক্ষ কারচুপি করেছে যার ফলে আজও মানুষকে সত্য জানতে দেয়া হয়নি।

গ্রন্থ সুত্র: মাওলার অভিষেকও মতভেদের কারণ। [সুফি সদর উদ্দিন চিশতী (রহ:)]।

গাদীরে খুম ও হযরত আলী সম্পর্কিত আরো পোস্টঃ

# গাদিরে খুমের ঘটনাবলীর উল্লেখ রয়েছে এমন ২০টি পুস্তক
# মওলা আলী (আঃ)-ই হলেন রাসুল (সাঃ) এর ঘোষিত সর্ব প্রথম ইমাম
# গাদিরে খুম এর ঐতিহাসিক ভাষণ ও স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা
# আমিরুল মোমেনিন মাওলা আলী (আ:) এর খুতবা:
# ইমামে মুবিন এবং ইমাম আলী (আঃ) প্রসংগ।
# হযরত আলীর অনুসারীগণ যে কারনে আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel