শহীদে কারবালার নির্মম ইতিহাস।
দয়াল রাসূল পাক (সঃ) বলেন-
حسين مني وأنا من حسين أحب الله من أحب حسينا
অর্থাৎ: হোসাইন আমার থেকে আমি হোসাইন থেকে, যে হোসাইনকে ভালবাসে তাকে মাহান আল্লাহ ভালোবাসেন। (সুনানে ইবনে মাজা ১ম খন্ড, হাদিস নং ১৪৪)।
দয়াল রাসূল পাক (সাঃ) এর চেহারা মোবারকের সাথে সবচেয়ে বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলো ইমাম হোসাইনের। তাঁদের মধ্যে প্রেমের গভীরতা ছিলো মহাসমুদ্রের ন্যায়। যাহা কোন লেখক কেয়ামত পর্যন্ত লিখলেও সমস্ত সমুদ্রের একবিন্দু লেখা সম্ভব হবে না। সেখানে অধম মোজাম্মেল পাগলা আর কি লিখবে? ভাষার তুলি কথামালা গুলো থরথর করে কাঁপছে এবং অন্তরে মহাপ্রলয় অগ্নিঝড় বইছে। মাওলা ইমাম হোসাইনকে দেখা মানে সরাসরি দয়াল রাসূল (সাঃ) কে দেখা। মাওলা ইমাম হোসাইনের চেহারার দিকে মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকানো হাজার বছর ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
তাঁকে ভালোবাসা মুমিনের জন্য ফরজেরও ফরজ। যাঁর প্রেম মুমিনের হৃদয়ে ঝড় তুলে এবং মহাপ্রলয় ঘটায়। যাঁর কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে মুমিন বদ্ধ উন্মাদের ন্যায় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। যাঁর প্রেমে অশ্রু ঝড়ালে মহাপাপীও মুমিন হয়ে যায়। বাহ কি চমৎকার মুসলিম জাতি! তোমরা তাঁকেই কারবালার ময়দানে নৃশংসভাবে হত্যা করলে। তোমরা কেমন মুসলিম জাতি, ভাবতেই অবাক লাগে এবং চোখেমুখে ঘৃণার ছাপ ফুঁটে ওঠে। না না তোমরা মাওলা ইমাম হোসাইনকে হত্যা করোনি বরং দয়াল রাসূল (সাঃ) এর স্বত্ত্বা, আদর্শ, স্বপ্ন, প্রেমকেই হত্যা করছো। আমি আরো স্পষ্ট করে বলতে চাই, তোমরা সরাসরি দয়াল রাসূল (সাঃ) এবং মোহাম্মদী ইসলামকেই হত্যা করছো।
দয়াল রাসূল (সাঃ) ইমাম হাসান ও হোসাইনকে প্রতিনিয়ত নিজের পিঠে নিয়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলা করতেন। দয়াল রাসূল (সাঃ) একদিন খুৎবা পাঠ করতেছে, এমন সময় মাওলা ইমাম হোসাইন প্রবেশ করে এবং মাওলা ইমাম হোসাইন জামার সাথে বেঁধে মাটিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে, দয়াল রাসূল (সাঃ) খুৎবা রেখে মাওলা ইমাম হোসাইনকে জড়িয়ে ধরে। আবার দয়াল রাসূল (সাঃ) নামাজে সেজদা দেওয়ার সময় মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইন অধিকাংশ সময় পিঠে চড়ে থাকতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা পিঠ থেকে না নামতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দয়াল রাসূল (সাঃ) সেজদা থেকে উঠতেন না। হায়রে কি প্রেমের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে মনের অকপটে। এমন ভালোবাসার নজির সৃষ্টি জগতে আর নেই। আর তোমরা দয়াল রাসূলের সেই ভালোবাসাকেই হত্যা করলে। অথচ নাম দিয়েছো পাক্কা মুসলিম।
আপনি কি জানেন! কারা মাওলা ইমাম হোসাইনকে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করছে? কারবালা প্রান্তরে ২২ হাজার এজিদ বাহিনীর মধ্যে হাজার হাজার মসজিদের ইমাম, হাফেজ, মুফতি এবং সবাই নামদারী সাহাবী ও তাবেইন ছিলো। অথচ আমরা অজ্ঞতার জন্যই হাফেজ, মুফতি, আলেম, সাহাবী এবং তাবেইনদের কথা শুনলেই শ্রদ্ধার সাথে মাথা অবনত করি। এজিদ নিজেও ছিলো একজন তাবেইন এবং কোরআনের হাফেজ। এরা কিন্তু কেউ আমাদের মতো সাধারণ মুসলিম ছিলো না।
এরাই আমার মাওলা ইমাম হোসাইনের মস্তক কেটে বর্শার আগায় বিদ্ধ করে কুফা ও দামেস্কের সকল মসজিদ এবং শহরের অলি গলিতে বিজয় মিছিল করে। কারবালা প্রান্তরে মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক শিরশ্ছেদ করার পর, মাওলা ইমাম হোসাইনের দেহ মোবারকের উপর দিয়ে শতশত ঘোড়া চালিয়ে দেহকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। কোরআনের হাফেজ সীমার যখন মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক কাটতে ব্যস্ত, তখন সাহাবীর ছেলে সেনাপতি ওমর সাদ বলে, সীমার তাড়াতাড়ি করে মাথা কাটো দামেস্ক নগরে গিয়ে আছরের নামাজ পড়বো। বেশী দেরি করলে আছরের নামাজ কাযা হয়ে যাবে।
আরো একটি চমকপ্রদ তথ্য দিই। ১লা মহররম থেকে ১০ই মহররম পর্যন্ত এজিদের সৈন্য বাহিনী কারবালা প্রান্তরে মাওলা ইমাম হোসাইনের শিবির ঘিরে ফেলে। এই কয়দিন মাওলা ইমাম হোসাইন এবং এজিদ বাহিনীর শিবিরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও আজান হয়েছে। অথচ এজিদ বাহিনী বুঝতে পারেনি মাওলা ইমাম হোসাইন নিজেই নামাজ এবং ধর্ম। লেবাসধারী নামাজি এবং ধার্মিকরাই স্বয়ং নামাজ এবং ধর্মকেই হত্যা করছে। এজিদ বাহিনীর নামাজকে যদি নামাজ বলা হয়, তাহলে মুমিনরা সে নামাজকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণার চোখে দেখবে।
ইমাম হোসাইন শহীদ হওয়ার আগে এজিদি বাহিনীদের যা বলেছিলেন।
মাওলা ইমাম হোসাইন শহীদ হওয়ার আগে কিছু কথা বলেন। যা হৃদয়ে সবসময় দাগ কাটে। “তোমাদের ভিতরে কি একজনও মুসলমান নেই, যে আমাকে ফুরাত নদী থেকে একটু পানি দিবে। তোমরা কাকে হত্যা করতে এসেছো? জানো না আমি দয়াল রাসূল (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় নাতি, শেরে খোদা মাওলা আলীর আদরের দুলাল, বেহেশতে মহিলাদের সর্দার জগত জননী মা ফাতেমার কলিজার ধন এবং আমি নিজেই বেহেশতের সর্দার ইমাম হোসাইন। তাহলে তোমরা কি বেহেশতকে হত্যা করে বেহেশতে যেতে চাও? আজকে যদি কাফেররা আসতো আমাকে হত্যা করতে, তাহলে মনে কোন দুঃখ থাকতো না। তোমরা তো আমার নানারই উম্মত এবং এক আল্লাহর ইবাদতকারী। আমি কি অন্যায় এবং জুলুম করেছি তোমাদের সাথে? যার জন্য আমাকে হত্যা করতে দৃঢ সংকল্পবদ্ধ। তোমাদের কি ভয় নাই আখিরাতের? রোজ হাশরে কি জবাব দিবা আমার নানা এবং আল্লাহর কাছে? আমার নানার শাফায়াত ছাড়া তো কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। এখনো সময় আছে ভয় করো আল্লাহর এবং আমার পথ ছেড়ে দাও।”
জবাবে এজিদ বাহিনী কি বলেছিলো।
“হে হোসাইন তুমি আমাদেরকে ভয় দেখিও না বরং তুমি আল্লাহকে ভয় করো। কারণ তুমি খলিফা এজিদের বায়াত অস্বীকার করে কাফের এবং ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছো। তোমাকে হত্যা করা ফরজ হয়ে গেছে এবং তোমার মতো কাফেরকে হত্যা করলে নিশ্চিত জান্নাতি হবো আমরা। এখনো সময় আছে তুমি এজিদের বশ্যতা স্বীকার করে নাও, তাহলে আমরা তোমাকে কিছু বলবো না। নচেৎ আমরা তোমার মাথা শিরশ্ছেদ করে এজিদের কাছে নিয়ে যাবো।”
তখন ইমাম হোসাইন বলে, “ওরে পাপিষ্ঠ দলেরা তোমাদের মনে যদি এই মনোবাসনা থেকে থাকে, তাহলে শুনো রাখো আমি পাপিষ্ঠ এজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ করবো না। প্রয়োজনে আমি নিশ্চিত শহীদ হবো তবুও মিথ্যার কাছে মাথা নত করবো না।”
হে মাওলা ইমাম হোসাইন! তুমি মহাবীর, মহাবিশ্বের মহাপ্রলয়, সত্যের মূর্ত প্রতীক এবং ত্যাগের জলন্ত উত্তপ্ত অগ্নিশিখা। তুমি দিয়েছো শির তবুও মিথ্যার কাছে হার মানোনি। তুমি মুমিন হৃদয়ে চির অম্লান এবং ভালোবাসার মধ্যমনি।
নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।