কারবালা ও আশুরা
– সৈয়দ কুতুবউদ্দিন আহমেদ আল হোসাইনী চিশতী।
আশুরার দিবসে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু কারবালার ঐ মর্মান্তিক রক্তপাতের হৃদয়বিদারক অমর কাহিনি, বিশ্ব মুসলিমের অন্তরে যেভাবে রেখাপাত করে মহাআলোড়ন সৃষ্টি করেছে বিশ্বের কোনও ঐতিহাসিক ঘটনাই এমনতর আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি। ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের সংবাদে স্বয়ং মহানবী (সা.) যেমন বিচলিত ও ব্যথিত হয়েছিলেন, সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। মেশকাত শরিফের শেষ খণ্ডে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও উম্মে সালমাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত দুখানা হাদিস পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমাম হোসাইনের শাহাদাত বরণের সম্মানে মহানবীর (সা.) পবিত্র আত্মা মাটিতে লুটিয়ে কান্নাকাটি করেছে ঐ হাদিসদ্বয়ই তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। পাক ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা মুফতি আহমদ ইয়ারখান প্রণীত “শানে হাবিবুর রহমান’ (বাংলা অনুবাদ) ৩২৪ পৃষ্ঠায় একটি কবিতার পংক্তিতে উল্লেখ আছে, “কাফের হে, ওহ যো হোসাইন কা মাতম নেহি কারতে” অর্থাৎ সে ব্যক্তি কাফের যে হোসাইনের (আ.) শোকে মাতম করে না।
মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের সময় মহান আল্লাহর দরবারে শেখ সাদীর (রহঃ) কবিতা পাঠ করে তারা আহাজারী ও মোনাজাত পেশ করেন, “ইলাহি বাহাক্কে বনি ফাতেমা বারকাউলে ঈমান কুনাম খাতিমা। আগার দাওয়াতাম রাদকনি ওর কাবুল, মান ওদাস্তো দামানে আলে রাসুল” অর্থাৎ হে খোদা, নবীর কন্যা ফাতেমার কলিজার টুকরাদের ওসিলায় কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ যেন আমার জীবনের শেষ কথা হয়। এ মোনাজাত কবুল কর বা না কর সে তোমার মর্জি মাওলা। আমি দুহাতে আঁকড়ে ধরেছি আহলে বাইতের নাজাত রজ্জু। (হাফেজ্জী হুজুরের ‘শেষ ওসিয়ত নামক গ্রন্থের ২য় পূ. দ্র.)।
হযরত মাওলানা ফজলুর রহমান ‘ইরশাদে রহমানী’ গ্রন্থে ৫৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “জো মহররমমে ইমাম হোসাইন কা জিকির করতে হ্যায় হাসান-হোসাইন কহতে হ্যায়, হযরত হোসাইন (আ.) উনসে খোশ হোতে হে” অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহররমে ইমাম হোসাইনের স্মরণে জিকির করে ‘হাসান-হোসাইন’ বলে উচ্চারণ করে হোসাইন (আ.) তার উপর সন্তুষ্ট থাকেন। “জিকরু আলীয়িন ইবাদাতুন, হুব্বুন আলিয়িন ইবাদাতুন” (তাফসিরে মাজহারী, ৪র্থ খণ্ড) অর্থাৎ মাওলা আলীর জিকির ও ভালবাসা ইবাদত।
সূত্র- নিয়ামতের খোদা আহলে বাইতে মোস্তফা।