মাওলা আলী যেকারণে খেলাফতের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন নাই

মাওলা আলী যেকারণে খেলাফতের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন নাই

ধর্ম জোর জবরদস্তির বিষয় নয়। ইহা মনের ব্যাপার। আল্লাহ এবং তাঁহার রাসুল ইচ্ছা করিলেই সকল লোকদিগকে ধর্ম বিশ্বাসী বানাইতে পারেন না। মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দান করিবার পর আল্লাহ ইচ্ছা করিলেই কোন লোককে হেদায়েত দান করিতে পারেন না, যদি সে উহা গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক না হয়। বিশ্বাস করিয়া নবীর নির্দেশিত পথে চলিতে চাহিলে মানুষকে হেদায়েত দানা করা আল্লাহ এবং রাসুলের কাজ।
নবীদের অমান্য করা মানুষের সাধারণ স্বভাব। নবী আ. ইচ্ছা করিলে অবশ্য পাথরের জবাব পাথরের দ্বারা দিতে পারিতেন। যেমনঃ বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি নানারূপে নৈসর্গিক বিপর্যয় আনিয়াও মানুষকে শাস্তি দিতে পারিতেন এবং আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে তাহা দিয়াও আসিয়াছেন। উহা দ্বারা পাপীর শাস্তি হইতে পারে কিন্তু হেদায়েত হয় না।

আলী আ. নবীর আ. প্রকৃত অনুসারী। তাই তিনিও নবীর (আ.) মতই অন্যায় অবিচার এবং ধর্ম বিরোধিতা বরদাস্ত করিয়া গেলেন। ব্যক্তিগত স্বার্থে কাহারও উপর হাত উঠাইলেন না। তাঁহার গলায় দড়ি দিয়া তাঁহাকে খলিফার নিকট আনা হইয়াছিল। ইহার প্রতিবাদে তিনি ইসলামকে রক্ষা করার খাতিরেই জুলফিকার চালনা করেন নাই। জনগণের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে সত্য ধর্মে দীক্ষিত করিয়া লইবার সুযোগের অপেক্ষায় থাকিলেন।

ইহার ফলে বহু লোক পরবর্তীকালে তাঁহার আদর্শের সমর্থক হইলেন বটে বিরাট জনতার তুলনায় তাহাও ছিল অতি নগন্য। অন্যায়ের সমর্থকগণই বিপুল পরিমাণে সংখ্যাধিক রহিয়াই গেল। এইজন্যই সত্য আর কখনও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জয়ী হইয়া উঠিতে পারিল না। মাওলা আততায়ীর হাতে শাহাদত বরণ করিলেন এবং তাঁহার বংশধরগণ কারবালায় প্রায় শেষ হইয়া গেলেন। কারবালায় সত্যের সমাধি রচিত হইল। হোসাইন আ. কারবালায় শিক্ষামূলক যে আদর্শের প্রতিষ্ঠা করিয়া গেলেন তাহার সঠিক মর্যাদা মুসলমানগণ কোনকালেই আর দিতে পারে নাই।

তথ্যসূত্র: (মাওলার অভিষেক: সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী)