ধ‍্যান সাধনা বা মোরাকাবা মোশাহেদা

ধ‍্যান সাধনা বা মোরাকাবা মোশাহেদা

হজরত মুসা (আ.) তুর পর্বতে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় আল্লাহর নুর দর্শন করলেন। দর্শনের ভেতর কমবেশি গভীরতা-অগীরতা থাকতে পারে, কিন্তু সামান্য দর্শনটিকেও তাে দর্শনই বলতে হবে। মহানবী (সঃ) যেমন পর্বতের হেরাগুহায় ধ্যান সাধনাটি করেছেন সে রকম হিন্দুধর্মের অনেক যােগীর কৈলাস পর্বত, হিমালয়ের আশেপাশে এবং আরও অন্যান্য পর্বতে ধ্যানসাধনার কথাটি জানতে পারি।

তা হলে দেখতে পাচ্ছি যে, এলমে লাদুনি হাসেল করতে হলে নির্জন স্থান ও পরিবেশের প্রয়ােজন। যেখানে পাহাড়-পর্বত নাই তাদের জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে? নির্জন পরিবেশে নির্জন ঘরে আপন পীরের দেওয়া ওজিফা ও ধ্যানসাধনার নিয়ম – কানুনগুলাে মেনে নিয়েই করতে হবে।

এই ধ্যানসাধনাটিকে সন্ন্যাস-ধর্ম মােটেই বলা যাবে না। কারণ বিবাহ করার বা না করার কোনাে বাধ্যবাধকতা নাই। অনেক অলী বিয়ে করেছেন, আবার অনেকে বিবাহ করেন নি। রোহবানিয়াতের মধ্যে বাধ্যবাধকতা থাকে বলেই বলা হয়েছে যে, ইসলামে রোহবানিয়াত নাই। কিন্তু মহানবী (সঃ) মােরাকাবার ধ্যানসাধনাটি করে সবাইকে দেখিয়ে গেছেন যে, এলমে লাদুনি হাসেল করতে হলে ধ্যান সাধনাটি অবশ্যকরণীয়।

তাই আমরা দেখি গাউস-কুতুব, আবদালরা মোরাকাবার মাধ্যমেই মােকাম হাসেল করতে পেরেছেন। আজকের জামানায় যেমন পীর-ফকিরদের নামের আগে অনেক স্থানে আলহাজ টাইটেলটি থাকে সে রকম সেই যুগে প্রায় পীর-ফকিরদের জীবনী পাঠ করলে বছরের পর বছর ধ্যানসাধনার নিরলস পরিশ্রম করার বিষয়টি জানতে পারি।

সুতরাং ঘুরে ফিরে বার বার একই কথা বলছি- বলছি এই কারণে যে,

কথার মধ্যে খােদা নাই ,
আর খােদার মধ্যে কথা নাই।
আছে কেবল দর্শন, ফানা, নির্বাণ, বাকা, স্থায়িত্ব ।

যখন আপনাকে আল্লাহর মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারবে আর আমি বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, তখনই তুমি সম্পূর্ণ থাকবে। এবং তখন তুমি দেহের মধ্যেও থাকতে পারাে, আবার দেহের বাহিরেও থাকতে পারাে।

মুজাদ্দেদে আলফেসানির পীর বাবা খাজা বাঁকি বিল্লাহ তাই নিজের জানাজা নিজেই পড়েছিলেন এবং এ রকম কথাটি বাবা শেখ ফরিদের ভাগিনা এবং অন্যতম প্রধান খলিফা হজরত আলাউদ্দিন কালিয়ার সাবেরিও বলে গেছেন। আসলে যত কথাই বলি না কেন, যারা মােরাকাবার ধ্যানসাধনাটি করবে না তাদেরকে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিতে বলেছেন প্রায় অলিরা। তবু একটি গালি দেবার প্রয়ােজন বােধ করেন নি। কারণ সবই যে তকদিরের খেলা। বাঘের তকদির মাংস ভক্ষণ আর হাতির তকদির সবজি ভক্ষণ। একজনের খাবার আরেকজনকে দিতে গেলেই দেখতে পাবেন যে, আস্তে করে মুখটি ফিরিয়ে নিয়েছে।

সুতরাং যারা করতে চাইবে তাদের জন্য বলে যান, লিখে যান, বিস্তারিত বুঝিয়ে দেন। দেখতে পাবেন তারা বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন এবং অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে সঠিক পথটি আপনিই বেছে নেবেন।

এলমে লাদুনির রাজ্যে প্রবেশ করলে আর কথা থাকে না। কারণ, খােদার মধ্যে কথা নাই। কারণ, প্রেমের গভীরে প্রবেশ করলে কথা বলতে চাইলে বলা যায় না। বলতে গেলে ভাষার ব্যাকরণটি আর থাকে না, তাই সমাজ গ্রহণ করে নিতে বড় বড় প্রশ্ন তােলে, জটিল যুক্তি প্রদর্শন করে ইত্যাদি।

বস্তুর বিজ্ঞানের কথাটি তুলে আরও বিভ্রান্ত, আরও জটিল করে তুলে ঘায়েল করতে চায়। তৃপ্তির মিটিমিটি হাসি তুলে ঘায়েল করতে চায়। তারা জানে না যে, বস্তুর বিজ্ঞানটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আত্মার বিজ্ঞানীরা কখনই বস্তুর বিজ্ঞানের বিরােধী নয়, বরং সহায়ক। আবার বস্তুর বিজ্ঞানটিও আত্মার বিজ্ঞানের সহায়ক এবং মােটেই বিরােধিতা করে না।

  • সুত্রঃ সুফিবাদ আত্মপরিচয়ের একমাত্র পথ (তৃতীয় খন্ড) [পৃষ্টা-২১৫]
  • লেখকঃ কালান্দার বাবা জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বরী রহঃ
আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel