রাষ্ট্র, ধর্ম ও দাসত্বের ছায়া (তৃতীয় পর্ব)
ধর্ম ও রাষ্ট্র: ইতিহাসের কূটচাল
ইতিহাস আমাদের চোখে কখনো আলো, আবার কখনো গভীর ছায়া ফেলে।
ধর্ম ও রাষ্ট্র—এই দুই শক্তি যুগে যুগে “পরস্পরকে ব্যবহার করেছে” নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে।
মধ্যযুগে ধর্মগুরু ছিল শাসকের আর্শীবাদদাতা।
ধর্ম বলতো—“রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি।”
আর রাজা বলতো—“ধর্ম মানো, নয়তো শাস্তি।”
এই চুক্তির মাধ্যমে একদিকে জন্ম নিলো “পবিত্র শাসন’”, অন্যদিকে জন্ম নিলো “চেতনার স্তব্ধতা”।
ইউরোপীয় উদাহরণ: চার্চ বনাম মুক্তচিন্তা
গ্যালিলিও যখন বললেন—পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, চার্চ বললো—এটা ঈশ্বরের অপমান।
ধর্মের নামে তাকে “বাকরুদ্ধ করা হলো”। তোমার ভাবো, একজন বিজ্ঞানীকে চুপ করিয়ে দেওয়া হলো, কারণ তার ‘চিন্তা’ উগ্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অস্থির করেছিল। এটাই ধর্মীয় কর্তৃত্বের প্রকৃত রূপ—যেখানে সত্য নয়, “স্বার্থ-ঘেঁষা ব্যাখ্যাই ঈশ্বরের ইচ্ছা” হয়ে ওঠে।
- যে রাষ্ট্রকে বলে—“তুমি আমার সেবক, আমার প্রভু নও।”
- যে জানে—বিধান মানে নিয়ম নয়, “ন্যায়”।
- যে বলে—“আমি যদি প্রশ্ন না করি, তবে আমি আর মানুষ নই।”
চূড়ান্ত মুক্তি: আত্মসচেতনতাই মুক্তির মূল
বন্ধু, এই মুক্তি কোন রাজা বা পুরোহিত দিয়ে যেতে পারবে না।
এই মুক্তি আসবে যখন আমরা নিজেরাই বুঝবো— ভক্তি মানে নিজেকে খুঁজে পাওয়া। আর বিধান মানে নিজের নীতিকে স্থাপন করা। এটাই সেই পথ, যেখানে ধর্ম আর রাষ্ট্র পরিণত হবে, বিভেদের দেয়াল নয়, বরং চেতনার সেতুতে।
ভয়ের রাজনীতি, নিয়ন্ত্রণের আইন
সবকিছুই জনগণের মনে প্রশ্ন না তোলার “একটি কৌশলগত খেলা”। যখন জনগণ প্রশ্ন করতে শুরু করে—শাসক তখন তৈরি করে “নতুন শত্রু”। ধর্মীয় বিদ্বেষ, রাষ্ট্রবিরোধী তকমা, কিংবা নৈতিক ভ্রষ্টতার দোহাই দিয়ে “প্রশ্ন করাকে অপরাধে পরিণত করা হয়।
আরো একবার সেই শৃঙ্খলের গল্প
তাই বলা যায়- ধর্ম ও রাষ্ট্রের এই যুগপৎ সংমিশ্রণ মানুষের ভেতর থেকে “নিজস্ব অনুভব ও উপলব্ধিকে অপসারিত করে দেয়”।
এ যেন এক বন্দি সময়- যেখানে
- ভক্তির নামে ভয়,
- বিধানের নামে বশ্যতা,
- আর ধর্মের নামে নিরবতা চাপিয়ে দেওয়া হয়।
আলোকবর্তিকা: চেতনাজাগরণের সূচনা
দাসত্ব থেকে মুক্তি কেবল বাহ্যিক বিপ্লবে আসে না— আসে অন্তর্জাগরণে, এক গভীর উপলব্ধিতে, যেখানে মানুষ নিজেকে চিনতে শেখে।
যেখানে সে প্রশ্ন করে—
- “এই নিয়ম কার জন্য?”
- “এই বিশ্বাস কোথা থেকে এলো?”
- “এই ভক্তি কি আমার হৃদয়ের?”
- নাকি “কে যেন আমাকে এটা শিখিয়েছে—নির্বিচারে মেনে নিতে?”
এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নেয় “বোধের আলো”। আর এখান থেকেই শুরু হয় ভেতরের বিপ্লব।
ভক্তি পুনরুদ্ধার: হৃদয়ের সাধনায়
ধর্মের আসল সৌন্দর্য ছিল চুপচাপ থাকা, একটি গাছের নিচে বসে অনুভব করা, একটি ফুলের ওপরে শিশির দেখে ঈশ্বরকে খুঁজে ফেলা। ভক্তি ছিল নিজেকে উপলব্ধি করার সাধনা—কোনো ‘ব্যাখ্যা মেনে চলা’র নয়।
তাই ভক্তি ফিরিয়ে আনতে হলে দরকার-
- ভয়ের নয়, ভালোবাসার ঈশ্বর
- বিধানের নয়, উপলব্ধির পথ
- নিঃশর্ত আনুগত্য নয়, আত্মসংলাপ
রাষ্ট্রের মুখোমুখি: সাহসী চেতনার কথা
রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করতে হলে আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে হয়—
- “আমি কি কেবল একজন করদাতা?”
- “আমি কি শুধু একজন ভোটার?”
না, আমি “একজন মানুষ”—যার চিন্তা, যুক্তি, ভালবাসা, প্রতিবাদ আছে। প্রকৃত নাগরিক সেই,
চলবে..
– ফরহাদ ইবনে রেহান
ভক্তি ও বিধানের অন্তঃসার
অধ্যায় ৩: রাষ্ট্র, ধর্ম ও দাসত্বের ছায়া (তৃতীয় পর্ব)