নবীজির মিরাজের সঠিক ব্যাখ্যা
নবী পাক (সা.) এর মিরাজ, নামাজ ও সিনাচাক সম্পর্কে আলোকপাত:
আমার সুন্নি ভাইয়েরা নবী পাক (সা.) – কে সাত আসমানের উপর নিয়ে মিরাজ করান। অথচ তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফি-রোজ মিরাজ করেন। নবী মিরাজ করতে বোরাক লাগে, রফরফ লাগে ও জিবরাইলের সহযোগিতা লাগে। কিন্তু আমার মাননীয় সুন্নি ভাইদের ওইসব কিছুই লাগে না।
আমার মাননীয় সুন্নি ভাইয়েরা আরো বলেন, নবী মিরাজে গিয়ে নামাজ নিয়ে আসছেন, আর আমরা নামাজ পড়ে মিরাজ করব? নবী পাক মিরাজে গিয়ে নামাজ নিয়ে আসছেন, আর আমরা সুন্নিরা নামাজ পড়ে মিরাজে যাব? এটাও কি সম্ভব? নবী পাক ( সা.) মিরাজ যাওয়ার আগে তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছিলো না, তাহলে নবী পাক (সা.) কোন কর্ম করে মিরাজ করেন? মিরাজে কি নবীপাক গেছেন নাকি আল্লাহ নিয়ে গেছেন? নাকি নবীর নিকট আল্লাহ স্বয়ং আসলেন? নাকি নবীই স্বয়ং মিরাজ? নাকি তিনি আসছেন মিরাজ করিয়ে দিতে?
মিরাজ মানে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা, আল্লাহর দীদার। আল্লাহ কোরানে বলছে আমি এবং রাসুল এক। আলাদা আলাদা চিন্তা করলেই কাফের। ইমামে আহলে সুন্নাহ ইমাম আহমেদ রেজাখান বেরলভী তিনি বলেন ” কানজুল ঈমান” নামক তাফসিরে আল্লাহর সাথে রাসুলকে মিলানোর নামই ঈমান। আল্লহ এবং রাসুল আলাদা নয় বরং অভিন্ন।
মাননীয় সুন্নি ভাইয়েরা হাদিসের সনদ দিয়ে বলেন “আস সালাতু মিরাজুল মুমিনিন” অর্থাৎ সালাত হল মুমিনের মিরাজ। মুমিন হতে গেলে মিরাজ লাগবে, আর মিরাজ করতে গেলে সালাত লাগবে। প্রিয় সুন্নি ভাইয়েরা আমাদের সালাত করতে গেলে কি লাগবে?
- নবী কোন সালাত করে মিরাজ করলেন?
- এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কি নবীপাক (সা.) মিরাজ করলেন?
- তাহলে প্রাচীনকালের নবী রসুলগণ কিভাবে মিরাজ করেছেন?
- তারা তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন নি।
আপনারা বলেন নবীপাক ৫২ বছর বয়সে আল্লাহর ইচ্ছায় মিরাজ করেন। অথচ আল কোরান নাজিল হয় নবী পাকের ৪০ বছর বয়স থেকে। নবীপাকের ২৩ বছরের নবুওয়তি জিন্দেগির মধ্যে ১২ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। সালাতের ৮২টি আয়াতগুলোর মধ্যে ৩৯ টি মাক্কি সুরার আয়াত নাজিল হয়ে গেছে। সুরা বনি ইজরাইলও মাক্কি সুরার অন্তর্ভুক্ত।
এই নবুয়তের ১২ বছর নবী এবং তাঁর অনুসারীগণ কি নামাজ ছাড়া ছিলো? এই পাঁচ ওয়াক্ত নমাজের ফিরিস্তি আমরা পাই মদিনাতে। মক্কাতে সালাতের আয়াত ৩৯ টি নাজিল হয়ে গেল, তখনও তিনি মিরাজ করেন নি। আবার তিনি জন্মের আগেই নবী। অথচ আমার সুন্নি ভাইগণ! আপনারা বলেন কি আর আপনাদের যন্ত্রে বাজে কি?
কিন্তু নবীপাক ( সা.) মিরাজ থেকে আল্লাহর দেওয়া উপহার স্বরূপ ৫০ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে আসলেন, আবার হযরত মুসা নবীর অনুরোধে নবীপাক (সা.)- ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নিয়ে আসলেন। আবার নবী হলেন ইমামুল আম্বিয়া, তিনি সকল নবীদের ইমাম। নবী শব্দের বহুবচন হল আম্বিয়া। তিনি মসজিদুল আকসা গিয়ে সকল নবীদেরকে জড়ো করে তিনি নামাজের ইমামতি করেন। আর সকল নবীগণ হলেন মুসল্লি।
এই ইমামতি কিন্তু আসমানে করেন নাই, এই ইমামতি করেন ফিলিস্তিনের মসজিুল আকসাতে। এই ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসাতে ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী ও রাসুলের নামাজের ইমামতি করেন নবীপাক (সা.)। এই নামাজের ইমামতি করে আল্লাহর পক্ষ থেকে আবার ৫০ ওয়াক্ত নামাজ নাজরানা নিয়ে আসছেন? চিন্তা করা যায়!
আরেকটু গভীরে প্রবেশ করি মাননীয় সুন্নি আলেমরা কিন্তু সিনাচাক ছাড়াই মিরাজ করে ফেলেন। অথচ নবী পাককে মিরাজ করানোর আগে সিনাচাক করানো হল । সিনাচাক হলো বক্ষ বিদীর্ণকরণ তথা ওপেন হার্ড সার্জারী।
কেন বক্ষ বিদীর্ণ করতে হল? নবীপাকের অন্তরে শয়তানের অংশ ছিলো। তাই সিনাচাক করতে হল। নিসাচাক করে নবীর অন্তর থেকে নাপাক জিনিস বের করে তাকে আবে জমজমের পানি দিয়ে ধৌত করে পবিত্র করা হয়। ফেরেস্তা জিবরাইল সিনাচাকের মাধ্যমে নবীর অন্তর থেকে কলুষিত অংশ পরিষ্কার করে, নবীকে পাককে পবিত্র করে মিরাজের উপযুক্ত করে তুলেন।
মিরাজ করতে গিয়ে আমার সুন্নি ভাইদের সিনাচাক লাগে না অথচ নবীপাকের সিনাচাক করতে হলো? মাননীয় সুন্নি আলেম ভাইদের বলছি আপনারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মিরাজ করেন, অবশ্যই নামাজ পড়া অনেক সাওয়াবের কাজ। কিন্তু মিরাজের আগে তো সিনাচাক করতে হয়, আপনাদের এই সিনাচাক কোন ফেরেস্তা এসে করে যান?
কোনো সুন্নি আলেম তো আজ পর্যন্ত বলেন নাই আমার সিনাচাক হয়েছে। অমুক ফেরেস্তা এসে আমাকে চিৎ করে ধরে, চ্যাংদোলা করে আমার বুক চিরে নাপাকি জিনিস বের দিয়েছে, এই যে দেখেন আমার বুক অপারেশনের চিহ্ন। আপনারাই বলেন, নবীর সিনাচাকের চিহ্ন সাহাবিরা সুস্পষ্ট দেখতে পেতেন। মিরাজ না হলে আমরা সুন্নি ভাইয়েরা মুমিন হবেন না, মিরাজ করতে হলে সালাত লাগবো, সালাতের আগে সিনাচাক লাগবে?
নবীর সিনাচাক জিবরাইল ফিরিস্তা এসে করলেন, এখন আমার সুন্নি ভাইদের সিনাচাক কোন ফেরেস্তা এসে করবে। আমি জানতে চাই। আমি সত্য চাই, সাইনবোর্ড নিয়ে আর ঘুরতে চাই না। বিবেককে ফাঁকি না দিয়ে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন। আপনাদের জবাবের আশায় জাতি রইল।
নিবেদক :
আর এফ রাসেল আহমেদ ওয়ার্সী