হোমপেজ ইলমে মারেফত ভজন-সাধন নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

ভজন-সাধন নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

688

ভজন-সাধন নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

ভজন ও সাধন শব্দ দুটির শাব্দিক অর্থ এক রকম হলেও এই দুইটির মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। ভজন মানে হল এমন দাসত্ব, যার দ্বারা প্রভু বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনো উপকার লাভ করে থাকে দাস হতে। আর সাধন তথা সাধনা হল এমন কর্ম যার ফলাফল শুধু সাধক একাই ভোগ করেন, এতে যার সাধনা করা হয় তার কোনো উপকার করা হয় না বাহ্যিক দৃষ্টিতে। অর্থাৎ ভজন করতে হয় শরীরের সামর্থ শক্তি প্রয়োগ করে, যেমনঃ গুরুর সেবা যত্ন করা, গুরুর বাড়ির গোলামী করা, কোনো ব্যক্তির সেবা করা বা সাহায্য করা। আর সাধনার উদারহরন হল, গুরু ধ্যান করা বা মোরাকাবা মোশাহেদা করা, জ্বিকির করা ইত্যাদি যে কাজ গুলোতে শারিরীক পরিশ্রম হয় না।

প্রথমে ভজনা করতে হয়, পরে সাধনা। কারন গুরুর সেবা করে তাকে সন্তুষ্ট করলেই সে এমন কোনো কর্ম শিক্ষা দেয়, যার ফলে ভক্ত সেটা ঘরে বসে বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বা সব সময় সেই কর্ম করতে পারে প্রভু লাভ করার জন্য। অধিকাংশ সাধকই তাদের গানে সাধনার আগে ভজনার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন লালন সাঁইজি বলেছেন “নাই আমার ভজন-সাধন/ চিরদিন কুপথে গমন।”

ভজন সাধনের উদারহরন দিতে গিয়ে আরেকটা বিষয় বলতে পারি যে, পীরের দরবারে গিয়ে কাজ কর্ম করাটা হল ভজন, দরবারের মাহফিলে যাওয়া, দরবারে অর্থ বা অন্য কিছু দান করা এইসব হল ভজন এর আয়তায় পরে। আর সাধনা হইলো গুরু এইসবইসব কাজে কর্মে সন্তুষ্ট হয়ে ভক্তদের অনেক সময় অজীফা দিয়ে থাকেন, বা বিভিন্ন জ্বিকির দিয়ে থাকেন, বা মোরাকাবা মোশাহেদা বা ধ্যান করার পদ্ধতি বা দম সাধনা ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে থাকেন, যে কর্ম গুলো দরবার থেকে ফিরে এসে বাসায় নিয়মিত করতে হয় আল্লাহকে লাভ করার জন্য, সেই কর্ম গুলোই সাধনার আয়তায় পরে।

ভজনে সন্তুষ্ট হলেই গুরু সাধনা পদ্ধতি প্রদান করেন ভক্তকে। যে যত বেশি ভজন করেন, গুরু তার প্রতি ততবেশি সন্তুষ্ট হন এবং উচ্চতর সাধনা ও জ্ঞান দান করেন । বিভিন্ন ওলীদের জীবনেও দেখা যায় যে পীরের দরবারে বছর বছর গোলামীর পর গুরুর সন্তুষ্টি অর্জন করে গুরুর কাছ থেকে সাধন কর্ম পদ্ধতি শিক্ষা লাভ করার পর বনে জঙ্গলে গিয়ে একাকী সাধনা করে ওলীয়তী প্রাপ্ত হয়েছেন।

গুরু ভজনা না করে যারা ঘরে বসে সাধনা বা ধ্যান কর্ম করে প্রভুকে লাভ করতে চায়, তারা কখনোই আল্লাহকে লাভ করতে পারে না। বর্তমানে বিভিন্ন দরবারে এই বিষয়টা দেখা যায় যে, তারা জীবনেও গুরু ভজন করে না, কিন্তু দরবার থেকে ওজীফা শিক্ষা করে নিয়ে ঐগুলোই তপ জপ বা সাধনা করতে থাকে। কিন্তু এরা জানেই না যে, গুরু ভজনা না করলে ঘরে বসে চোখ বন্ধ করে দয়াল দয়াল করে ধ্যান করলে তাতে কখনোই দয়ালকে লাভ করা যায় না।

লেখাঃ DM Rahat