আপনার বিশ্বাসই আপনার শক্তি
আপনার বিশ্বাসই আপনার শক্তি, আপনার বিশ্বাসই আপনার শিকল, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা কিছু বিশ্বাস বহন করি। কখনো এই বিশ্বাস আমাদের উড়তে শেখায়, আবার কখনো এই বিশ্বাসই আমাদের পেছনে টেনে ধরে।
অতীতের কোনো কষ্ট, কোনো ব্যর্থতা, বা কারো কটু কথা হয়তো আপনার মনে এমন একটি বিশ্বাস জন্ম দিয়েছে, যা আজ আপনাকে সামনে এগোতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার মনের এই বিশ্বাসগুলো পাথরে খোদাই করা নয়। আপনার হাতে আছে সেগুলো বদলে ফেলার ক্ষমতা।
অতীতের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসুন-
ধরুন, আপনি একবার ভালোবেসে হতাশ হয়েছেন। কেউ আপনার ভালোবাসার মর্যাদা রাখেনি। তখন থেকে আপনি বিশ্বাস করেছেন, “ভালোবাসা মানেই কষ্ট, সবাই শুধু স্বার্থপর।” এই বিশ্বাসের কারণে আপনি নতুন সম্পর্ক গড়তে ভয় পান। মানুষের সাথে হৃদয়ের সেতু বাঁধতে দ্বিধা করেন। কিন্তু ভেবে দেখুন, পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা আন্তরিকভাবে ভালোবাসে, যারা আপনার হৃদয়ের মূল্য বোঝে। একটি বা দুটি খারাপ অভিজ্ঞতার জন্য সবাইকে একই তুলিতে রাঙিয়ে ফেললে, আপনি নিজেই নিজের সম্ভাবনার দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। একটি কথা, একটি বিশ্বাস, একটি বাধা ধরুন, ছোটবেলায় আপনি একবার গণিতে খারাপ ফল করেছিলেন।
শিক্ষক বা বন্ধুরা হয়তো বলেছিল, “তুমি গণিতে দুর্বল, এটা তোমার জন্য নয়।” আপনার মন সেই কথাটিকে গ্রহণ করেছে। আজও আপনি গণিতের কোনো সমস্যা দেখলেই ভাবেন, “আমার দ্বারা এটা হবে না।” কিন্তু সত্যিটা কী? গণিত বা যেকোনো বিষয়ে দক্ষতা আসে অনুশীলনের মাধ্যমে। প্রথম দিন থেকেই কেউ পারফেক্ট হয় না। আপনি যদি এই বিশ্বাস ভাঙেন, নতুন করে শুরু করেন, তাহলে দেখবেন, আপনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে অসাধারণ সম্ভাবনা।
ব্যর্থতা নয়, শিক্ষা ধরুন, আপনি একটি স্বপ্নের প্রকল্প শুরু করেছিলেন। অনেক আশা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়েছে। হয়তো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, হয়তো সময় নষ্ট হয়েছে। তখন আপনার মনে গেঁথে গেছে, “আমি ব্যর্থ, আমার দ্বারা কিছু হবে না।” কিন্তু একটু থামুন। ব্যর্থতা কি সত্যিই শেষ কথা? পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষেরা তাদের জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। তারা ব্যর্থতাকে শিক্ষা হিসেবে নিয়েছেন, নতুন পথ খুঁজেছেন। আপনার প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে বলে আপনি ব্যর্থ নন। আপনার ভুলগুলো বিশ্লেষণ করুন, শিক্ষা নিন, এবং নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান।
নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করুন-
ধরুন, আপনি একবার একটি গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। আপনার গলা কেঁপে গিয়েছিল, হয়তো জুরিরা হেসেছিল। তখন থেকে আপনি বিশ্বাস করেছেন, “আমি গান গাইতে পারি না।” কিন্তু সত্যিটা হলো, গান শেখা একটি দক্ষতা। অনুশীলন, প্রশিক্ষণ, আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে আপনি আপনার কণ্ঠকে উন্নত করতে পারেন। প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হওয়া মানে চিরকাল ব্যর্থ থাকা নয়। নিজেকে একটি নতুন সুযোগ দিন
ইতিবাচকতার শক্তি আপনার মন একটি বাগান-
আপনি যে বীজ বপন করবেন, তাই ফলবে। নেতিবাচক বিশ্বাসের বীজ বপন করলে সেখানে হতাশা আর ব্যর্থতার গাছ জন্মাবে। কিন্তু ইতিবাচক বিশ্বাসের বীজ বপন করলে সেখানে আশা, সম্ভাবনা, আর সাফল্যের ফুল ফুটবে। প্রতিদিন সকালে নিজেকে বলুন, “আমি পারব। আমার মধ্যে অসীম সম্ভাবনা আছে।” ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন। প্রতিটি সাফল্য, যতই ছোট হোক, আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
আজই শুরু করুন-
অতীতের কষ্ট, ব্যর্থতা, বা নেতিবাচক কথাগুলো আপনাকে আর বেঁধে রাখতে পারবে না, যদি আপনি সিদ্ধান্ত নেন। আজই সেই বিশ্বাসগুলোকে চ্যালেঞ্জ করুন। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, “এই বিশ্বাস কি আমাকে সামনে এগোতে সাহায্য করছে, নাকি পেছনে টানছে?” যদি তা আপনার ক্ষতি করে, তবে তাকে বিদায় দিন। নতুন বিশ্বাস গড়ুন। নিজের প্রতি ভালোবাসা, আত্মবিশ্বাস, আর ইতিবাচকতার পথে হাঁটুন।আপনি যা ভাবেন, তাই হয়ে ওঠেন। তাই ভাবুন, আপনি শক্তিশালী, আপনি সফল, আপনি অসাধারণ। পৃথিবী আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা, তিনি আপনাকে নিজের সেরা সংস্করণ হতে সাহায্য করুন।
– ফরহাদ ইবনে রেহান