হোমপেজ মিলাদ-কিয়াম সংক্রান্ত মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-১

মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-১

মিলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা

মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে আলোচনা পর্ব-১

পর্ব-১

আল্লাহ তায়ালা বলেন “হে আমার প্রিয় রাসুল! আঁপনি স্মরণ করূন ঐ দিনের কথা,যখন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীগন থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এ কথার উপর যে, যখন আঁমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরন করবো; তারপর তোমাদের কাছে আঁমার মহান রাসূল যাবেন এবং তোমাদের নবু্য়্যত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ বলেন তোমরা কি এসব কথার উপর অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আঁমার ওয়াদা গ্রহন করে নিয়েছ (তখন) তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, আঁমরা অঙ্গিকার করছি।

আল্লাহ বলেন তাহলে তোমরা পরস্পর সাক্ষি থাক। আর আঁমি ও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম। অত:পর যে কোন লোক এই অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে- সেই নাফরমান বা কাফের হবে।”
[সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৮১-৮২]

ব্যাখ্যা:

রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়া কেরামগনকে নিয়ে আল্লাহ তায়ালা এই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন। এই মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা। তিঁনি নিজে ছিলেন মীরে মাজলিস বা সভাপতি। সকল নবীগন ছিলেন শ্রোতা বা ঐ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া দর্শক। আর সেটাই ছিল সর্বপ্রথম ঈদে মিলাদুন্নবী বা নূর নবীজির শুভ আগমনের খুশি উদযাপন। ঐ মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেলাদাত শরীফ বা শুভ আগমন, শান-শওকত ও মান-মর্যাদা(মোট কথা রাসূলের শুভ আগমন, সম্মান ও স্বীকৃতি দান ইত্যাদি প্রসংগে অন্যান্য নবীগনের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা।

নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল সর্বপ্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।সুতরাং মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত বা তরিকা। ঐ মজলিসে সমস্ত আম্বিয়া কেরামগন ও উপস্থিত ছিলেন।ঐ মজলিসে স্বয়ং আল্লাহ পাক নবীজীর শুভ আবির্ভাব বা মিলাদের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। সে দিন সিরাতুন্নবীর উপর কোন আলোচনা হয়নি। সমস্ত নবীগন খোদার দরবারে দাঁড়ানো অবস্থায় মিলাদ শুনেছেন এবং কিয়াম করেছেন। কেননা খোদার দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই। পরিবেশটি ছিল অত্যান্ত আদবের। মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং কিয়াম কারীগন ছিলেন আম্বিয়ায়ে কেরামগন।

এই মিলাদ ও কিয়াম কোরআনের “ইকতেদো উন নস” দ্বারা প্রমানিত হলো: উল্লেখ্য যে কোরআনে মাজিদের “নস” চার প্রকার যথা: ইবারত, দালালত, ইশারা ও ইক্কতিজা। উক্ত চার প্রকার দ্বারাই দলিল সাবেত হয়। [নুরূল আনওয়ার দেখুন]

(ক.) ইবারতের দ্বারা প্রমানিত হয়েছে অঙ্গীকার।
(খ.) দালালতের দ্বারা নবীগনের মাহফিল
(গ.) ইশারার দ্বারা মিলাদ বা শুভ আবির্ভাব
(ঘ.) ইক্কতিজা দ্বারা কিয়াম করা প্রমানিত হয়েছে ।

তাই মিলাদুন্নবীর বা নবিজির শুভ আগমনের বা শুভ তাশরীফের মাহফিলও কিয়াম করা নবীগনের সম্মিলিত সুন্নাত ও ইজামায়ে আম্বিয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।

উক্ত দুটি আয়াতের মধ্যে নবী করিম (দরুদ) এঁর ব্যাপারে ১০ টি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।যথা :

(১.) এই ঐতিহাসিক মিলাদ সম্মেলনের ঘটনাবলীর প্রতি রাসুলে করিম সাঃ এঁর দৃষ্টি আকর্ষণ। যেহেতু নবী করিম সাঃ ঐ সময়ে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। [যেমন:আল্লাহ তায়ালা বলেন “হে প্রিয় রাসুল ! আঁপনি স্মরণ করূন ঐ দিনের কথা]

(২.) আল্লাহ কর্তৃক অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামের নিকট থেকে নবীজীর শানে অঙ্গীকার আদায়।

(৩.) নবীগনের রাজত্বকালে বা এমনকি তাঁদের নবুয়্যতকালীন সময়ে যদি এই মহান নবীর আগমন হয়, তখন ও নবীজীর উপর ঈমান আনতে হবে।

(৪.) তাঁর আগমন হবে অন্যান্য নবীগনেরর সত্যতার দলীল স্বরূপ।

(৫.) ঐ সময়ে নবীগনের নবুয়্যত স্থগিত রেখে-নবীজীর উপর ঈমান আনয়ন করতে হবে।

(৬.) নবীজীকে সর্বাবস্থায় পূর্ন সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার আদায়। জীবনের বিনিময়ে এই সাহায্য হতে হবে নি:শর্তভাবে।

(৭.) নবীগনের স্বীকৃতি প্রদান।

(৮.) পরস্পর সাক্ষী হওয়া।

(৯.) সকলের উপরে আল্লাহ মহাসাক্ষী

(১০.) ওয়াদা ভঙ্গের পরিনাম হবে নাফরমান ও কাফের। এখানে নবীগনের উম্মত তথা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের পরিনতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা নবীগনের অস্বীকারের প্রশ্নই উঠে না।

নিম্নে আরো কিছু দলিল উপস্থাপন করে হলো:

নবিজির শুভ আগমনের দিন শয়তান ব্যতীত সবাই খুশি হয়েছিল।যেমন: হাদিসে ইরশাদ হয়েছে। আবু রবি ইবনে সালিম বলেন,বাক্বি ইবনে মাখলাদ তাঁর তাফসিরে লেখেন,নিশ্চয়ই ইবলিশ চারবার বড় আওয়াজে চিৎকার করেছে।একবার যখন তাকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। আরেকবার যখন তাকে দুনিয়ায় নামানো হয়েছে। আরেকবার যখন মহানবী ﷺ পৃথিবীতে আগমন করেছেন।আরেকবার যখন সুরা ফাতিহা অবতীর্ণ করেছেন।
[উইনুল আছার,১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ৩৪]

অপর বর্ননায় এসেছে। শয়তান চারবার উচ্ছস্বরে কেঁদেছিল।যখন আল্লাহ তাআলা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন, যখন তাকে বেহেশত থেকে বের করে দেওয়া হয়,যখন রাসূল ﷺ এঁর পবিত্র বেলাদত তথা ধরাধামে শুভ আগমন হয় এবং যখন সূরা ফাতেহা নাযিল হয়।
[ইবনে কাসীর কৃত আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া,২য় খন্ড,১৬৬পৃঃ]

সিরাতুন্নবী সাঃ আমরা ও মানি। এখন প্রশ্ন হল, নবীজি যদি আমাদের মাঝে শুভ আগমন বা শুভ তাশরীফ না আনতেন, তাহলে আমরা কি সিরাত তথা সিরাতুন্নবী সাঃ পেতাম? না তা সম্ভব হত না।

সিরাত আমল করার বিষয় বা অনুসরণ করার বিষয়। যার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন। আর মিলাদ বা শুভ আগমন হল উদযাপন করার বিষয়। আমরা যখন মিলাদুন্নবীর বা নূর নবিজী শুভ আগমন স্মরনে মিলাদ মাহফিল করি তখন কি আমরা নবিজীর সিরাত মোবারক তথা সিরাতুন্নবী সাঃ আলোচনা করি না। হ্যাঁ অবশ্যই আলোচনা করি।

এজন্যই আমরা বলি মিলাদুন্নবীর বা নুর নবিজী শুভ আগমন স্মরনে যে মিলাদ মাহফিল করি তখন ঐ মাহফিলে সিরাতুন্নবী সাঃ ও আলোচনা করা হয়। কিন্তু সিরাতুন্নবী সাঃ আলোচনা করলে মিলাদুন্নবী সাঃ বা নুর নবিজীর শুভ আগমন এটাকে অস্বীকার করা হয়। সহজ কথা হল মিলাদ বা বেলাদত যার, সিরাত ও তিঁনার।একটি মানবেন, আরেকটি মানবেন না।তাহলে তো ঈমান থাকবে না, যার মানে হল কাফের।রাসূল ﷺ হলেন স্বয়ং শরীয়ত।রাসূল না আসলে আমরা কি শরীয়ত পেতাম?না কখনো নয়।রাসূল শরীয়ত তার প্রমান হল মাক্কী সূরা ও মাদানী সূরা নাম করন এবং দীর্ঘ সময়কাল ব্যাপী আলাদা আলাদা করে কোরআন নাযিল হওয়া।কেননা অন্যান্য নবীগনের উপর একত্রে কিতাব নাযিল হয়েছে কিন্তু রাসুলের বেলায় তা হয়নি।

আবার হয়ত অনেকে বলবেন এদিনে তো রাসূল সাঃ বাহ্যিকভাবে দুনিয়া থেকে পর্দা নিয়েছেন, সেটা তো আনন্দ না হয়ে শোক হওয়ার কথা সেটা আলোচনা করেন না কেন? ইনশাআল্লাহ ধারাবাহিকভাবে এব্যাপারেও আলোচনা করা হবে।

– কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন: সুন্নীয়তের নয়ন মনি অধ্যক্ষ এম এ জলিল (রহঃ), মিলাদ ও কিয়ামের বিধান।

আরো পড়ুনঃ ↓

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-১

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-২

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-৩

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-৪

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-৫