মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-২

মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে আলোচনা পর্ব-২

পর্ব-২

১.
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর প্রিয় কণ্যা ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা পরষ্পরের প্রতি সম্মান ও অনুরাগ প্রকাশের ক্ষেত্রে ক্বিয়াম করতেন।

হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আরো বর্ণনা করেন, কথা বার্তায়, উঠা-বসায় ফাতিমার চেয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যশীল আর কেউ ছিলেন না।নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁকে আসতে দেখতেন তখন তিঁনি তাঁকে খোশ-আমদেদ জানাতেন,তাঁর জন্য উঠে দাঁড়াতেন, তাঁকে চুম্বন করতেন।এমনকি হাত ধরে তাঁকে নিজের আসনে বসিয়ে দিতেন। অপর দিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকট গমন করলে তিঁনিও তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতেন এবং উঠে গিয়ে তাঁকে চুম্বন করতেন।
[বুখারী, হাদিস নং ৩৩৫৪, তিরমিযি, হাদিস নং ৩৮০৯, প্রাগুপ্ত, পৃ:৪২২]

২.
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং হযরত ইসমাইল (আঃ) যখন আল্লাহর ঘর তৈরী করতেছিলেন,তখন ইব্রাহীম (আঃ) উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদিদের মুসলমান হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা কিয়াম করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর আবির্ভাব বা শুভ আগমন আরবেও হযরত ইসমাইলের বংশে হওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করেছেন।

অর্থাৎ “হে আঁমার রব! আঁপনি এই আরব ভূমিতে আঁমার ইসমাইলের বংশের মধ্যে তাদের মধ্যে হতেই সেই মহান রাসূলকে প্রেরণ করেন-যিঁনি আয়াত আয়াত সমূহ তাদের কাছে পাঠ করে শুনাবেন, তাদেরকে কোরআন-সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্বিক
অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন।”
[সূরা আল বাকারা,আয়াত নং ১২৯]

হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ৪০০০ বৎসর পূর্বেই মুনাজাত আকারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর শুভ আবির্ভাব, রাসূলের সারা জিন্দেগীর কর্ম চাঞ্চল্য ও মানুষের আত্নার পরিশুদ্ধির ক্ষমতা বা রাসূলের ওসিলায় নাপাকি হতে মুক্ত হয়ে পরিশুদ্ধি লাভ বর্ননা করে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর বেলাদত শরীফ বা শুভ আগমনের সারাংশ পাঠ করেছেন তথা আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন। এই মুনাজাত বা মিলাদে মোস্তাফা সা: বা মিলাদুন্নবী (সা:) বা বেলাদত শরীফ বা শুভ আগমনের উদযাপন এবং রাসূলের আগমনী বার্তা তিঁনি দাঁড়ানো অবস্থায় করেছেন।ইবনে কাছির তাঁর বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন “দোয়া ইব্রাহিমু আলাইহি ওয়া সাল্লামু ওয়াহুয়া কায়েমুন” – অর্থাৎ উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান ছিলেন।

নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “আনা দুয়াওতু ইব্রাহীমা” আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়ার ফসল। যেমন: হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে।

عن العرباض بن سارية عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال : ” إني عند الله مكتوب : خاتم النبيين وإن آدم لمنجدل في طينته وسأخبركم بأول أمري دعوة إبراهيم وبشارة عيسى ورؤيا أمي التي رأت حين وضعتني وقد خرج لها نور أضاء لها منه قصور الشام ” . وراه في ” شرح السنة

“সাহাবী হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রাঃ) রাসূল সা: থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, আঁমি আল্লাহর নিকট শেষ নবী হিসেবে লিখিত ছিলাম যখন আদম (আঃ) কাদা মাটির মাঝে মিশ্রিত ছিল। আর অচিরেই আমি তোমাদেরকে আঁমার প্রথম অবস্থা সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। আঁমি হলাম ইব্রাহিম (আঃ) এঁর দোয়ার ফসল, ঈসা (আঃ) এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের ঐ দর্শন যেটা মা দেখেছিলেন যে, তিনি আঁমাকে ভূমিষ্ট (পৃথিবীতে আগমনের সময়ে) করেছেন এমতাবস্থায় তার থেকে একটি নূর বের হলো যা তার সামনে সিরিয়ার প্রাসাদ সমূহকে আলোকিতা করেছিল।
[শরহুস সুন্নাহ লিল বাগাভী, মেশকাত- ৫৭৫৯]

– নাসিরুদ্দীন আলবানী উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

বর্তমান মিলাদ শরীফে রাসুলে পাঁকের শুভ আবির্ভাবের যে বর্ননা দেয়া হয় তা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়ার তুলনায় সামান্যতম অংশ মাত্র। সুতরাং আমরা যে মিলাদ শরিফ পাঠ ও কিয়াম করি হযরত ইব্রাহীম আলাহিস সালামেরই সুন্নাত।
[বেদায়া ও নেহায়া, ২য় খন্ড/২৬১ পৃষ্ঠা]

৩.
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পৃথিবীতে শুভ আগমনের ৫৭০ বৎসর পূর্বে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আবির্ভাব। তিনি তার উম্মত হাওয়ারী (বনি ইসরাইল) কে নিয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিলাদ শরীফ পাঠ করেছেন। তিনি তার উম্মতের কাছে আখেরী জামানার পয়গম্বর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম ও সানা সিফাত এবং আগমন বার্তা এভাবে বর্নণা করেছেন।

“হে আঁমার প্রিয় রাসুল! আঁপনি স্বরণ করে দেখুন ঐ সময়ের কথা যখন মরিয়ম তনয় হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেন “হে বনী ইসরাইল! আঁমি তোমাদের কাছে নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছি। আঁমি আঁমার পূর্ববর্তী তাওরাত কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং এমন এক মহান রাসুলের সুসংবাদ দিচ্ছি যিনি আঁমার পরে আগমন করবেন এবং তাঁর নাম হবে আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
[সুরা আছ-ছফ,আয়াত নং:৬]

লক্ষনীয়: হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর উম্মতদেরকে লক্ষ্য করে যে ভাষন দিয়েছেন। তা দাঁড়িয়েই দিয়েছেন।কেননা এটা ভাষনের সাধারন রীতি।

ইবনে কাছির বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে, ২৬১ পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন: “আখাতোবা ঈসা আলাইহিস সালামু উম্মাতাহুল হাওয়ারিইনা কায়েমা” অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান তথা কিয়াম অবস্থায় তাঁর উম্মৎ হাওয়ারীদেরকে নবীজীর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বক্তৃতা করেছেন।

সুতরাং মিলাদ ও কিয়াম হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর সুন্নাত এবং নবীযুগের ৫৭০ বৎসর পূর্ব হতেই। [বেদায়া ও নেহায়া]

৪.
হযরত নোবাইহাতা ইবনে ওহাব রাহিমহুল্লাহ আলাইহি তাবেয়ী হতে বর্নিত; একদিন হযরত কা’ব আহবার (তাবেয়ী) হযরত আয়েশা রাদ্বি আল্লাহু তালা আনহার খেদমতে উপস্থিত হলেন, অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম তথা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে- মানে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে লাগলেন।

হযরত কা’ব (রঃ) বললেন: এমন কোন দিন উদয় হয়না-যে দিনে ৭০ হাজার ফেরেস্তা নাজিল হয়ে রাসুলুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা মোবারাক বেষ্টন করে তাদের নুরের পাখা বিস্তার করে সন্ধা পর্যন্ত হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরুদ ও সালাম পাঠ না করেন।

অতঃপর যখন সন্ধা হয়ে আসে তখন তাঁরা আকাশে আরোহন করেন এবং তাদের অনুরূপ সংখ্যায় (৭০হাজার ) ফেরেস্তা দ্বারা অবতরন করে তাদের মতই দুরুদ ও সালাম পাঠ করতে থাকেন। আবার কেয়ামতের দিন যখন জমিন (রওজা মোবারক) বিদীর্ন হয়ে যাবে, তখন তিনি ৭০ হাজার ফেরেস্তা দ্বারা বেস্টিত হয়ে প্রেমাস্পদের রুপ ধারন করে আসল প্রেমিকের সাথে শীঘ্রই মিলিত হবেন।
[দারমী ও মিশকাত- বাবুল কারামত হাশিয়াহ]

উল্লেখিত হাদিসে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য:

(ক) কা’ব আহবার (রা:), নবী করীম সাঃ -এঁর রওজা মোবারকে ৭০ হাজার ফেরেস্তা নাজিল হতে নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন। এটি তার কারামতের প্রমান (লোমআত)।

(খ) আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদ্বি আল্লাহু তালা আনহার উপস্থিতিতে তিনি এ সাক্ষ্য দিয়েছেন।

(গ) রওজা মোবারাকে দিনে ৭০ হাজার এবং রাত্রে ৭০ হাজার ফেরেস্তা নাজিল হয় এবং তাদের ডিউটি হলো রওজা মোবারক বেষ্টন করে নুরের পাখা রওজা মোবারকে সামিয়ানা স্বরূপ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুরুদ ও সালাম পাঠ করা। ইহাই মিলাদ ও কিয়ামের সারাংশ। মুসলমানগন ফেরেস্তাদের অনুকরনে কিয়াম সহকারে দরূদ ও সালাম পড়ে থাকেন।
[আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত]

(ঘ) হাদিসে উল্লেখিত “মিসলাহুম” শব্দ দ্বারা প্রমানিত হলো যে সব সময় নিত্য নতুন অন্য একদল ফেরেস্তা আসেন। জীবনে একবারই তাঁরা এ সুযোগ পেয়ে থাকেন।

(ঙ) উক্ত ফেরেস্তারা অন্য কোন আমল না করে কেয়াম অবস্থায় শুধু দরূদ ও সালাম পড়েন।

(চ) রওজা মোবারকে পালা ক্রমে দিন রাত ২৪ ঘন্টাই মিলাদ ও কেয়াম হয়।

(ছ) মিলাদ মাহফিলে উত্তম ভাবে আলোক সজ্জা করা ও সামিয়ানা টাঙ্গানো বৈধ।

(জ) নবী করিম সাঃ কে সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানোর জন্য চোখের সামনে উপস্থিত থাকা শর্ত নহে। কেননা ফেরেস্তাদের চোখের সামনে শুধু রওজা মোবারক পরিদৃষ্ট ছিল।

(ঝ) কিয়ামতের দিবসে পর্যন্ত কেয়াম সহ দুরুদ ও সালামের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। দুশমনেরা তা বন্ধ করতে পারবে না।

(ঞ) কিয়ামতের দিবসে রওজা মোবারক অক্ষত থাকবে–ধ্বংস হবে না।যেমনঃ হাদিস শরীফে এসেছে।হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ রাসূল সাঃ বলেন “আঁমি হবো কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি এবং আঁমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যার কবর (রওজামোবারক) প্রথম খুলে যাবে, আঁমিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আঁমার সুপারিশ গ্রহনযোগ্য হবে’।
[সহিহ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৫৩, হাদীস নং-৫৭৭২]

(ট) রোজ হাশরে ৭০ হাজার ফেরেস্তা হুজুর সাঃ কে পরিবেষ্টন করে ও জুলুছ করে খোদার দরবারে নিয়ে যাবে। নবীজির জুলুছ করা ফেরেস্তাগনেরই সুন্নত।

(ঠ) সে দিন খোদা হবেন হাবীব এবং নবী সাঃ হবেন মাহবূব।হাদিসে উল্লেখিত “ইয়ারকাউনা” শব্দেটি বাবে নাছারা হতে উৎপন্ন ক্রিয়া পদ। মুল ধাতু “ঝিফাফুন” অর্থ মিলন। খোদার সাথে সে দিন প্রিয় মাহবুবের মিলন হবে। (লোমআত)

এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে। হযরত কা’ব (রাঃ) বলেন, ‘এমন কোনো ফজর পৃথিবীতে উদিত হয় না যেই ফজরে ৭০ হাজার ফেরেশতা রাসূলের রওজা মোবারকে আসেন না। এরা এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারককে ঘিরে ফেলেন এবং তারা তাদের পাখাগুলো বিছিয়ে দেন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পড়তে থাকেন। সন্ধ্যা হওয়া মাত্রই তারা ওপরে চলে যান এবং আরও ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতরণ করে রওজা মোবারক ঘিরে ফেলেন।তাঁরা তাঁদের পাখাগুলো বিছিয়ে দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ শরীফ পড়তে থাকেন। এভাবে ৭০ হাজার ফেরেস্তা রাতে এবং ৭০ হাজার ফেরেস্তা দিনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকেন।এমনকি যে দিন কিয়ামত হয়ে যাবে সেদিন মাটি ফেটে রাস্তা হয়ে যাবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭০ হাজার ফেরেস্তার মাঝ থেকে বের হবেন, প্রদর্শন করবেন’।
[তাযকিয়া,পৃষ্টা: ২১৩]

আবার আরকটি বর্ননায় রয়েছে। “তাছাড়া প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় ১৪০ হাজার নুরানী ফেরেশতা রওজা পাকে এসে সালাম পেশ করে থাকে।”
[দারেমী,জাযবুল কুলুব-২৬৫ পৃঃ]

হযরত ওয়াহাব বিন মুনাব্বাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন,প্রতিদিন ফজরের সময় নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের, রাওযা শরীফে আসমান থেকে ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতরণ করেন। তারা চতুর্দিক থেকে রাওযা শরীফ পরিবেষ্টন করে রাখেন, এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকেন। অতঃপর সন্ধ্যা হয়ে গেলে এই ফেরেশতাগণ আবার উর্ধগমন করেন এবং তখনই আবার সমপরিমান ফেরেশতা অবতরণ করেন এবং ফজর পর্যন্ত পূর্ববর্তীদের ন্যায় দরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকেন। যারা একবার আসবেন,তারা ২য় বার আর আসার সুযোগ পায়না।

দলিল
(ক) শু’আবুল ঈমানঃ ৩/৪১৭০,৩৮৬২
(খ) ইহয়াউ উলূমিদ্দীনঃ ৪/৫২২
(গ) আল ওয়াফাঃ ১৫৭৮
(ঘ) যারকানীঃ ৭/৩৭৯
(ঙ) হিদায়াতুস সালিকঃ ১/১১৪
(চ) তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ সুরা আহযাব
(ছ) সুনানু দারিমীঃ ৯৪

কিয়ামতের দিবসে রওজা মোবারক অক্ষত থাকবে–ধ্বংস হবে না। যেমনঃ হাদিস শরীফে এসেছে।হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ রাসূল (সাঃ) বলেন “আঁমি হবো কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি এবং আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যার কবর (রওজামোবারক) প্রথম খুলে যাবে, আঁমিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আঁমার সুপারিশ গ্রহনযোগ্য হবে’।
[সহিহ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড,পৃঃ ৩৫৩, হাদীস নং-৫৭৭২,মিশকাত হা/৫৭৪১]

হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন- (কোনো বিরোধিতা ও মতানৈক্য ব্যতীত) কিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানদের সর্দার তথা সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান হবো। আমিই সর্বপ্রথম যাকে রওজা শরীফ থেকে উঠানো হবে। আমিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশই কবুল করা হবে।

দলিল
(ক) মুসলিম ২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা নং-২৪৫, হাদীস নং-২২৭৮
(খ) মেশকাত,পৃষ্ঠা নং-৫১১

হযরত আবু সাঈদ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন-পরকালে আমি আদম সন্তানের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান। এটা গর্ব করে বলছিল না (বরং উম্মতের বুঝার ও সত্য প্রকাশের নিমিত্তে শুকরিয়া হিসেবে তা বলছি) আর সে দিন আমারই হাতে থাকবে মাকামে মাহমুদে প্রশংসার পতাকা। এতেও গর্ব নয়। সে দিন আদম (আ:) সহ সকল নবী আমারই পতাকার নীচে এসে সমবেত হবেন। আর আমিই হবো সর্ব প্রথম যার জন্য জমিন ফেটে যাবে (হাশরের ময়দানে দুলা সাজিয়ে নেয়া হবে) এতেও গর্ব নয়।

দলিল
(ক) তিরমিযী ২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা নং-২০২, হাদীস নং-৩৬১৫
(খ) মিশকাত,পৃষ্ঠা নং-৫১৩

– কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন: সুন্নীয়তের নয়ন মনি অধ্যক্ষ এম এ জলিল (রহঃ), মিলাদ ও কিয়ামের বিধান।

আরো পড়ুনঃ ↓

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-১

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-২

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-৩

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-৪

» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-৫

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel