মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে আলোচনা পর্ব-৫
পর্ব-৫
(১) “মিশকাত শরীফ-বাবুল ক্বিয়াম”-এর ৪০৩ পৃ: উল্লেখ রয়েছে:
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺳﻌﻴﺪﻥ ﺍﻟﺨﺪﺭﻯ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻧﺰﻟﺖ ﺑﻨﻮﻗﺮﻳﻈﺔ ﻋﻠﻰ ﺣﻜﻢ ﺳﻌﺪ ﺑﻌﺚ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﻴﻪ ﻭﻛﺎﻥ ﻗﺮﻳﺒﺎ ﻣﻨﻪ ﻓﺠﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﺣﻤﺎﺭ ﻓﻠﻤﺎ ﺩﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻼﻧﺼﺎﺭ ﻗﻮﻣﻮﺍ ﺍﻟﻰ ﺳﻴﺪﻛﻢ –
অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত আছে।তিনি বলেন,বনু কুরাইযা গোত্র যখন হযরত সা’দ (রা:) এর বিচারকে মেনে নেয়ার শর্তে দুর্গ থেকে অবতরণ করলো।তখন আল্লাহ্ পাক উঁনার রাসূল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; হযরত সা’দ (রা:) কে ডেকে পাঠালেন।
তিনি রাসূল (সাঃ) এঁর নিকটেই ছিলেন।অতঃপর হযরত সা’দ (রা:) যখন গাধার পিঠে আরোহন করে মসজিদের নিকটবর্তী হলেন,তখন আল্লাহ পাক উঁনার রাসূল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনছার সাহাবা-ই-কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বললেন,আপনারা আপনাদের সর্দারের সম্মানে দাঁড়ান।”
ইবনে হিশামের বর্ননা মতে,নির্দেশটি যদিও আনসার সাহাবীদের প্রতি ছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আনসার-মুহাজীর নির্বিশেষে সকল সাহাবি সেদিন হযরত সাআ’দ কে অভ্যর্থনা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যান।
[সিরাতুন্নবী,৩য় খন্ড, পৃ:২৩০-২৩১]
(২) সাহাবাগন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর জন্যও দাঁড়িয়েছেন:
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺠﻠﺲ ﻣﻌﻨﺎ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻳﺤﺪﺛﻨﺎ ﻓﺎﺫﺍ ﻗﺎﻡ ﻗﻤﻨﺎ ﻗﻴﺎﻣﺎ ﺣﺘﻰ ﻧﺮﺍﻩ ﻗﺪ ﺩﺧﻞ ﺑﻌﺾ ﺑﻴﻮﺕ ﺍﺯﻭﺍﺟﻪ .
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বসে আমাদেরকে নছীহত করতেছিলেন।যখন তিঁনি উঠলেন বা দাঁড়ালেন,আমরা ও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষন আমরা উঁনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম।এমনকি উঁনার আহলিয়া উঁনাদের ঘর মুবারকে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম।”
[বায়হাক্বী ফী শোয়াবিল ঈমান,মিশকাত শরীফ]
(৩) সাহাবাগন একে অপরের জন্যও দাঁড়িয়েছেন:
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻩ ﻛﻌﺐ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ …….. ﻭﺍﻧﻄﻠﻘﺖ ﺍﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﺘﻰ ﺩﺧﻠﺖ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﺍﺫﺍ ﺑﺮﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺟﺎﻟﺲ ﺣﻮﻟﻪ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻘﺎﻡ ﺍﻟﻰ ﻃﻠﺤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﻴﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻬﺮﻭﻝ ﺣﺘﻰ ﺻﺎﻓﺤﻨﻰ .
অর্থঃ- “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁর দাদা হযরত কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন: হযরত কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,আমি আল্লাহ পাক উঁনার রাসূল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার দরবার শরীফে গেলাম, এমনকি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। তখন হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উঁনার সাথে চতুর্দিকে বসা ছিলেন, অতঃপর ত্বালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ আমার জন্য দাঁড়ালেন, এমনকি দ্রুতগতিতে এসে আমার সাথে মুছাফাহা করলেন।”
উপরোক্ত হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হলো যে, হযরত কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার সম্মানার্থে হযরত ত্বালহা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়িয়েছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাবুক যুদ্ধের সময় তওবা কবুলের ঘোষণা প্রসঙ্গে ত্বালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ দৌঁড়ে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ব্যতিত আর কেউ আমাকে এরূপ দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন নি। আমি ত্বালহার সম্মান প্রদর্শনের এমন বিরল দৃষ্টান্ত কোনদিন ভুলতে পারবো না।
[আল-আদাবুল মুফরাদ- সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসাঈ শরীফ]
উল্লেখ্য যে,ঘটনাটি স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এঁর উপস্থিতিতে তাঁর সম্মুখেই ঘটেছে। কিন্তু ক্বিয়াম করে এরূপ সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে তিঁনি কোনরূপ আপত্তি করেননি।
উপরোক্ত হাদীস শরীফের প্রেক্ষিতে “মিশকাত শরীফ”-এর ৪০৩ পৃষ্ঠায় ৭নং হাশিয়ায়, “মিরকাত শরীফ”-এর ৯ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায়, “শরহুত ত্বীবী” কিতাবের ৯ম খন্ডের ৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
যেটা ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন:
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻳﻜﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻪ ﺍﻟﺒﺮ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻗﻴﺎﻡ ﺍﻻﻧﺼﺎﺭ ﻟﺴﻌﺪ ﻭﻗﻴﺎﻡ ﻃﻠﺤﺔ ﻟﻜﻌﺐ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ .
অর্থঃ- “ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,এই ক্বিয়াম সদ্ব্যবহার এবং সম্মানের কারণে হবে। যেমন, হযরত আনছার সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানে ক্বিয়াম করেছেন এবং হযরত কা’ব ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানে হযরত ত্বলহা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্বিয়াম করেছেন।”
(৪) উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর প্রিয় কণ্যা ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা পরষ্পরের প্রতি সম্মান ও অনুরাগ প্রকাশের ক্ষেত্রে ক্বিয়াম করতেন।
হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আরো বর্ণনা করেন, কথা বার্তায়, উঠা-বসায় ফাতিমার চেয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যশীল আর কেউ ছিলেন না।নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁকে আসতে দেখতেন তখন তিঁনি তাঁকে খোশ-আমদেদ জানাতেন,তাঁর জন্য উঠে দাঁড়াতেন, তাঁকে চুম্বন করতেন।এমনকি হাত ধরে তাঁকে নিজের আসনে বসিয়ে দিতেন। অপর দিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকট গমন করলে তিঁনিও তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতেন এবং উঠে গিয়ে তাঁকে চুম্বন করতেন।
[বুখারী, হাদিস নং ৩৩৫৪, তিরমিযি, হাদিস নং ৩৮০৯, প্রাগুপ্ত, পৃ:৪২২]
(৫) ইমাম আবু ঈসা আত তিরমিযি তাঁর কিতাব তিরমিযি শরীফে ‘মিলাদুন্নবী’ নামে একটি অধ্যায় আর “ক্বিয়াম” নামে একটি পরিচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এসব হাদীস দ্ধারা বুঝা যায়, সম্মান প্রদর্শনের জন্য কিয়াম করা বা দন্ডায়মান হওয়ার দৃষ্টান্ত ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম জাতির মধ্যেও আছে।
– কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন: সুন্নীয়তের নয়ন মনি অধ্যক্ষ এম এ জলিল (রহঃ), মিলাদ ও কিয়ামের বিধান।
আরো পড়ুনঃ ↓
» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-১
» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-২
» মিলাদ কিয়াম সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব-৩