‘কাফারা’ অর্থ ঢাকিয়া রাখা। কোরানের পরিভাষায় সত্যকে যাহারা সত্য জানিয়াও ঢাকিয়া রাখে তাহারা কাফের। ইহা ছাড়া সত্য যাহার মধ্যে ঢাকা পরিয়া আছে সে-ই কাফের। কোরান দর্শন শব্দ সজ্ঞা (৩১)।
কোরান দর্শন: সূরা নূর, আয়াত (৪০,৪১)
যাহারা আজীবন কাফের থাকে তাহারা অজ্ঞানতার গভীর অন্ধকারে বাস করে। জগত ও জীবন সম্বন্ধে তাদের কোন জ্ঞান জন্মায় না। বস্তুুগত জ্ঞান যাহাই থাক আত্নীক জ্ঞান এবং সৃষ্টির রহস্যের প্রত্যক্ষ জ্ঞান তাহাদের ইন্দ্রিয় পথে একেবারেই উদয় হয় না। তাহারা সংস্কার সমুদ্রের তলদেশে কিরূপ গভীর অন্ধকারে যে নিমজ্জিত আছে তাহার একটি সুন্দর রূপক চিত্র অঙ্কন করা হইয়াছে এই বাক্যে। আল্লাহ হইতে নূর অর্জন করিয়া অন্তদৃষ্টিপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত অসীম সংস্কার সমুদ্রের এঈ অন্ধকার হইতে কাহারও নিস্কৃতি নাই। যাহারা কাফের তাহারা একে তো এই সমুদ্রের ভিতরে অন্ধকারে ডুবিয়া আছে তাহার উপর ঢেউয়ের উপরে ঢেউ আসিতেই আছে। সপ্তইন্দ্রিয় দ্বারপথে বিষয়রাশি আসিয়া অবিরাম শিরিকের আঘাত হানিতেছে। এই ঢেউকে ঠেকাইবার জন্য সে সালাত করে না। উপরন্তুু তাহার চিত্তাকাশ সংস্কারের মেঘে আচ্ছন্ন এবং সেই মেঘে আপ্লুত হইয়া রহিয়াছে।
সৃষ্টিতে যাহারাই দেহ-মনের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া আছে তাহারা সবাই অবচেতন অবস্থায় সাতার কাটিয়া আপন রবের দিকে ধাবিত হইতেছে। সাধকের মধ্যে যাহারা সংস্কার সাগরে সাতার কর্মে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করিয়াছেন তাহাদিগকে রূপকভাবে পক্ষী বলা হইয়াছে। তাহাদিগকে এজন্য পাখী বলা হইয়াছে যে, তাহারা বস্তুুমোহে আবদ্ধ না থাকিয়া সকল সংস্কারের উপরে ভাসমান থাকে। তাহারা চিরন্তন একই সাধক শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া আছেন। তাহারা প্রত্যেকেই আপন সালাত সম্বদ্ধে সম্পর্ণ সচেতন। এবং তাহারা আপন রবের পবিত্রতা প্রকাশ করেন। তাহাদের সকল কর্মের প্রতি আল্লাহ সজাগ দৃষ্টি রাখেন।
শাহ সূফী সদর উদ্দিন আহমদ চিশতি (রহঃ)।
কোরান দর্শন: সূরা নূর, আয়াত (৪০,৪১)