সুফিবাদ সার্বজনীন।
সকল ধর্ম, সকল মতামত, সকল দৃষ্টিভঙ্গির বলয় ভেঙে দিয়ে এক মহাপ্রলয়ের ভেতর সুফিবাদ অবস্থান করে।
সুফিবাদের কোনাে ধর্ম নাই। সুফিবাদ ধর্মের বিভিন্নতার মাঝে ছােট-বড় করতে জানে না। শুধু এইটুকুই জানে, সুফিবাদ সবার জন্য।
প্রেম সার্বজনীন। প্রেম ছােট-বড় করে না। প্রেম মানুষকে মহীয়ান করে তােলে। আর সেই প্রেমের বাগানটির নাম হলাে সুফিবাদ। প্রেমের বাগানে অনেক রকম ফুল ফোটে। অনেক রকম ফুল গাছের শােভা পায় প্রেমের বাগানে। আকর্ষণের প্রশ্নে বিভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু আকর্ষণের খনিই হলাে সুফিবাদ।
সুফিবাদের দেহ একটাই। মানুষের শরীর বিভিন্ন হতে পারে। এই বিভিন্নতার মধ্যেই একের ঐকতান দেখা যায় সুফিবাদে। সুফিবাদ সবাইকে কোলে তুলে নেয়। সুফিবাদ গণ্ডিকে ঘৃণা করে। গণ্ডির দেয়াল যারা ভাঙতে পারে সুফিবাদ তাদেরকে আদরে গ্রহণ করে নেয়।
যুক্তি, তর্ক, আইন বার-বার রঙ বদলায় কিন্তু সুফিবাদ কাঠমােল্লাও নয়, পুরােহিতও নয়, যাজকও নয়। কঠিন বাস্তব শিখিয়ে দেয়, কেমন করে বৈষয়িক ধনী হওয়া যায়, কেমন করে ঐশ্বর্যের পার্থক্যটি করা যায়, কেমন করে ধন-সম্পদের মালিক হওয়া যায়। পক্ষান্তরে, সুফিবাদ চুপিচুপি বলে দেয় কল্পলােকের মূর্তিগুলাের কথা। জানিয়ে দেয় কিভাবে পবিত্র গৃহে আসা-যাওয়া করা যায়।
কথার শেষ সুফিবাদের শুরু। গরিব মানুষের মন, গরিব মানুষের আচরণ এবং হা-হুতাশের বােবা কান্নায় বােবা হয়ে যায় কঠিন বাস্তব। মােঘল সম্রাট জালাল উদ্দিন মােহাম্মদ আকবর, যার সাম্রাজ্য ছিল ভারতবর্ষ, এমনকি তা কাবুল – কান্দাহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেই জালাল উদ্দিন মােহাম্মদ আকবরের ভিত্তি থরথর করে কাঁপিয়ে দিয়েছিল আনারকলি। ক্ষমতার প্রশ্নে আনারকলির শাড়ির আঁচলে বাধা থাকত দু’চারটা নবাব সিরাজ উদ-দৌলা।
সুফিবাদের মহাদেশে আসতে চাইলে ঘােমটা খুলে ফেলাে। আবরণীর আবরণের বসনটি ছিড়ে ফেলাে। তাল-লয়ের ঝংকার উপেক্ষা করাে, বৈতালিক নৃত্যের নূপুরে সার্বজনীনতার ঝংকার তােলো, চিৎকার করে বলতে শিখাে। সুফিবাদের আঙিনায় কোনাে মতাদর্শ থাকে না। কেবলই থাকে নিরেট সার্বজনীনতা, মাঝখানেও সার্বজনীনতা এবং ইতিতেও সার্বজনীনতা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বসনবিহীন হবার নামটিই হলাে সুফিবাদ।
সূত্র: কালান্দার জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বরীর লিখিত বই (মারেফতের গোপনেরও গোপন কথা) হতে।