খাজাবাবা ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত (মুহাররম) : পর্ব-৩

খোদাপ্রাপ্তি জ্ঞানের আলোকে শাহ্সুফি হযরত ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের
লিখিত নসিহত শরীফের ৯ম খন্ডের “মুহাররম” ১৪-১৬ পৃষ্ঠার আলোচনা।
পর্ব-৩ (পৃষ্ঠা: ১৪-১৬) আলোচনা:
ইমাম হোসেন (রাঃ) এর প্রতি এই আচরণে মদিনা বাসি বিক্ষুব্ধ হইলেন। মদিনায় নিযুক্ত মোয়াবিয়ার শাসনকর্তা যথা সময়ে মোয়াবিয়াকে এই বিক্ষুব্ধতার অবস্থার কথা জানাইলেন। অবস্থা স্ব চোখে দেখিবার জন্য মোয়াবিয়া স্বয়ং মক্কার পথে মদিনায় উপস্থিত হইলেন। মোয়াবিয়া মদিনায় উপস্থিত হইলে হযরত ইমাম হোসেন ( রাঃ) ছাহেব অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির সহিত মোয়াবিয়াকে নগরে প্রবেশকালে সংর্বধনা জানাইতে গেলেন। সেখানে সর্ব সম্মুখে মোয়াবিয়া হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) এর সহিত ধৃষ্টতাপূর্ন আচরন করেন। নেতৃবর্গ মোয়াবিয়ার রুঢ় আচোরনে স্থমিত হইয়া স্থান ত্যাগ করিলে,মোয়াবিয়া সাধারণ লোকদের লইয়া এক সভা আহ্বান করিলেন।সেই সভায় তিনি নিজ পুত্র এজিদের পক্ষে আনুগত্য আহ্বান করিলেন। সাধারন নাগরিকগন চুপচাপ রহিলেন। মৌনতাই সম্মতির লক্ষন বলিয়া মোয়াবিয়া গ্রহন করিলেন।
অতঃপর মোয়াবিয়া মক্কা গমন করিলেন। হজ্বের পর তিনি নাগরিকদের এক সাধারস সভা আহ্বান করিলেন।সভায় তিনি নিজ পুত্র এজিদের গুনগান করিয়া তাহার পক্ষে আনুগত্য আহ্বান করিলেন। এই সময় হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ), আবদুর রহমান ইবনে আবু বক্কর (রাঃ),আবদুল্লাহ ইবনে ওমর( রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের ( রাঃ) কে স্ব স্ব স্থানে মোয়াবিয়া প্রহরী দ্বারা বেষ্টিত রাখিলেন। তাহার কেহই কোন কথা বলিতে পারিলেন না। মক্কার জনসভায় তিনি এ কথাও বলিলেন যে মদিনার জনগন এজিদের নামে আনুগত্য প্রকাশ করিয়াছে। মক্কা ও মদিনায় এইভাবে প্রহসোনের মাধ্যমে এজিদের পক্ষে তিনি আনুগত্য করিয়া স্বীয় পুত্রকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার ঘোষণা করিয়া শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
এজিদ সিংহাসনে আরোহন করিয়াই আদেশ জারী করিল, হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) কে এজিদের আনুগত্য স্বীকার করতে হইবে; অন্যথায় মদিনায় শাসনকর্তাকে বলা হইল যেন ইমাম হোসেন ( রাঃ) ছাহেবের ছিন্ন মস্তক তাহার নিকট প্রেরন করা হয়।
হযরত হাসান (রাঃ) এর মৃত্যুর পর হইতে ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেব রাজনীতি হইতে দূরে সরিয়া ছিলেন। এক্ষনে এজিদের এরুপ উদ্ধত্যপূর্ন আচরনে তিনি খুবেই ব্যতীথ হইলেন; অন্যায়ের নিকট মাথা নোয়ানো অসংগত বোধ করিলেন। এজিদের বশ্যতা স্বীকার করিয়া নিজের নিরাপত্তা চাহিলে তাহার নিকট আল্লাহয়ালার যে বেলায়েত হযরত আলী (কঃ) ও তাহার ভ্রাতা ইমাম হাসান (রাঃ) কর্তৃত রক্ষিত হইয়াছিল ; তাহার প্রতি অবমাননা করা হয়। তাই তিনি ইহার প্রতিবিধান করিবার জন্য সংকল্প বদ্ধ হইলেন। প্রতিকার করিতে হইলে যে লোকবল ও সম্পদ প্রয়োজন, তাহা মদিনায় ছিল না বিধায় তিনি মক্কা গমন করিবার মনস্থ করেন।
যাত্রার পূর্বে তিনি প্রিয় নানা হযরত নবী করিম ( সাঃ) এর রওজায় বসিয়া সারারাত্রি অশ্রুপাত করিলেন; এই মহা সংকটে হযরত রাসূলে কারিম( সাঃ) এর জাগ্রত পবিত্র আত্বার নিকট কতর্ব্য সম্পর্কে নিদর্শনা চাহিলেন। এই রুপে কাঁদিত কাঁদিতে নিদ্রামগ্ন হইলেন। নিদ্রামগ্ন অবস্থায় স্বপ্নে দেখিলেন, প্রিয় নানা হযরত রাসূলে কারিম (সাঃ) তাহার মস্তক ক্রোড়ে নিয়া বসিয়া আছেন। হযরত (সাঃ) ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেবকে বলিলেন”” যত কটিন বিপদই হউক না কেন, ভাংগিয়া পড়িও না। মনে রেখ তুমি বেশি দিন দুনিয়ার থাকিবে না। খুব শীঘ্রই আমার নিকট চলিয়া আসিবে। এই অস্থায়ী দুনিয়ার সুখ ও আরামের জন্য দুর্নীতি ও অর্ধমের নিকট মস্তক অবনত করিবে না।
সেদিন ছিল ৩ রা শাবান। স্বপ্নাদেশ প্রাপ্তির পর হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেবের সকল দ্বিধা ও ভয় কাটিয়া গেল। পরদিন সকলের নিকট হইতে বিদায় লইয়া স্বপরিবারে মক্কায় রওয়ানা হইয়া গেলেন। মদিনার আবাল — বৃদ্ধ — বনিতা কাঁদিতে কাঁদিতে হযরত ইমাম ছাহেব ও তদীয় পরিবারকেে বিদায় দিয়া আসিল। জন্ম ভূমি হইতে ইহাই ছিল ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেবের শেষ বিদায়।
আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel