জন্মান্তরবাদ (পর্ব-০২)
এই পর্বে শুধু জন্মান্তরবাদের প্রমান দেওয়ার চেষ্টা করব কুরআন ও হাদিস থেকে। বাকী পর্ব গুলোতে শুধু জন্মার্বাদের আলোচনা থাকবে। আর কুরআন হাদিস ও বেদ গীতা থেকে উদ্ধিতি ও তার ব্যাখ্যা থাকবে। এই পোস্ট তাদের জন্য, যারা জন্মান্তরবাদ বিশ্বাস করে না ও যারা বিশ্বাস করে; কিন্তু বিশ্বাস দুর্বল।
আল্লাহ তায়ালা বলেন “কিরূপে তোমরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করছ? অথচ তোমরা মৃত ছিলে, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে মৃত করবেন এবং পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করা হবে। তারপর তোমারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।” (Al-Baqara 2:28)
এই আয়াত নিয়ে একটু ভাবুন, আমরা মৃত ছিলাম (জন্মের আগের কথা, জীবত করা হল (জন্ম গ্রহন করলাম), আবার মৃত্যু বরন করব (মানে মরে যাবো), আবার জীবিত হবো (মানে হাসরে উঠবো)। আলেমরা এভাবেই ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয় যে, আমরা মরা ছিলাম, এইবার জন্ম নিলাম, আবার হাসরে উঠবো। কাহিনী শেষ, জন্মান্তরবাদ বলতে কিছুই নেই। কিন্তু একটু লক্ষ করুন, শেষে আল্লাহ বললেন ‘তারপর তোমারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।” প্রত্যাবর্তন অর্থ হল যেখান থেকে আসা, আবার সেখানেই ফিরে যাওয়া। মৃত্যুর পর জীবত হওয়া মানেই প্রত্যাবর্তন নয়। তাই আল্লাহ আগে জীবিত করার কথা বলেছেন, পরে প্রত্যাবর্তন করার কথা বলেছেন। অর্থাৎ আমাদের জীবত করার পর আবার আসতে হবে পৃথিবীতে। কারন আমরা পৃথিবীতেই ছিলাম। তা না হলে আল্লাহ ‘প্রত্যাবর্তন’ এর কথা উল্লেখ করতেন না।
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন: (হে নবী) তুমি বলঃ তোমাদের (নিরূপিত) শরীকদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি যে প্রথমবারও সৃষ্টি করে এবং পুনরাবর্তন করতে পারে? তুমি বলে দাওঃ আল্লাহই প্রথমবারও সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বারও সৃষ্টি করছেন বাবা বা, অতএব তোমরা (সত্য হতে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ? (Yunus 10:34)
এই আয়াতে দেখা যায় যে, আল্লাহ বললেন তিনিই প্রথমে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তা পুনরায় সৃষ্টি করছেন (চলমান) এবং করবেন। (আরবী ভাষায় বর্তমান কাল ও ভবিষ্যতকালের শব্দ একই)। অর্থাৎ আল্লাহ এখনও পুনরায় সৃষ্টি করছেন তার পুরনো ধ্বংস হওয়া সৃষ্টিকে। অর্থাৎ আল্লাহ এখনও মৃতদের জীবত করছেন। কিন্তু মোল্লারা ত বলে যে কিয়ামতের পর জীবিত করবেন এবং হাসরের মাঠে উঠাবেন। এখান থেকেও বুঝা থেকেও বুঝা মানুষের জন্ম ও মৃত্যু হচ্ছে বার বার। যা জন্ম থেকে জন্মান্তর পর্যন্ত চলতেছে।
এইবার অন্য একটি আয়াতের দিকে লক্ষ করুন। আল্লাহ বলেন “তিনিই মৃত হতে জীবন্তের এবং জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটান এবং ভূমির মৃত্যুর পর ওকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবেই তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে। (Ar-Room 30:19)
এই আয়াতে আল্লাহ বললেন যে তিনি মৃত হতে জীবিত বের করেন এবং জীবিত হতে মৃতকে। এখান থেকেও বুঝা যায় যে জন্মান্তরবাদ সত্য। কারন আল্লাহ আগে এখানে মৃত্যের কথা বলছে, মৃত থেকে তিনি জীবত করেন। তিনি বলেন কি যে, অনস্তিত্ব থেকে তিনি জীবন বের করেন। যেন অন্য আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলছেন যে, “তারা কি লক্ষ্য করেনা যে, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন? অতঃপর পুনরায় সৃষ্টি করবেন।” (Al-Ankaboot 29:19)। এই আয়াতে অনস্তিত্ব থেকে সৃষ্টির কথা বলে দিয়েছেন। কিন্তু উপরের আয়াতে আল্লাহ মৃতের থেকে জীবনকে বের করার কথা বলেছেন। মানে প্রানী মরার পর আবার জীবন লাভ করবে। আর মৃতকে অস্তিত্বহীন বলা যায় না। যেহেতু আল্লাহ এখানে অস্তিত্ব থেকে প্রান বের করার বা পুনরায় সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন, সেহেতু বলাই যায় যে প্রানীর মৃত্যুর পর জীবন ও জীবনের পর আবার মৃত্যু আছে।
অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন’ (হে নবী) আপনি বলুনঃ তোমাদেরকে প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা তেমনিভাবে ফিরে আসবে। (Al-Araf 7:29)
এই আয়াত ত একদম স্পষ্ট প্রমান বহন করে যে জন্মান্তরবাদ মহাসত্য। কারন আল্লাহ বলেছেন আমাদের প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেভাবেই আল্লাহর নিকট ফিরে যাবো। এখানে আল্লাহ আদম (আ) এর সৃষ্টির কথা বলেননি, বলেছেন আমাদের সবার কথা, কারন আয়াতে আল্লাহ বহুবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ ত আমাদের মায়ের গর্ভে রেখে ধাপের ধাপে সৃষ্ট করেছেন তাঁর মহাকুদরতী পদ্ধতিতে। সুতরাং আমাদের প্রত্যাবর্তনও ঠিক এইভাবেই হবে, যেভাবে আমাদের জন্ম হয়েছে পৃথিবীতে। বিষয়টা খুবই সহজ। একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন।
এব্যপারে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি সেভাবেই আমি সেটার পুনরাবর্তন ঘটাব”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৪]
এই আয়াত থেকেও বুঝা যায় মাতৃগর্ভের মাধ্যমে আবারও জন্মগ্রহন করার কথা। আমাদের আল্লাহ উলঙ্গ করে সৃষ্টি করেছিলেন, আবারও শিশুর বেশে উলঙ্গ হয়েই জন্ম গ্রহন করতে হবে মৃত্যুর পর। এই বিষয়টা আরো পরিস্কার করে দিয়েছেন রাসূল (স)। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মহানবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, “কিয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ পদে, উলঙ্গ দেহে ও খাতনাহীন অবস্হায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে ।” (বোখারী-মুসলিম)
উপরে বর্নিত আয়াত যে জন্মান্তরবাদের ব্যপারেই নাজিল হয়েছে, তার প্রমান স্বরুপ অন্য আরেক হাদিসে আছে, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন তোমরা উলঙ্গ পদে, উলঙ্গ দেহে ও খাতনাহীন অবস্হায় হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে।”একথা বলে তিনি কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন, ‘প্রথমবার সৃষ্টি করার সময় আমি যেরূপ সূচনা করেছি , দ্বিতীয়বারও আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে সৃষ্টি করব।’
আল্লাহ মানুষকে তার কর্মের ফল দিবেন। আর তার ফল দেওয়ার জন্যে ত পৃথিবীতেই আসতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কারন সূরা যিলযালে আল্লাহ বলেন ‘তুমি যা করবা তার বদলা পাইয়া’। অর্থাৎ আমি কাউকে ভালবাসলে ভালবাসা পাবো, আর কাউকে আঘাত করলে আঘাত পাবো। ভালাবাসা পাওয়ার জন্যে ত আমাকেমাকে পৃথিবীতেই আসতে হবে, আর আঘাত পাওয়ার জন্যেও তাই। অবশ্যই থাপ্পরের বিনিময় থাপ্পরই হবে, থাপ্পরের বিনিময়ে আগুন জ্বালানোর কোনো যুক্তিকতাই নাই। আর আল্লাহ ত অবিচারক নন, উনি সর্বোত্তম বিচারক। অবশ্যই তিনি আমাদের থাপ্পরের বিনিময়ে আগুনে জ্বালানোর মত বেইনসাফী করবেন না। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেনঃ “তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, আল্লাহর ও‘য়াদা সত্য; নিশ্চয়ই তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বার সৃষ্টি করবেন, যাতে এরূপ লোকদের যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদেরকে ইনসাফ মত প্রতিফল প্রদান করেন; (Yunus 10:4)
আমাদের সাথে যা ঘটে, তা আমাদেরই কর্মের ফল, কিন্তু একটি শিশু জন্ম থেকেই তবে কেন প্রতিবন্ধি হয়!!! অবশ্যই স্রষ্টা অবিচারক ননন। অনেকেই বলে যে পরীক্ষার জন্য, কিন্তু পরীক্ষা ত সবার একই, তবে প্রশ্ন পত্র কেন ভিন্ন! একেকজনকে কেন একেকভাবে পরীক্ষা নিবেন!!! এটা কোন ধরনের ইনসাফ!!! এথেকেও বুঝা যায় জন্মান্তরবাদ সত্য এবং প্রভু নির্দোষ। উনি শুধু আমাদের কর্মের ফল প্রদান করেন ।যেমন আল্লাহ বলেনঃ ‘তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল।’ (Ash-Shura 42:30)
আবার কেন প্রানী পশু কূলে জন্ম গ্রহন করে মানুষ কেন মানব জনম হারিয়ে পশুকূলে যায়, সেটাও আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট ভাবেই বলে দিয়েছেন সূরা ত্বীনের মধ্যে। আল্লাহ বলেন : “অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে। তারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। সুতরাং এরপরও কিসে তোমাকে কর্মফল সম্পকের্ অবিশ্বাসী করে তোলে? আল্লাহ কি বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?”
আয়াত জন্মান্তরবাদ এর প্রমান বহন করে। মানুষের কুকর্মের জন্যেই তাকে আল্লাহ পশু কূলে পাঠান। অনেকেই এই আয়াতের ব্যখ্যা বলে যে যারা শনিবারের বিধি-নিষেধ পালন না করে মাছ শিকার করেছিল, তাদের আল্লাহ বানর বানিয়ে দিয়েছিলেন, তাই আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করেছেন। কিন্তু এটা মিথ্যাচার। আল্লাহ বানরের ঘটনা কুরআনের অন্য জায়গায় আলোলোচনা করেছেন। আর কুরআন ত সর্বকালের জন্য ও সার্বজনীন। সূরা ত্বীনে আল্লাহ সেসব মানুষের কথাই বলেছেন, যাদেরকে পাপ কর্মের ফলে পশু কূলে স্থানান্তর করেছেন।।
আমি আমার সাধ্য মত চেষ্টা করেছি প্রমান দেওয়ার। জন্মান্তরবাদ এর আরো অনেক আয়াত ও হাদিস রয়েছে। আগামী পর্ব গুলোতে সেগুলো উল্লেখ করার চেষ্টা করব। আর আগামী পোস্ট গুলো তথ্যবহুল হবে আশা করি। এই পোস্টটা অবিশ্বাসীদের জন্য ছিল, তাই কোনো তত্ত্ব আলোচনা করলাম না।
- ১ম পর্বের লিংকঃ জন্মান্তরবাদ (পর্ব-০১)
- » জন্মান্তরবাদ (সবগুলো পর্ব পড়ুন)
লেখাঃ DM Rahat