জন্মান্তরবাদ (পর্ব-০৩)
আল্লাহ সমস্ত আত্মাকে একসাথে তৈরি করে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে জিজ্ঞাস করলেন “আমি কি তোমাদের প্রভু নই?” (আলাসতু বিররাব্বকিকুম)। উত্তরে আত্মা (রূহ) বলল “না”। অতঃপর তাদের শাস্তি প্রদান করা হল, তারপর আবার পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাস করা হল ‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই?” এবারও তারা অস্বীকার করল, এভাবে কয়েকবার করা হলে তাদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্বল করা হল। তারপর আবার যখন তাদের জিজ্ঞাস করা হল ‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই?” তখন তারা বলল “হ্যা” (কলু বালা)। আর এই ‘হ্যা” সূচক শব্দের স্বীকৃতির প্রদানের প্রমাণ করার জন্যেই প্রানীকূলকে পৃথিবীতে আসতে হল কর্মের মাধ্যমে তা প্রমান করার জন্য। আত্মার সেই জগতকেই ‘গঞ্জে মুখ্ফি’ বলা হয়। এটাই জন্ম গ্রহনের প্রথম স্ট্যাশন (নয় বাতনের প্রথম পর্যায়)।
আমরা সবাই জন্মের পূর্বে গঞ্জ জাতে গোপন ছিলাম স্রষ্টার সাথে। সেটাই মূলত ব্রহ্মলোক। আবার আমাদের আবার যে কোনো মূল্যে সেখানেই ফিরে যেতে হবে সাধনার দ্বারা। সেখানে পৌঁছাতে পারলে আর আমাদের জন্মমৃত্যু হবে না, তখনই আমাদের জন্মমৃত্যু বারণ হবে, পাবো আমরা জান্নাতুল ফিরদাউস। বৌদ্ধধর্ম মতে যাকে ‘নির্বাণ’ বলা হয়।
কিন্তু যতদিন আমরা সাধনায় পূর্ন সিদ্ধি লাভ করতে না পারব, ততদিন মৃত্যুর পর ফিরে যেতে হবে ‘গঞ্জে মুখফি’তে। এভাবে বার বার আসা যাওয়া করতে হবে আমাদের। যাকে বলা হয় ‘অরুজ-নজুল’ ভাঙ্গা গড়ার খেলা। অরুজ মানে উপরে যাওয়া আর নুজুল মানে নিন্মে আসা। অরুজ এর নয়টি ধাপ, আবার নুজুলেরও নয়টি ধাপ। নুজুলের ধাপ গুলোকেই ‘বাতন’ বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রতিটি প্রাণীকে পৃথিবীতে জন্ম নিতে নয়টি স্টেশন ভ্রমণ করে আসতে হয়, ইহাকেই ‘নয় বাতন’ বলা হয়। এই ধাপ গুলোর ব্যপারের আল্লাহ বলেনঃ “তিনি তোমাদের ক্রমে ক্রমে (পর্যায়ক্রমে বা ধাপে ধাপে) সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা নূহঃ ৭১ঃ১৪)।
নয় বাতনের নামগুলো উল্লেখ করা হল সবার জ্ঞাত হওয়ার স্বার্থে। নয় বাতন গুলো হলঃ ১.গঞ্জে মুখফি, ২.জামাদাত, ৩.নাবাদাত, ৪.হায়ানাত, ৫.নুতফা, ৬.আলক্বা, ৭.দায়রা, ৮.জনীন, ৯.তেফেলি।
গঞ্জে মুখফি হল বাতনের প্রথম ধাপ। গঞ্জে মুখফির জগতকেই গঞ্জে জাত বলা হয়। আর বাতনের শেষ ধাপ হলো ‘তেফেলি’। হোক সে মানুষ কিংবা অন্য কোনো প্রানী, তাকে এই নয়টি ধাপ অতিক্রম করতেই হবে জন্ম নিতে হলে।
আগামী পোস্টে নয় বাতনের আভাসমূলক ব্যাখ্যা প্রদান করা চেষ্টা করব, বাকীটা গুরুর কাছ থেকেই বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
» জন্মান্তরবাদ (সবগুলো পর্ব পড়ুন)
লেখাঃ DM Rahat