জন্মান্তরবাদ (পর্ব-০৪)
পর্ব-০৩ পোস্টে ‘নয় বাতন’ এর নাম উল্লেখ করেছিলাম। এই পোস্টে আভাসমূলক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
১. গঞ্জে মুখফি (গঞ্জে জাত বা আলমে আরওয়া বা রূহের জগত): সমস্ত প্রাণীর আত্মা এখানেই ছিল, আবার এখানেই চলে যাবে মৃত্যুর পর।
২. জামাদাত (অর্থাৎ ধাতু বা জড়): এটা দ্বিতীয় স্ট্যাশন। গঞ্জে মুখফি হতে কুশাকারে আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে (রূপক ব্যাখ্যা)।
৩. নাবাদাত (অর্থাৎ বৃক্ষ): কুয়াশাকারে নেমে এসে আত্মা কোনো বৃক্ষের উপর পতিত হয়।
৪. হায়ানাত (অর্থাৎ পশু): এটা চতুর্থ স্ট্যাশন। সেই বৃক্ষ যে পুরুষ প্রানী ভক্ষন করে, আত্মা তাঁর মস্তকে চলে যায় এবং সুপ্ত হয়ে থাকে।
৫. নোৎফা (অর্থাৎ মণি বা বীর্য): আত্মা সুপ্ত হয়ে মস্তকে বীর্যের মধ্যে অবস্থান করে। যদি বৃক্ষ বা বৃক্ষের ফল মানুষ খায় তবে আত্মা মানুষের মস্তকে, আর যদি অন্য কোনো প্রাণীতে ভক্ষ করে, তবে আত্মা সেই প্রানীর মস্তকে চলে যায় (বাবার মস্তকে থাকে)।
৬. আলক্বা (অর্থাৎ জমাট বাধা রক্ত বা ঝুলে থাকা): তারপর বীর্য বাবার মস্তক থেকে মাতৃ রেহেম বা গর্ভাশয়ে নেমে এসে জমাট বাধা রক্তের গঠন ধারন করে। সূরা আলাকে ২য়য় আয়াতে এই বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।
৭. জনিন (অপরিনত শেকেল): মানে অপরিনত দেহ। অর্থাৎ তখন দেহের আকার ধারন করে ঠিকই, কিন্তু পূর্ন হয় না।
৮. দায়রা (অর্থাৎ পূর্ন শেকেল): সবশেষে দেহ পূর্নতা লাভ করে একটি পূর্ন আকৃতি ধারন করে ২৮০ দিনে। মানে ৯ মাস দশ দিনে। অনেকেই দশ মাস দশ দিনের কথা বলে থাকে, সেটা ভুল তথ্য।
৯. তেফেলি (এটার অর্থ শিশু। এখানে অর্থ হবে তেলেফি কামেল বা পূর্ন বিকাশ): অবশেষে প্রানী শিশু আকারে জন্ম গ্রহন করে পৃথিবীতে আসে।
এব্যাপারে মহান আল্লাহ্ বলেন,
ﻓَﺈِﻧَّﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻛُﻢْ ﻣِﻦْ ﺗُﺮَﺍﺏٍ ﺛُﻢَّ ﻣِﻦْ ﻧُﻄْﻔَﺔٍ ﺛُﻢَّ ﻣِﻦْ ﻋَﻠَﻘَﺔٍ ﺛُﻢَّ ﻣِﻦْ ﻣُﻀْﻐَﺔٍ ﻣُﺨَﻠَّﻘَﺔٍ ﻭَﻏَﻴْﺮِ ﻣُﺨَﻠَّﻘَﺔٍ ﻟِﻨُﺒَﻴِّﻦَ ﻟَﻜُﻢْ ﻭَﻧُﻘِﺮُّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺣَﺎﻡِ ﻣَﺎ ﻧَﺸَﺎﺀُ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺟَﻞٍ ﻣُﺴَﻤًّﻰ ﺛُﻢَّ ﻧُﺨْﺮِﺟُﻜُﻢْ ﻃِﻔْﻼً – ‘
“অতঃপর আমরা তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে (নুফতা), জমাট বাঁধা রক্ত থেকে (আলক্বা), এরপর পূর্ণ আকৃতি (দায়রা) ও অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিন্ড থেকে (জনিন), তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমরা নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর শিশু অবস্থায় বের করি (তেফেলি)।” (সূরা হজ্জ ২২/৫)।
এভাবে দুনিয়াতে আসার পর আবার ফিরে যেতে হয় সেই গঞ্জমুখফিতে। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের আসা যাওয়ার পালা। কিন্তু এই মার্তৃগর্ভের বা জঠরের যন্ত্রতা অনেক ভয়ানক। স্রষ্টার দয়ার ফলে জন্মের পর আমরা সেই যন্ত্রনাকে ভুলে যাই। এটাকেই গূড় বা কবরের আজাব বলে। মূলত মাতৃগর্ভটাই কবব। এই কবরের আজাব থেকে কারো মুক্তি নেই, এমনকি ওলী-আল্লাহ, গাউস কুতুবদেরও না, অবতাররাও এই যন্ত্রনা ভোগ করে মানব কূলে জন্ম নেন।
তাই সাধনার দ্বারা জন্ম মৃত্যুকে বারণ করে নির্বান লাভের মাধ্যমে ওলী আল্লাহ, সাধু, মনি-ঋষীগন এই কবরের আযাব থেকে চিরমুক্তি লাভ করিতা স্রষ্টার সাথে মিলিত হন। এই স্তরকেই বাকা বিল্লাহর স্তর বলা হয়।
বাসনা থাকতে জীবের এই আসা যাওয়া বারণ হবে না। সে শত কোটি জনম এভাবেই ভ্রমন করতে থাকবে আর জঠরের যন্ত্রনা ভোগ করবে। জন্মমৃত্যু বারনের উপায় একটাই, সেটা হল বাসনাকে বর্জন করা। বাসনাই হল ‘কাম’। কাম শুধু যৌনতাই নয়। আমাদের বাসনা থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে, তবেই আমরা প্রকৃত মুক্তি লাভ করব। যাকে বলা হয় জন্মমৃত্যু বারণ বা নির্বান লাভ।
আমি সংক্ষেপে আভাস দিলাম, আর যতটা খোলাসা করে বলা সম্ভব সেটাও বললাম। বাকীটা নিজ নিজ গুরু কাছ থেকেই জেনে নিবেন। তবে যতটা প্রকাশ করেছি, এতোটুকুই বুঝে নিতে পারলে কম নয়, বাকীটা আপনি চিন্তা করলে বুঝে যাবেন।
বিঃদ্রঃ আসা যাওয়া শুধু মানব কূলেই নয়, পাপ কর্মের কারনে ৮৪ এর ফেরে পরে গিয়ে পশু কূলেও আসতে হতে পারে।
» জন্মান্তরবাদ (সবগুলো পর্ব পড়ুন)
লেখাঃ DM Rahat