জন্মান্তরবাদ (পর্ব-০৫)
জন্মান্তরবাদ নিয়ে সবার একই প্রশ্ন: যদি বার বার পৃথিবীতে আসা যাওয়া করতে থাকি, তবে কি কিয়ামত হবে না? কবরের আযাব কি মিথ্যা? হাশর হবে না? পুলসিরাত হবে না? মিজানের পাল্লা হবে না? জান্নাত জাহান্নাম কি নেই?
কিয়ামত দ্বারা সবাই বুঝি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হওয়াকে। কিন্তু এর হাকীকত কি? কিয়ামত এর হাকিকত হল; মৃত্যুই কিয়ামত। এই দেহ হল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড। যা আছে ব্রহ্মান্ডে তা আছে দেহভান্ডে। এই দেহেই রয়েছে চন্দ্র-সূর্য গ্রহ নক্ষত্র। এই দেহেই রয়েছে সাগর পাহাড়। এই দেহেই রয়েছে আরশ কুরসি লৌহ কলম।
কবর দ্বারা সাধারনত বুঝায় মানুষ মারা যাওয়ার পর যে গর্তে তাকে দাফন করা হয়ে, সেটাকেই। কিন্তু হাদিসে করবের আযাবের কথা বলা আছে সত্যি, তবে সেগুলো রূপক অর্থে। কারন অনেক মানুষ আছে, যাদের দাফন করা হয় না। তাহলে তাদের কবরের আযাব কিভাবে হবে? অথচ আল্লাহর রাসূল (স:) এর হাদিস থেকে জানা যায় যে, সবারই কবরের আযাব হবে অথবা জান্নাতের বাগান হবে কবর। তবে ত হাদিস মিথ্যা হয়ে যায়। মূলত কবর হলো মাতৃগর্ভ। যেটা অনেক আগেই উল্লেখ করেছি। সবাইকে এই করব বা আলমে বারজাখ অতিক্রম করেই হাসরে উঠতে হবে।
হাসরের মাঠ দ্বারা বুঝায় পরিনামের মাঠ। হাসর মানেই পরিনাম। পৃথিবীই হাসরের মাঠ। আমরা সবাই এখন পরিনামের মাঠেই আছি। পূর্বের জন্মের কর্মফল পাচ্ছি সবাই। ভালর বিনিময়ে ভাল পাচ্ছি, খারাপের বিনিময়ে খারাপ প্রতিদান পাচ্ছি। তাই ত কেউ জন্ম থেকেই অন্ধ, নেংড়া, বোবা হয়, আর কেউ হয় সুদর্শন। কেউ রাজার ঘরে জন্ম নেয়, আর কেউ জন্ম নেয় ভিখারীর ঘরে। কেউ বা আবার পশুকূলে জন্মগ্রহন করে।
মিজান তথা দাঁড়িপাল্লা হল পাপ ও পূন্য পরিমাপের কুদরতী যন্ত্র। যেটার মাধ্যমে মানুষের কৃতকর্ম গুলো পরিমাপ করা হবে। পাপ ও পূন্য ধরা ছুয়া যায় না, এগুলো ত বস্তুই নয়। তবে দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপের বিষয়টা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক। কিন্তু না! আল্লাহ অযৌক্তিক কিছু বলতেই পারেন না। মিজান এর হাকীকত হল মানুষের বিবেক। বিবেক মানুষকে পাপ ও পূন্যের পরিমাপ করে। এটা কম বেশি বিবেকবান মানুষ সবাই বুঝে। তাই একই কর্মের জন্য কেউ পাপী আবার কেউ পূন্যবান হতে পারে এই বিবেকের কারনে। যার বিবেক যেটাকে পাপ বলবে, সেটা তারজন্য পাপই, আর বিবেক যেটাকে পূন্য বলবে, সেটা পূন্য বা সওয়াব।
জান্নাত ও জাহান্নাম এই দুনিয়ার মাঝেই। তবে প্রকৃত জান্নাত মূলত একটাই। সেটা হল জান্নাতুল ফেরদাউস। যেটাকেই বলা হয় ‘নির্বাণ লাভ’ বা ‘জন্ম-মৃত্যু বারন’। এবিষয় নিয়ে পরে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব।
» জন্মান্তরবাদ (সবগুলো পর্ব পড়ুন)
লেখাঃ DM Rahat