জন্মান্তরবাদ (পর্ব-০১)
জন্মান্তরবাদ অর্থ হল এক জন্ম থেকে অন্য জনম। মৃত্যু বরনের পর আবার জন্ম গ্রহন করা, আবার জন্মের পর মৃত্যু বরন করা, এভাবে বারবার মৃত্যুর পর জন্ম এবং জন্মের পর মৃত্যু বরন করার উপর যে বিশ্বাস ও মতবাদ বা দর্শন রয়েছে, তাকেই জন্মান্তরবাদ বলে।
উল্লেখ্য যে, মৃত্যু হল স্থলদেহ ত্যাগ এবং জন্ম হলো নতুন দেহ গ্রহন। আত্মা অবিনশ্বর। মৃত্যু বলতে শুধুই দেহ থেকে আত্মা বের হয়ে যাওয়াকে বুঝায় এবং জন্ম বলতে সেই বের হয়ে যাওয়া আত্মা আবার নতুন কোনো স্থল দেহ ধারন করে পৃথিবীতে আগমন করাকে বুঝায়। আমরা যেমন দেহ থেকে কাপড় পাল্টাই, আত্মাও তেমন দেহ পাল্টায়। আমরা যেমন ছেঁড়া ও পুরাতন কাপড় ফেলে নতুন কাপড় পরিধান করি, আত্মাও তেমন জরাজীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহন করে।
আত্মার এই আসা যাওয়ার কারন হল তার বাসনা ও কর্ম। বাসনা পূরন ও কর্মের ফল ভোগ করার জন্যেই জীব বার বার বিভিন্ন যোনীতে আসা যাওয়া করে। কর্ম ভালও হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। ভাল কর্মের জন্যেও জন্ম গ্রহন করতে হয়, আবার খারাপ কর্মের জন্যেও জন্ম গ্রহন করতে হয়।
খারাপ কর্মের ফল ভোগের জন্য জন্ম গ্রহনটা হয়তো সবাই বুঝে ও মেনে নেয়, কিন্তু ভাল কর্মের ফল ভোগের টা অনেকেইই মানতে চায় না। এর কারন হল জন্ম-মৃত্যু বারন হওয়া বা নির্বান লাভ করা। সবাই এটাই জানে যে ভাল কর্মের ফলেই নির্বান লাভ বা জন্ম-মৃত্যু বারন হয়ে মহামুক্তি লাভ হয়। এটা সত্য যে জন্ম-মৃত্যু বারন হয় উত্তম কর্মের দ্বারাই।
ভাল কর্মের ফল ভোগের জন্যেও কোনী জ্ঞানী জন্ম গ্রহন করার মত ইচ্ছা পোষণ করে না, কারন জঠর ব্যদনা খুব ভয়াবহ, যেটাকে গোড় আযাব বা কবরের আযাব বলা হয়। এই গোড় আযাব থেকে কেউ রক্ষা পায়নি, যাদের জন্মগ্রহন করতে হয়েছে। যেটা হল মাতৃগর্ভের নয় মাস দশ দিন। মাতৃ গর্ভটাই কবর। কেউ কেউ দেহকেই কবর বলেছেন, সেটা তাদের মত, আমাদের মতে মাতৃগর্ভই কবর। (আমি আমার মতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে অন্যদের মতকে অবজ্ঞা করতে চাচ্ছি না। তবে যদি প্রয়োজন হয়েই পরে, তবে আগামী পর্বে পাঠকদের চাহিদার উপর বিবেচনা করে লিখব)। এই জঠর যন্ত্রনার জন্যেই কেউ ভাল কর্ম্ফল ভোগের জন্যেই জন্ম গ্রহন করতে চায় না। ভাল কর্মের জন্যে তখন জন্ম গ্রহন করতে হয়, যখন সেখানে বাসনা থাকে।
যেমন কেউ ভাবল “আমি খাওয়াইলে আল্লাহ আমাকে উত্তম খাবার দিবে, আমি দান করলে আল্লাহ আমাকে অনেক ধনী বানাবে”। এরূপ ভাবার ফলে আল্লাহ সেই ব্যক্তির বাসনা পূরনের জন্যে তাকে আবার পৃথিবীতে পাঠাবে, তবে আগের চেয়ে উত্তমরূপে। এই বাসনাযুক্ত কর্মের জন্যে সে মূক্তি লাভ করবে না, তবে উন্নত জীবন লাভ করবে। তাই কেউ ধনীর ঘরে জন্ম গ্রহন করে, আবার কেউ গরীবের ঘরে। ভাল কর্ম তখনই মুক্তির কারন হবে যখন তা শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হবে। তাই শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে, বাসনা থাকিতে জীবের আসা-যাওয়া (জন্ম-মৃত্যু) বারণ হবে না।
২য় পর্বে কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দেওয়ার চেষ্টা করব জন্মান্তরবাদের ব্যাপারে। যেন সবাই জানতে পারে, ইসলাম এ নিয়ে কি বলে?
- ২য় পর্বের লিংকঃ জন্মান্তরবাদ (পর্ব-০২)
- » জন্মান্তরবাদ (সবগুলো পর্ব পড়ুন)
লেখা: DM Rahat