সবকিছুর মূল হোতাই তুমি অব্যয়
১.
“কত রঙ্গে খেলছ সাইঁ,
বহুরূপী রং ধরেছ,
তারই কোন অন্ত নাই-
সর্বজীবে তাকাইলে পাই,
প্রাণ গেলে তুমি নাই।”
“বহুরূপে ভাব ধরিয়া,
খেলছ খেলা শক্তি দিয়া –
আছ কোন ভাবের স্বভাব ধরিয়া,
সেই স্বভাব কোথায় পাই।”
২.
“গড়াইয়াছ এই পৃথিবী আনন্দ মনে,
কত ছবিঁ আকঁ তুমি নিজ গুনে-
আকাঁ আকিঁ মুছা-মুছি,
তোমারি নিজ গুণে।”
“এই সৃষ্টি তোমার,
গোপনে খেলাও কি খেলা-
ভাঙা গড়া তোমার লীলা,
দোষী কর আমারে কেনে।”
“স্রষ্টা তুমি, সৃষ্টিও তুমি,
ফুলও তুমি, ফলও তুমি-
ভ্রমর হয়ে মধু খাও তুমি,
হিসাবে দোষী আমি কেনে।”
“সাধক কবি শাহ্জাহানে সর্বক্ষণ চলে,
তোমার গুণে- তোমার কর্ম তুমি কর,
আমি দোষী কোন কারণে।”
৩.
“যার ভাগ্যে সাইঁ, যা রাইখাছে-
মিছে শুধু ঘানির মতো,
মুখোশ বাধা ঘুরছে পাছে।”
“অনাদি অনন্ত রূপ ধরে,
নিত্য আকারে জড়িয়ে আছ ব্রহ্মান্ড জুড়ে-
বহুরূপে রূপসী তুমি,
কোন রূপে আমি দেখবো তোরে।”
“নিরানব্বই নাম আছ ধরিয়া,
ভূতের মত গল্প শুনি পাইনা খোজিয়া-
অদ্ভুত রূপ দেখাও দয়া করিয়া,
লিলা নিত্য ছলনা ছেড়ে।”
“সৃষ্টির রহস্যের খেলা,
তুমি না বুঝালে কে বুঝিতে পারে-
কেউরে জ্ঞানী কেউরে গুণী,
কেউরে দোষী করছ পরে।”
– সংযমের সংবিধান কিতাব: সাধক কবি শাহজাহান শাহ মস্তান (আ:)
মন্তব্য:
আল্লাহপাক আপনি নিজেই তো মানুষকে কৌশল করে বিভিন্ন রঙে ও মতভেদে বিভক্তি করে রেখেছেন। আবার আল্লাহপাক আপনি বললেন “আমি চাইলেই সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসতে পারি “। তাই আল্লাহপাক আপনি আমাদের যেমনে হাসাবেন তেমনি হাসবো, আবার যেমনে কাঁদাবেন তেমনি আমরা কাঁদবো। চরম সত্যে আল্লাহপাক আমরা আপনার হাতের পুতুলমাত্র। কারণ আপনার ইশারা ব্যতীত গাছের একটি পাতাও নড়ে না। কারণ সবকিছুর মূল হোতাই আপনি। আপনিই কৌশল করে কেউরে গুণী, কেউরে জ্ঞানী আবার কেউরে দোষী করে রেখেছেন। ভ্রমর হয়ে মধু আপনিই খান, দোষ হয় মানুষের। তুমি কৌশল করে আযাজিল আ: কে বাধ্য করলে কলঙ্কের মালা গলায় নিতে। কারণ তুমি থাকবে নিরপেক্ষ । সত্যদ্রষ্টা আদমের রূপ ধরে নিষিদ্ধ বৃক্ষের স্বাদ কিন্তু তুমিই নিয়েছ কিন্তু দোষী করলা আদম ও তার সন্তানদের। তুমি কর্তা তোমার ইচ্ছাই কর্ম বন্টন হয়। তুমি আইন কর আবার তুমিই আইন ভাঙ্গে ফেল।তুমি নাকি ইশকের কাছে দুর্বল তাই প্রেমিককে আইন থেকে মুক্তি দিলা। মানুষকে আপনি দোষ করার তকদীর দিয়ে বানিয়েছেন। তাই মানুষ দোষ করে। আপনি মানুষকে লোভী তথা ধর্মহীন ও অস্থির করে বানিয়েছেন, তাই মানুষ পুংটামি করে, আর আপনি আল্লাহপাক কৌশল করেন, আপনাকে তো আর পুংটা বলা যাবে না, আপনাকে সম্মান দিয়ে কৌশলদাতা বলতে হবে।তা না হলে আপনার দলের সদস্যরা কাহার রূপ ধারণ করবে। আমাকে সমোচিত শিক্ষা দিতে। আবার আপনিই চুপি চুপি বলতেছেন তোমাদের তকদীর খন্ডন করো, আমার চেহারা অর্জন করো। আবার একটু সীমিত স্বাধীনতাও দিয়েছ। আমরা যাতে তোমাকে অস্বীকার করতে পারি?
আবার আপনি বলেছেন, আপনার সৃষ্টিতে কোনো ভুল নাই। আসলেই কোনো ভুল নাই।সবই ঠিক আছে,তাই আপনি “লা মজুদা ইল্লাল্লাহু ” কুল্লে শাহিন মুহিত”।আপনি কাফের, মুরশিক, মুর্তাদ, নাস্তিক ও আস্তিকের খেলার নীল নকশা না করলে আপনার সৃষ্টি নামক হারমনীর সুর বাজবে না।তোমার এই সৃষ্টিতে সুর বাজাতে হলে পজেটিভ আর নেগেটিভ চরিত্র লাগবেই।কারণ আপনি হলেন সৃষ্টির পরিচালক, প্রজযোক কর্তা,আপনি যেভাবে চান সেইভাবেই সৃষ্টিনামক নাট্যমঞ্চে প্রযোজ্য কর্তারা তথা অভিনেতারা অভিনয় করে চলবে। এই জন্যই আপনি রবিঠাকুরকে কলম তুলতে বাধ্য করলেন :আমি জেনেশুনে করিলাম বিষপান, তাই কালান্দার জাহাঙ্গীর বলতে বাধ্য হল “সবচেয়ে বড় ত্যাগ, এই দুনিয়া তোমায় উপহার দিবে, সবচেয়ে বড় শাস্তি। তাই বিশ্বপ্রেমিক আমির খসরূ বলেছেন,” তুমি জিতে গেল আর আমি হেরে গেলাম।”
সারমাস্তের মুখ দিয়ে তুমি বলিয়েছ “তুমি প্রেমে বরবাদ হয়ে যাও, তার পরেও উও শব্দ করতে বারণ করেছ। আবার খাজার মুখ দিয়ে বলেছ ” প্রেমের কলঙ্কের মধ্যেও নাকি আনন্দ আছে ” আবার ইকবারের মুখ দিয়ে কতশত শিকোয়া করেছ।এইবার বলো আল্লাহ তোমার চরিত্র কেমন?না! তুমি তো আবার জুলজালাল ওয়াল ইকরাম “লা মজুদা ইল্লাহ” আপনি ছাড়া আবার কিছু নাই। যা কিছু রয়েছে সবটুকুই আবার তুমি।তোমার বাহিরে কিচ্ছু নাই।তাই তোমার এই বিশ্বনামক দেহটাকে তুমি পরিচয় করিয়েছ আহাদ নাম দিয়ে।এই আহাদের মধ্যেই তুমি অহেদ তথা রূহরূপে মানুষের মধ্যে উদ্ভাসিত হও।
তাই তুমি আবার হজরত শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া মুনিরী ওরফে মখদুম শাহ বিহারীর মকতুবাদে সাদি নামক বইতে এলমে মারফতের অতিউচু স্তরের কয়টি উপদেশ আপনি আমাদের দেন। এবং তার একটি উপদেশ নিম্নে তুলে ধরলাম।তিনি তার জৈনক মুরীদকে বলেছেন যে, জেনে রাখো বাবা, দুনিয়ার সবচাইতে বড় পাপী বলে গণ্য ব্যক্তিটি দুনিয়ার সবচাইতে উত্তম ব্যক্তির মাথা লাঠির দ্বারা আঘাতে জখম করলো বলে দেখলে, কিন্তু সেই আঘাত পাপী ব্যক্তি করে নিই।তুমি বলবে,তবে? আমি এখন যা বলবো উহা তোমার বিষেশ তথা খাস বন্ধু ছাড়া কাউকে বলবে না।জেনে রাখো,সেই লাঠির আঘাত সেই পাপী ব্যক্তিটি করে নি।কারণ, আল্লাহর ইশারা ছাড়া তার পক্ষে লাঠি তোলা অসম্ভব। তুমি বলবে, এটা কেমন কথা ? আমি বলবো, বাবা এখনো তুমি পর্দার ভেতরেই আছ। পর্দা যদি খোলতে পার তবে দেখতে পাবে যে, সবই তারই রহস্যময় লীলাখেলা। তুমি দেখতে পাবে পাবে যে, তিনিই বিচারক, তিনিই কৌশলী তথা উকিল, তিনি বাদী এবং তিনিই বিবাদী। কারণ তিনি ছাড়া কিছু নাই। আল্লাহর আহাদরূপের গুপ্তদর্শন এখানেই, যা তোমার কাছে অমিল আর বেমিল এবং কেমন জানি খাপছাড়া মনে হবে।মোকামে তৌহিদে না যাওয়া পর্যন্ত আহাদ রূপটি মৌখিক স্বীকৃতিরই নামান্তর।
(মারফতের গোপন কথা:কালান্দার জাহাঙ্গীর আঃ)
( আর এফ রাসেল আহমেদ )