তকদীর ও কর্মফল
তকদীর
তকদির কোরানিক শব্দ, তকদীরের বাংলা পরিভাষা হলো ভাগ্য, বিধি, নিয়তি, অদৃষ্ট ইত্যাদি। তকদীর তথা ভাগ্য শব্দের বাংলা অর্থ হলো কর্মবৃত্ত। কর্মবৃত্ত শব্দের অর্থ হলো যেমন কর্ম তেমন ফল। তাহলে কর্মই তকদীরের রহস্য। সুতরাং কর্মফলের মাত্রানুসারে মানুষের তকদীর রচিত হয়। যে যেইরকম কর্ম করে তকদীরের কলমটি ঐ রকমভাবে নফসের উপর কর্মফল লিখে থাকে। কালান্দার জাহাঙ্গীর আঃ বলেন “মানবদেহকে আল কিতাব বলা হয়। আল কিতাবের সর্বশ্রেষ্ঠ জাহেরী রূপ হলো এই মানবদেহটি এবং বিকাশ বিজ্ঞানটি হলো বাতেনী কর্মফল।” সুতরাং তকদীর হলো কর্মফল ভোগ করার প্রক্রিয়া। তকদীর মানুষের অধীন না মানুষ তকদীরের অধীন (?) মানুষ কি তকদীর বদলাতে পারে? তাহলে তকদীর কয় ধরনের? একটি হলো তকদীরে মোবরাম তথা অপরিবর্তনীয় তকদীর, অপরট হলো তকদীরে মোয়াল্লাক তথা পরিবর্তনীল তকদীর। অবশ্যই মানুষ তকদীর বদলাতে পারে তথা পরিবর্তন করতে পারে , যদি তদবীর করা যায়।
তদবীরে (দোয়া) তকদীর পরিবর্তন হয়। আল্লাহ পাক কোরানে বলেছেন ” এবং মানুষের জন্য কিছু ওই নাই, তাহার প্রচেষ্টা (কর্ম) ব্যতীত “(ওয়া আল সাইসা লিল ইনসানে ইল্লা মাআসা ৫৩:৩৯)। এই কর্মই জম্মের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে আমি বা আমরা কোন কর্মের প্রভাবে দুনিয়াতে আসলাম (?) কোন কর্মের কারণে একই সময় জম্মগ্রহণ করা দুইটি নবজাতক একজন সোনার চাদি মুখে নিয়ে পাঁচতলায় আরাম আয়েসে বড় হতে থাকে। আবার কোন কর্মের কারণে অন্যজন গাছতলায় জম্মায় পিতৃ পরিচয়হীন, দুঃখ – কষ্টে ফুটপাতে বড় হতে থাকে। তারা দুজন তো একই সময় জম্মগ্রহণ করছেন? তারা তো জম্ম গ্রহণ করেই কোন কর্ম করে নাই। কোন অজ্ঞাত কারণে উভয়ের মর্যাদার পার্থক্য হলো? আল্লাহ তো মহানিরপেক্ষ। তিনি তো কারোর উপর জুলুম করেন না, তিনি তো ন্যায় বিচারক। তাহলে উভয়ের জম্মের মর্যাদাগত পার্থক্য কেন? তাহলে কি পূর্বজম্মের কর্মফল নিয়েই কি দুজন নবজাতক একই সময়ে জম্মগ্রহণ করার কারনেই মর্যাদাগত পার্থক্য হয়ে যায়? তাহলে কর্ম অনুসারেই জম্মের পরিচয় হয়। উন্নত কর্মে উন্নত জীবন, হীন কর্মে হীন জীবন। কর্মফল শূন্য না হওয়া পর্যন্ত, এই কর্মের বীজই জম্মের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কর্মফল শূন্য না হওয়ার আগ পর্যন্ত নফস কর্মফলের মাত্রানুসারে জন্মচক্রে আবর্তিত হতে থাকবে। পৃথিবীতে কেউ খালি হাতে আসে না আবার খালি হাতে যায়ও না। সবাই কর্মফল নিয়ে জম্মগ্রহণ করে এবং কর্মফল নিয়েই নফস দেহ ত্যাগ করে। আমলনামা শূন্য না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে তকদীরের বৃত্তে ঘুরতে হবে। কোরান জানান দিচ্ছে এই তকদীরকে খন্ডন করে সর্বজনীন করতে। যেমন আগুনের তকদী জ্বালানো, জ্বালানো পুরানোই আগুনের তকদীর। এটা আগুনের তকদীরে মোবরাম।
প্রেমে আল্লাহ আগুনের তকদরটিও সাময়িক সময়ের জন্য শীতল করে দিলেন। যেমন আমরা কোরানের ২১ নম্বর সুরা আম্বিয়ার ৬৯ নং আয়াতে দেখতে পাই। (কুলনা ইয়া নারু কুনি বারদা ওয়া সালামুন আলা ইব্রাহিম) অর্থাৎ আমরা (আল্লাহ) বলিলাম, হে আগুন, শীল হইয়া যাও এবং ইব্রাহিমের উপর নিরাপদ (হও)। চরমপ্রেমে আল্লাহ তার আইন বদলিয়ে ফেলন।
যেমন কোরান বলছে মানুষের রক্ত খাওয়া হারাম, হযরত হযরত জাবিরে পিতা মালেক ইবনে সিনান রা: মহানবীর রক্ত মোবারক প্রান করার কারণে, মহানবী তাকে জান্নাতের সাটিফিকেট দিয়ে দিলেন। মহা নবীর প্রেমে হযরত ওয়েস করনী দাঁত মোবারক ফেলে দেবার কারণে মহানবী তাকে তার স্বীয় জুব্বা মোবারক দিয়ে সম্মানীত করেছেন। দোয়া থাকলে তকদীর পরিবর্তন হয়। কর্মের মাধ্যমেও তকদীর পরিবর্তন হয়। তকদীরে মোবরাম সহজে পরিবর্তন হয় না, চরমপ্রেমে আল্লাহর আইন সাময়িক সময়ের জন্য পরিবর্তন করে ফেলেন তার মাহবুবের জন্য। যাকে আমরা চমৎকার , কারামত, আশ্চর্য, বিস্ময়ের, মুজিজা বলে জানি।
কর্মের ফল: গান-১
কর্মছাড়া কেউ কোন দিন কিছু পায় না,
রূহানি কর্মে কি পাইয়াছ দেখ না-
বলছে বল ইয়া কালু বালা,
কেউ বললেন কেউ বললেন নাই।
যার যার কর্ম নিজে গড়া,
ক্ষুদ্র বিজ্ঞ আছে যারা –
সর্ব বিষয়ে আমল করেছে তাঁরা,
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ দেখ না।
কেউ গরীব কেউ দুঃখী,
প্রতি কাজে দেয় ফাঁকি-
মুখের কথায় প্র্যাক্টিক্যাল হয় কি,
ফাঁকি দিলে কেউ কিছু পায় না।
শিরি ফরহাদের আশা করে,
মানিক আনিতে পাহাড় কাটিয়া নাহার করে-
আয়ূর নবীর জন্য রহিমা ভিক্ষা করে,
ইব্রাহিম আগুনে থেকে পুড়ল না।
চন্দিদাস বাচাইল রজকীনিকে চিতায় পরে,
কর্মের গুণে বঞ্চিত হল না –
লাইলী মজনুর দেখনা প্রেমের ঘটনা,
জুলেখার প্রেমে ইউসুফ খন্ড হইল না।
বনের হরিণ কর্ম করে,
শাহজাহান কয় বাঁচিয়া রহিল এ সংসারে-
পরশের স্পর্শ পাইলে পরে,
লোহাও হইয়া যায়রে সোনা।
(সংযমের সংবিধান কিতাব: ১০৩ পৃষ্ঠা)
কর্মের ফল: গান-২
সব কাজে সব খানে,
আমল নামা ঠিক রাইখ সাবধানে,
সৃষ্টির খেজমত এবাদত এই ভুবনে,
প্রাণে মনে নাম জপনা।(অস্থায়ী ভাগ্য)
ভাগ্যের পরিহাস
এপাড় ভেঙ্গে ওপার গড়,
মহিমা তোমার –
কেউরে হাসাও কেউরে কাঁদাও এই ভব মাজার।
কেউবা মানে না তোমারে,
রাজ্যের রাজা কর তারে –
পলকে সর্ব হারা করে,
নিয়ে রাখ জেলের ঘরে।
বেশ ভূষনার বাহাদুরী,
হরণ কর সুন্দর নারী-
জীবন ভরা হাসি কান্না,
সত্য ফুটাও নাটকের পর।
কেউ হয়ে দীন ভিখারী,
অন্ন পায়না অনাহারী-
মায়া রাজ্য তেজ্য করি,
পাইয়া ধন বলে না আমার।
স্বার্থের লোভে সবাই ঘুরে,
আপন জন সব তেজ্য করে-
ভাগ্যের চাকা না ঘুরলে পরে,
শাহজাহান কয় মুক্তি পায় না কর্মের উপর।
(সংযমের সংবিধান ২২১পৃষ্টা)
কর্মের ফল: গান-৩
শুধু ধর্মীয় লেবাস পড়িলে,
আল্লাহ দর্শন পায় না-
কথায় কাজে ঠিক না থাকলে,
কর্ম ছাড়া কিছু মিলে না
সর্ব ভাষার পন্ডিত হইলাম,
সমাজের মানুষকে ঠকাইলাম-
গোপনে কত পাপ করিলাম,
আসলে ঠিক রহিলাম না।
এই পৃথিবীর ধান্দার খেলা,
এক দিন সবার ডুবে যাবে বলা-
কি জব দিবি হিসাবের বেলা,
পিছনে ভিডিও দেখাইবে যান না।
এই ধরনীর কর্ম ও আমল,
নিদানে সবাই পাবি ফল-
নেক ছাড়া সকলি বিফল,
তোমার জাবিন কেউ হবে না।
সময় থাকতে না বুঝিলা,
গনার দিন বিফলে কাটাইলা-
যায় দিন পাইনা ফিরিয়া,
হারাইলে পুঁজি ষোল আনা।
শাহজাহান শিশুর স্বভাব ধরিয়া,
দশ ইন্দ্রিয় জয় করিয়া- অখন্ড ভবে থাকিয়া,
রাখছে পুঁজি ষোল আনা।
(সংযমের সংবিধান ২৪৩ পৃষ্ঠা)
– আর এফ রাসেল আহমেদ