তুমি নিজেই ভক্ত, তুমি নিজেই পূজা।
তুমি নিজেই ভক্ত, তুমি নিজেই পূজা, তুমি নিজেই পূজারী এই কথার অর্থ বুঝতে পারলেই তোমার এ মানব জীবন স্বার্থক হবে। মানব রূপে এই ধরাধামে আগমন অপেক্ষা বড় কোনো পাওয়া তোমার হতে পারে না। সুফি মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি বলেছেন ” তোমার মাঝে এক হীরার ক্ষণি আছে তার অনুসন্ধান করো”। কোন সে হীরার ক্ষণির সন্ধান করতে বলে গিয়েছেন রুমি? যেদিন তুমি সেই হীরার ক্ষনির সন্ধান পাবে ওইদিন এই জাগতিক সুখ দুখ থেকে তুমি চিরতরে মুক্তি লাভ করবে।
তোমার ভিতরের এই হীরার ক্ষনি ও যে তুমি নিজে। তা কি তুমি বিশ্বাস করবে? তুমিই সব। বিশ্বাস করো, পৃথিবীতে তুমি ব্যতীত আর কিছু নেই এমন কি আমি ও না। আমি ও সেই তোমারই অংশ।
“তুমি নিজেকে চেনো।” এ কথা কতই না শুনলাম। কিন্তু এর ভাবার্থ আজো জানা হলো না। কি আছে এই আমার মাঝে? কিছু তো আছে আমার মাঝে তা না হলে সবাই নিজেকে জানার কথা কেনই বা বলবে।
যুগে যুগে যারাই আমাদেরকে নিজেকে জানার শিক্ষা দিয়েছেন আমরা তাদেরকেই নির্যাতিত নিপীড়িত করেছি। কোনো এক গৌতম যখন বোধী লাভ করে আমাকে সত্যের সন্ধান দিয়ে এসেছেন আমি তাঁকে পাথর ছুড়ে মেরেছিলাম। বেথেলহেম এর সেই লোকটি যখন আমাকে সত্য সাগরে অবগাহন করতে বলেছিলেন তখন আমিই তো নিজ হতে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করেছি। আরবের মরুভূমির সেই পরিচিত মুখ যখন হঠাৎ করে আমাকে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দিতে চাইলেন এই আমিই তো তাঁকে হত্যার জন্য সর্বপ্রথম তলোয়ার হাতে নিয়েছিলাম।
কোনো কালেই আমরা সত্যকে গ্রহণ করতে চাই নি। আমরা চেয়েছি নিজেকে মিথ্যা মায়ার ঘোরে অন্ধ করে রাখতে। আমরা কখন ও তা ভেবে ও দেখি নি যে আমি বাড়ি, গাড়ি, ধন সম্পদ নিয়ে ও মন খুলে হাসতে পারি না অথচ গাছের নিচে চোখ বন্ধ করে বসে থাকা সেই পাগল কি পেয়েছে? কিভাবে ভাসছে তাঁর মুখে এতো আনন্দ? সে কি পেয়েছে?
যে সত্যকে জেনে যায় তার আর কিছু পাওয়ার বাকি থাকে না। এই সত্যই সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। আর এ সত্য তুমি নিজেই। এটা শুনে বিশ্বাস করার বিষয় নয়। এটা উপলব্ধি করার বিষয়।
এ সত্য উপলব্ধি করেই তো মুনসর হাল্লাজ বলে উঠেন “আনাল হক ” অর্থাৎ আমিই সত্য। কারণ তিনি সেই মার্গে পৌঁছে দেখেন তাঁর থেকে বড় আর কোনো সত্য নেই। এখানে পৌঁছে জুনায়েদ বোগদাদি বলেন আমার জুব্বার নিচে প্রভু ব্যতীত আর কিছুই নেই। সেখানে পৌঁছে জুনায়েদ দেখেন, জুনায়েদ আর প্রভু এক বিন্দু পরিমাণ বেধাবেদ নেই। একইভাবে সেই নিজের পরিচয় জানতে পেরে উপনিষদের মুনি বলে উঠেন “ওহম ব্রক্ষ্মাস্মি” অর্থাৎ আমি ব্রহ্মা।
এখানে কোনো দুই নেই সব এক। আর যেইদিন তুমি নিজেকে সেই মার্গে নিয়ে এক কি উপলব্ধি করতে পারবে সেই দিন তোমার নিজেকে চেনার যাত্রা সফল হবে। এ যাত্রা বাইরের কোনো পথে নয় নিজের ভেতরেই। এ যাত্রা আত্মজাত্রা। আর যে নিজেকে বাইরে খুজতে গিয়েছে সে প্রথম দিন থেকেই ভুল পথে হাঁটছে। তার যাত্রার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
আর কতকাল অন্ধকারে পড়ে থাকবন। আসুন না নিজেকে আলোকিত করি। আসুন না নিজেকে জানার পথে যাত্রা শুরু করি। সময় যে বসে নেই। সময় গেলে সাধন হবে না।
লেখা: AR Junayed Hasan