মানুষ জন্ম-মৃত্যুর আবর্তে এক স্তর হইতে অন্য স্তরে উত্থান-পতন
মানুষ জন্ম-মৃত্যুর আবর্তে তাহার আমল অনুযায়ী এক স্তর হইতে অন্য স্তরে উত্থান-পতনের মধ্যে ভ্রমণ করিতেই আছে। এই কথা শপথ করিয়া বলা হইতেছে তিনটি রূপক বর্ণনার সাহায্যে।
সূর্যের অস্তরাগ কর্ম জীবনের আপাত সমাপ্তির ইঙ্গিত বহন করে। রাত্রিকে বিশ্রামের প্রতীকরূপে উল্লেখ করা হইয়াছে। তাহাদের জন্য যাহারা নিজ নিজ গৃহে আসিয়া রাত্রে আশ্রয় গ্রহণ করে।।
এই দুইটি শপথ বাক্যের মধ্যে জন্ম-মৃত্যুর আবর্তের ইঙ্গিত দেওয়া হইয়াছে। তারপর চন্দ্রের শপথ যাহা উদিত হইয়া বা দৃশ্যমান হইয়া ক্রমশ বর্ধিত হইতে থাকে পূর্ণতার দিকে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্বর্গীয় নূর পূৃর্ণ চন্দ্ররূপে বিরাজ করে। কিন্তু মানুষের শেরেকের দ্বারা তথা মোহের আবরণে উহা তাহার মধ্যে প্রচ্ছন্ন হইয়া থাকে।।
সৎকর্ম বা সালাতে অনুশীলন দ্বারা উহার বিকাশকে নিজের মধ্যে ধাপে ধাপে জন্ম-জন্মান্তরে ক্রমশ বর্ধিত করিয়া তুলিতে হয়। ইতর জীবজগত হইতে মনুষ্য জীবনে আসিবার পর দুই-এক জীবনে পূর্ণ চন্দ্রের উদয় ঘটাইয়া তোলা সম্ভবপর হয় না। ইহার জন্য একান্তভাবে অবিরাম ইচ্ছা পোষণ করিতে হইবে সৎকর্মের সাহায্যে।।
আমলের ভাল-মন্দ অনুসারে মানুষের উত্থান-পতন হয়। সুতরাং নরক ও স্বর্গের অনেকগুলি স্তর অতিক্রম করিয়া মুক্তির স্তরে পৌঁছিতে হয়। মুক্তির স্তরে পৌঁছিবার চেষ্টা না করিলে জীবজগতে মানুষের অনন্ত ভ্রমণের শেষ নাই।।
প্রধান স্তর তিনটিঃ পশু জীবন, জাহান্নামের জীবন এবং জান্নাতের জীবন। পশু জীবনে বহু স্তর আছে। জাহান্নাম এবং জান্নাতের জীবনেও সাতটি করিয়া স্তর আছে বলিয়া উল্লেখ পাওয়া যায়। কঠোর সাধন বলে দুই-এক জীবনেই জাহান্নাম ও জান্নাতের স্তরগুলি অতিক্রম করা সম্ভব হইতে পারে।
– ব্যাখ্যা: ১৬-১৯ সূরা-ইন্’শিকাক্
– কোরান দর্শন (সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী)