আকারসমূহ থেকে নিযুক্তির তা-সিন (মনসুর হাল্লাজ)

আকারসমূহ থেকে নিযুক্তির তা-সিন (মনসুর হাল্লাজ)

১. এটি রূপকের বৃত্ত এবং এ সেই চিএ যা প্রপঞ্চটিকে হাজির করে।

আকারসমূহ থেকে নিযুক্তির তা-সিন (মনসুর হাল্লাজ )
ছক: বাকবৈশিষ্ট রূপকের বৃত্ত

২. এটি এমন একটি সমগ্র যা আমাদেরকে দিতে পারে বাকবৈশিষ্ট এবং বাক্যসমূহ এবং সুদক্ষ ব্যক্তিবর্গকে দিতে পারে ধর্মবিশ্বাস এবং সম্প্রদায়, এবং নীতি ও পদ্ধতি।

৩. প্রথম বৃত্তটি হলাে আক্ষরিক অর্থ, আর দ্বিতীয়টি আভ্যন্তরীণ অর্থ, আর তৃতীয়টি হলাে পরোক্ষ-উল্লেখ (allusion)।

৪. এটি হলাে সমস্ত বস্তুর একটি সমগ্র, সৃষ্ট এবং বিন্যস্ত, জবাব হিসেবে প্রদত্ত, যা কিছু পায়ে মাড়ানাে হয়েছে, যা-কিছুকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যা-কিছু স্ববিরােধ সৃষ্টি করে, যা-কিছুকে প্ৰঞ্চিত ও হতচেতন করা হয়েছে।

৫. ব্যক্তিদের কর্তার সর্বনাম ‘আমরা’ রূপে তিনি নিজেকে প্রচার করেন। তীরের মতাে তাদেরকে বিদ্ধ করেন। তাদের প্রয়ােজনে নিজেকে প্রস্তুত করেন, তাদেরকে বিস্মিত করেন এবং তাদেরকে উল্টে ফেলেন, এবং তিনি অতিক্রম করে যাবার মাধ্যমে তাদেরকে বিহবল করেন।

৬. এখানে আছে সৃষ্ট দ্রব্য এবং সমস্ত গুণ-এর সমগ্র। এই সব উপকথায় আল্লাহর কিছুই করার নেই।

৭. যদি আমি বলি: “তিনি হলেন তিনি, এ ধরনের বর্ণনা তাওহীদ নয়।

৮. যদি আমি বলি, আল্লাহর একত্ব একটি বৈধ ব্যাপার, তাহলে তারা আমাকে বলবে, তাতে সন্দেহ কী?

৯. যদি আমি বলি, এটি কালসম্পর্কহীন। তারা বলবে, তাওহীদের অর্থ কি তাহলে উপমা? কিন্তু আল্লাহ্ বর্ণনায় তুলনার কোনাে জায়গা নেই। তােমার তাওহীদ আল্লাহ্ বা সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্করহিত, কেননা সময়-সংখ্যা প্রকাশের ঘটনা একটি সীমাবদ্ধতার অবস্থাকে সামনে আনে। সেটা করতে গিয়ে তুমি তাওহীদে নতুন অর্থ যােগ করছাে, যেন সেটা একটা আকস্মিক (contingent) ব্যাপার। যাহােক, আকস্মিকতা আল্লাহর বিশেষণ নয়। তার সারসত্তা অনন্য। আর সত্য ও অবাস্তব উভয়েই সারসত্তার সারসত্তা থেকে বিকিরিত হতে পারে না।

১০. যদি আমি বলি: তাওহীদ হলাে শব্দটি নিজেই’, শব্দটি হচ্ছে সারসত্তার একটি বিশেষণ, নিজেই সারসত্তা নয়।

১১. যদি আমি বলি: “তাওহীদের অর্থ হলাে আল্লাহ্ একক (পরম) হতে চান”, স্বর্গীয় আকাঙ্ক্ষা সারসত্তার একটি বিশেষণ এবং সব আকাঙক্ষাই সৃষ্ট ব্যাপার।

১২. যদি আমি বলি: আল্লাহ্ হলেন সারসত্তার একত্ব যা নিজেরই ক্ষেত্রে ঘােষিত’, তাহলে আমি সারসত্তাকেই তাওহীদ গণ্য করছি যা সম্পর্কে কোনােকিছু বলা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।

১৩. যদি আমি বলি: না, এ তাে সারসত্তা নয়, তাহলে আমি কি বলি যে তাওহীদ একটি সৃষ্ট ব্যাপার?

১৪. যদি আমি বলি: নাম এবং যে বস্তুর নাম দেয়া হয়েছে উভয়ে এক’ তাহলে তাওহীদের কী তাৎপর্য থাকে?

১৫. যদি আমি বলি: আল্লাহ হলেন আল্লাহ’ তাহলে আমি কি বলি যে, আল্লাহ্ হলেন সারসত্তার সারসত্তা এবং বলি যে, তিনি হলেন তিনি?

১৬. এখানেই হলাে সেই তাসিন যা দ্বিতীয় স্তরের কারণসমূহের অস্বীকারকে বিষয়। করে তােলে এবং মাঝখানে ‘না’ লিখিত এই বৃত্তগুলােই তার ছক:

Untitled design 2 1 1
ছক: বােধশক্তি রূপকের বৃত্ত

১৭. প্রথম বৃত্তটি অনন্তপূর্ব, এবং দ্বিতীয়টি বােধশক্তি দ্বারা উপলব্ধির, তৃতীয়টি মাত্রাসমূহের (ডাইমেনশনস) এবং চতুর্থটি জ্ঞান দ্বারা উপলব্ধির বিষয়।

১৮. সারসত্তা (পরম) বিশেষণবিহীন নয়।

১৯. প্রথম অন্বেষণকারী জ্ঞানের দরজাটি খােলে এবং দেখতে পায় না। দ্বিতীয়জন শুদ্ধতার দরজাটি খােলে এবং দেখতে পায় না। তৃতীয়জন উপলব্ধির দরজাটি খােলে এবং দেখতে পায় না। চতুর্থজন তাৎপর্যের দরজাটি খােলে এবং দেখতে পায় না। কেউই বলে না আল্লাহ তার সারসত্তায় না তার আকাঙ্ক্ষায়, তার বাচনে, না তার তিনিত্বে।

২০. মহিমা আল্লাহর প্রতি যিনি পবিত্র এবং তার অলঙ্নীয়তার কারণেই যিনি গুপ্তজ্ঞানীদের সমস্ত পদ্ধতির অতীত, এবং প্রত্যাদেশ পাওয়া লােকদের প্রজ্ঞারও অতীত।

২১. এখানে আছে অস্বীকৃতি ও স্বীকৃতির তাসিন, এবং এইভাবে তাকে হাজির করা যায়:

Untitled dessssssssign 3
ছক: জ্ঞান রূপকের বৃত্ত

২২. প্রথম সূত্রের বিষয় সাধারণ মানুষের চিন্তা এবং দ্বিতীয়টি নির্বাচিতজনের, এবং যে বৃত্ত প্রকাশ করে আল্লাহর জ্ঞানকে, সেটি আছে দুয়ের মাঝখানে। না’ সমূহ যা বৃত্ত দিয়ে ঘেরা তা হলাে মাত্রাগুলাের অস্বীকার। দুটি ‘হে’কে সন্নিবেশিত করা হয়েছে তাওহীদের দুপাশে দুটি স্তম্ভের মতাে করে, যারা তাকে উচ্চে তুলে ধরে। তাদের ঊর্ধ্বে উঠেই নির্ভরতার যাত্রা শুরু হয়।

২৩. সাধারণজনের চিন্তা ডুবে যায়। নিমজ্জিত হয় চিত্রকল্পের সমুদ্রে এবং নির্বাচিতজনের চিন্তা ডুবে যায় বােধের সমুদ্রে। কিন্তু এই দুই সমুদ্রই শুকিয়ে যায়, আর তা যে পথকে চিহ্নিত করে তা মুছে যায়, দু’ধরনের চিন্তাই অদৃশ্য হয় এবং দুটো স্তম্ভ ভেঙে পড়ে এবং সত্তার দুই জগৎ ধ্বংস হয়, প্রমাণসমূহ ও জ্ঞান লুপ্ত হয়ে যায়।

২৪. আল্লাহর শুদ্ধ স্বর্গীয়ত্বের পাশে, তিনি থেকে যান, অধীন বস্তুসমূহের ইন্দ্রিয়গােচরতার উর্ধ্বে, প্রশংসা আল্লাহর প্রতি যিনি দ্বিতীয় স্তরের কারণসমূহের স্পর্শের উর্ধ্বে। তার (পরম) প্রমাণ অকাট্য এবং তার ক্ষমতা মহিমাময়। তিনি (পরম) উৎকর্ষ এবং মহিমা এবং মর্যাদার মালিক। গণিতের ঐক্য দ্বারা তিনি অগণনীয় একক। কোনাে সংজ্ঞা, কোনাে গণনা, কোনাে আরম্ভ কোনাে লক্ষ্য তাকে স্পর্শ করে না। তার অস্তিত্ব মর্মররূপ যেহেতু তিনি অস্তিত্ব থেকে রহিত। তিনি নিজেই কেবল নিজেকে জানেন, মর্যাদা এবং মহানুভবতার প্রভু। আত্মসমূহ ও শরীরের স্রষ্টা।

মূল: মনসুর হাল্লাজ, কিতাব আল-তাওয়াসিন

ভাষান্তর ও সম্পাদনা: রায়হান রাইন

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel