মেরাজ তত্ত্ব (পর্ব-০১)
মেরাজ শব্দের সাধারণ আভিধানিক অর্থ হল উর্ধ্বলোকে গমন। যার আরেক ভাব অর্থ হল আল্লাহর সাথে দেখা-সাক্ষাত। এটাকে কুরআনে ‘ইসরা’ও বলা হয়েছে। সাধারণ ভাবে আমরা মেরাজ বলতে বুঝি মুহাম্মদ (সঃ) পঞ্চম হিজরীতে যেই রাতে সপ্তম আকাশে পরিভ্রমণ করেছিলেন এবং আল্লাহর সাথে দেখা সাক্ষাত করেছিলেন। মেরাজের রাতের এই সময়সীমা ছিল ২৭ বছর। কিন্তু রাসূল (সঃ) ফিরে আসার পরও দেখা গেছে যে তার অযূর পানি এখনও নিচে বেয়ে পড়তেছে এবং দরজার ছিকল এখনও নরছে। অনেকটা পলকে ঝলকের মত সময়।
মেরাজে গমনের সাথে যে বিষয়গুলো জড়িত ছিল তা হল, বোরাকে চরে প্রথম আসমান থেকে চৌঠা আসমানে পৌঁছানো, তারপর চৌঠা আসমান হতে আবার রফরফ নামক নতুন বাহনে করে সপ্তম আসমানে সিদরাতুলমুনতাহায় পৌঁছানো। রফরফের গতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে এটা মূহূর্তের মধ্যে সপ্ততালা আসমান জমিন ভেদ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে রফরফ এর কোনো চিত্র অংকিত না হলেও বোরাকের কিছু কাল্পনিক চিত্র অংকিত করা হয়েছে তাফসীরগুলোর আলোকে। যেখানে বোরাকের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যে, বোরাক এর চেহারা একটি নারীর চেহারা, বোকারে পা ঘোড়ার পায়ের মত, দুই পাশে দুইটি বাজ পাখির বা পরীর পাখা, সীনা হল বাঘের সীনার মত, আর পিছনের অংশটা ময়ূর পেখমের মত।
আরেকটা বিশেষ বিষয় মনে করা হয় মেরাজের ক্ষেত্রে, সেটা হল সেইদিন রাসূল (সঃ) উম্মে হানীর ঘরে ছিলেন। এই বিষয়টার তেমন কোনো গুরুত্ব যদিও নেই, তবুও একদল ভ্রান্ততত্ত্ব জ্ঞানসম্মন্ন ব্যক্তিরা এটা নিয়েই বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলে। মূলত সেইদিন রাসূল (সঃ) যে ঘরেই থাকত বা একাও যদি থাকত তাহলেও সেইভাবেই মেরাজ হত যেভাবে মেরাজ হয়েছিল। মূলত তখনও রাসূল (সঃ) একাই ছিলেন, একা না হলে মেরাজ হত না, তখন তার সঙ্গী ছিলেন শুধু জীবরাঈল (আঃ)। তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল মেরাজের রাতে রাসূল (সঃ) মক্কা হতে মসজিদুল আকসায় গমন করেন। মক্কা হতে মসজিদুল আকসার দূরত্ব সম্পর্কে রাসূল বলছেন যে ‘চল্লিশ বছর সময় লাগবে’। এখানেও অনেক গভীর ভেদ রয়েছে, কারন হেটে গেলেও চল্লিশ বছির লাগার কথা না, আর আজ কাল ত উড়োজাহাজ এ যাওয়া যায়। তাই এই দুরুত্বেরও রয়েছে গভীর ভেদ, যা রাসূল (সঃ) রূপক ভাবে বুঝিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করার জন্য রাসূলকে কেন সপ্তম আকাশে যেতে হল? দুনিয়ায় কি তাহলে আল্লাহ নেই? যে আল্লাহ আকাশে দেখা দিতে সক্ষম, তিনি কি দুনিয়ায় দেখা দিতে পারতেন না?? আর বোরাক কি এমন বাহন যা কি না চতুর্থ আসমান পর্যন্তই যেতে পারল? সপ্তম আসমানে যেতে কেনই বা রফরফ এর প্রয়োজন হল? রাসূল (সঃ) কি আসলেই বোরাক নামক কোনো জন্তুর পিঠে চরে আসমানে গিয়েছিলেন? নাকি সেটা ছিল রূপক? বোরাকের আকৃতি কেন-ই বা এমন করা হল? ২৭ বছর অতিক্রম হল অথচ দুনিয়ার কোনো কিছুর পরিবর্তন কেন হল না?
লেখাঃ DM Rahat
আরো পর্ব