মেরাজ তত্ত্ব (পর্ব-০৪ : শেষ পর্ব)
সূফীবাদীরা মিরাজের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা যদিও দেয় এবং বিশ্বাস করে যে প্রতিটি মুমিন নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর দেখা সাক্ষাত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করে থাকে অর্থাৎ নামাজেই মুমিনের মেরাজ হয় (হাদিস অনুসারে), তবুও তারা ২৭ রজবকে একটি বিশেষ দিন হিসেবে অনেক ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন এবং বিশ্বাস করেন যে এই দিনেই রাসূল আল্লাহর সাথে দেখা সাক্ষাত করেছিলেন।
এখন আসল কথায় আসি, রাসূল (সঃ) নিঃসন্দেহে শরীরে সপ্তম আকাশ ভ্রমন করেছিলেন এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। কিন্তু বাহ্যিকভাবে শবে মেরাজের যে বর্নণা দেওয়া হয় তা যদি সত্যিই হয় তাহলে মেরাজের আধ্যাত্মিক কোনো ব্যাখ্যাই থাকে না। কারন মসজিদুল হারাম থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস এর দূরত্ব সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেছেন ৪০ বছরের পথ (সেটা যেভাবেই হোক)। অথচ মেরাজ হইছিল ২৭ বছর সময়সীমা নিয়ে। তাহলে বাহ্যিক বিচারে মিরাজের তেমন ত কোনো সত্যতাই নাই। যা ই হোক সূফীবাদীরা মেরাজের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাই মানেন।
এখন প্রশ্ন হল ২৭ রজবকে এতো প্রাধান্য দেওয়ার কি আছে বা এই দিনে বিশেষভাবে প্রার্থণা করার উদ্দেশ্য কি?? উল্লেখযোগ্য কোনো দলীল আছে কি?? আমার জানা নেই এই দিনে বিশেষ ইবাদতের কোনো দলীল আছে কি না রাসূল (সঃ) কর্তৃক। আচ্ছা যারা ২৭ রজবকে এতো প্রাধান্য দেয়, তারা কি তবে মনে করে যে রাসূল (সঃ) জীবদ্দশায় মাত্র একবারই এই রাতে মেরাজে গিয়েছিল এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করেছিল?
যেখানে একজন মুমিন ব্যক্তি তার সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে প্রতি মূহূর্তে মেরাজ করতে সক্ষম এবং মেরাজ করেও থাকেন মুমিনগন। কারন আল্লাহর রাসূল বলেছেন ‘নামাজের মুমিনের মেরাজ হয়”। সেখানে মুমিনদের সর্দার এবং সারা সৃষ্টিকূলের বাদশা যিনি, তিনি মাত্র জীবনে একবার মেরাজ করবেন??? আর এই মেরাজ তার জন্য কষ্টসাধ্য বা দূর্লভ কিছু ছিল যে তিনি মেরাজ করেছেন বিধায় এই দিনকে এতো প্রাধান্য দেওয়া লাগবে?
শুনুন, আপনাদের কাছে সাইকেল চালিয়ে ১ কিলোমিটার যাওয়া যতটা না সহজ, রাসূল (সঃ) এর জন্য মিরাজ তার চেয়েও সাধারন বিষয়। শুধু তাই নয় মুমিন তথা ওলী আল্লাহগণ সালাতের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই মেরাজে গমন করেন।
আর বিশেষ রাতের ফজিলতের কথা বলছেন, তাহলে শুনুন “আল্লাহ তা‘আলা ‘ প্রতি রাতের শেষাংশে–শেষ তৃতীয়াংশে’ – নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন ‘এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” [বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, মুসলিম হাদীস নং ৭৫৮]
উপরের হাদিসে খেয়াল করে দেখুন, প্রত্যেক রাত এর কথা বলা আছে। প্রত্যেক রাত। কেবল শবে বরাত বা শবে কদর না, বা শবে মেরাজ না। প্রত্যেক রাত। আর উল্লেখ্য যে, শবে বরতের ফজিলতের ক্ষেত্রে সবাই উপরের ফজিলতের কথাই বলে, অথচ এটা প্রতিদিনের ফজিলত। সেই হিসেবে প্রতিটিদিনই মুমিনদের জন্য শবে মিরাজ।
অবাক লাগে তখন, যখন দেখি গুরুবাদীরাও এই দিনিটাকে কোনো বিশেষ দিন ভাবে।
আশেকান বান্দারা ত আল্লাহকে সব সময় অনুভব করে তাদের হৃদয় দ্বারা। আল্লাহ তাদের ডাক শুনেনও। তবুও কেন যে তারা এরকম বিশেষ দিন নির্ধারণ করে নিয়েছে আমার বুঝে না আসে।
কোনো আল্লাহর আশেকান বান্দা যদি আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ অবশ্যই তার ডাকে সাড়াদিবেন প্রতিরাত, প্রতিদিন, প্রতিক্ষন। তবে এই বিশেষ দিন কেন!!!! তবে কি বান্দার প্রতি আল্লাহর নিত্য ভালবাসাকে খাটো করে দেখার জন্যেই এই স্পেসিয়াল দিনের আবির্ভাব করলেন আপনারা!!! যেমন ভাবে মানুষ ভালাবাসা দিবস বানাইছে, মা দিবস বানাইছে, পিতামাতা দিবস বানাইছে, আপনারাও কি সেরকম নাকি! সারা বছর কোনো খবর নাই, আর একদিনে ভালাবাসা একদম ভাতের মারের মত উতলিয়ে পড়ে।
দয়া করে আল্লাহর মহত্ব ও ভালবাসাকে একদিনে সীমাবদ্ধ করবেন না। তিনি তাঁর বান্দাকে প্রতিদিনই সমানভাবে ভালবাসেন।
লেখাঃ DM Rahat
মেরাজ এর হাকিকত সম্পর্কে জানার জন্য পূর্বের পোস্টগুলো পড়তে চাইলে নিচের লিংক গুলোতে প্রবেশ করুন:
আরো পর্ব