প্রত্যেক রসুলই স্বজাতীয় ভাষায় প্রেরিত হয়েছেন- তাহলে বাংলাভাষী রসুল কে?
“কোরানিক দর্শনে বর্নিত রয়েছে প্রত্যেক জাতির মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির উপর রসুল রয়েছে, তাহলে বাংলা ভাষী রসুল কে? তারা কারা? তাদের নাম কি? (১৪ঃ০৪)”
বাংলা ভাষা হল সংকর ভাষা তথা মিশ্রভাষা তথা হাইব্রিড ভাষা। বাংলা ভাষার কোনো মূল খোজে পাওয়া যায় না। বাংলা ভাষায় আরবি, ফারসী,উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত, জাপানি, পর্তুগিজ, ইংরেজি, চায়না, ইরানী, বার্মাও ইউরোপীয় নানান ভাষার শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয় বাঙালীদের মাতৃভাষা বাংলা। সুতরাং বাঙালী রসুলের তথা বাঙালী অবতারের ভাষাও হবে মিশ্রভাষা। ভাঙালি অবতারও মিশ্রভাষা ব্যবহার করেই বাংলা ভাষীদের নিকট স্রষ্টার পরিচয় তুলে ধরবে, আর এটাই স্বাভাবিক।
প্রত্যেক জাতিই তার মাতৃভাষা তার প্রভুকে আহবান করে এবং তাদের প্রভুর প্রার্থনা ও র্গুণ কীর্তন করবে। আর আল্লাহপাকও কোরানে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের তথা প্রত্যেক জাতীর এবাদতের নিয়ম পদ্ধতি আলাদা আলাদা করে নিরধারন করে দিয়েছেন। (২২ঃ৬৭)।
পৃথিবীতে যতগুলো জাতি আছে, তা সংখ্যায় যতই হোক না কেন, প্রত্যেক জাতির জন্য কম করে হলেও অন্তত একজন রসুল পাঠানো হয়েছে বলে কোরান ঘোষনা করেছে। এই রসুল পাঠানোর বেলায় আল্লাহ এক বচন ব্যবহার করেন নি। যতবারই এই রসুল পাঠানোর ঘোষণা কোরানে আছে ততবারই তিনি ‘আমরা’রূপে পাঠিয়েছেন। এবং এই “আমরা” শব্দটির ব্যবহার আর একটি লক্ষণীয় বিষয়। তারপর বলা হয়েছে, যে জাতি যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষায় রসুল পাঠানো হয়েছে এবং হয়।
কেন সেই জাতির ভাষায় পাঠানো হয়? এ জন্যই যে, সেই জাতি যেন আল্লাহর গুণাবলির রহস্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে। তাই সেই জাতির ভাষায় সেই রসুল সব কিছু পরিষ্কার ব্যাখ্যা করে যেন বুঝিয়ে দিতে পারেন। এখন প্রশ্ন এক জাতি পানিকে “আব” নামক শব্দ দ্বারা বুঝতে পারে। আবার অন্য আর এক জাতি পানিকে “ওয়াটার” নামক শব্দ দ্বারা বুঝে থাকে। এরকমভাবে যে জাতির যে ভাষায় পানিকে বুঝানো হয়েছে সেই ভাষায় শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাঙালি জাতির ভাষার নাম যা-ই দেওয়া হোক না কেন, কিন্তু জাতি হিসাবে সেই ভাষাটিতে একজন রসুল পাঠানো হয়েছে।
বাঙালিরা যদি পানিকে জল নামক শব্দ দ্বারা বুঝে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেই রসুলকে জল অথবা এই জাতীয় একটি শব্দ ব্যবহার করতে হয়েছে। না হলে অন্য শব্দ ব্যবহার করলে বুঝতে কষ্ট হতে পারে ভেবেই কোরানের ঘোষণা দিতে হয়েছে। তাহলে পানিকে জল বললে বিজাতীয় বলে গালমন্দ করাটা কি নিছক পাগলামি নয়?
তাহলে ফেরেস্তা, জিন, শয়তান, বেহেস্ত দোজক ইত্যাদি শব্দগুলো প্রত্যেক জাতির আপন ভাষায় পাঠানো রসুলেরা নিশ্চয়ই প্রচার করে গেছেন। তাদের প্রচার করা শব্দগুলোকে কি বিজাতীয় দর্শন বলে গালমন্দ করাটা ঠিক হবে? পৃথিবীতে ধর্মের নামে এই ভাষাকে কেন্দ্র করে অনেক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে এবং এখনো এর অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায় নি। এই নোংরামিটাকেই সার্বজনীনতার পোশাকে পৃথিবীর সবাই কমবেশি চালাবার কী পরিণতি হতে পারে তা বুঝতে পারি একজাতির পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার ব্যবহারের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে অন্য জাতির মেলে না এবং না মেলারই কথা।
এটা জেনে শুনেও এইসব ঠুনকো অনুষ্ঠানের রকমারি নিয়ে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। আরব জাতির লম্বা পোশাক আর বাঙালির ধুতির মধ্যে আনুষ্ঠানিক ব্যবধান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মের মূল নিয়ে ব্যবধানের প্রশ্নই উঠতে পারে না। কারণ, রসুল পাঠানো হয়েছে। তাই আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের কোনো প্রকার উল্লেখ কোরানের কোথাও নেই। এর প্রধান কারণটি হচ্ছে যে, আচার অনুষ্ঠানগুলো রচিত হতে হবে ধর্মের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে। যেহেতু ধর্মের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আচার অনুষ্ঠানগুলো রচিত হতে হবে সেই হেতু এক এক জাতির এক এক রকম দেশীয় আচার অনুষ্ঠানগুলো রচিত হতে বাধ্য। আবু লাহাব এবং আবু জাহেল কাফের হলেও লম্বা আরবি পোশাকই পরিধান করতো।
তারা বাঙালীদের ধুতি কোনদিন পরিধান করেনি এবং করার প্রশ্নই উঠে না। সুতরাং ধুতি পরিধান করলেই ধর্ম নষ্ট হয়ে গেল, আর লম্বা আরবি পোশাক পরলেই ধর্ম রক্ষা করা হয় বলে যারা মনে করে আসছে তাদেরকে কিছু বলবার ভাষা নেই। কারণ তারা অনুষ্ঠানকেই ধর্ম মনে করে মনে শান্তি পায় এবং তাতে বলার কিছু নেই। কিন্তু যখন এই অনুষ্ঠানগুলো ভয়াবহ খুনাখুনির রূপধারণ করে তখনই এর প্রতিবাদ এবংপ্রতিরোধের প্রশ্নটি আসতে বাধ্য। মানব জাতির বহু অকল্যাণ বয়ে এসেছে এই অনুষ্ঠানগুলোর পথ দিয়ে।অথচ সমগ্র কোরানের কোথাও কোনরূপ অনুষ্ঠানের উল্লেখ নেই। বাংলার মরমি সাধক লালন ফকির এই বর্নিত কথাগুলো তার গানের প্রতিটি লাইনে তুলে ধরেছেন এমনভাবে যে- আনুষ্ঠানিকতার মাথা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
– RF Rasel Ahmed