কলবের বিজ্ঞান
মাথার জ্ঞান:
বিভিন্ন প্রকার শাস্ত্রীয় গ্রন্থ, দর্শন শাস্ত্র, বিজ্ঞান শাস্ত্র অর্থশাস্ত্র, চিকিৎসা শাস্ত্র, ব্যাকরণ শাস্ত্র ও নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি অধ্যায়ন করে যে তথ্য অর্জিত হয় তাকে মাথার জ্ঞান বলে।
সিনার জ্ঞান:
যে জ্ঞান সাধনার মারফতে স্বীয় সত্তা হতে অভিনবরূপে উদয় হয় তাকে সিনার জ্ঞান বলে। অর্থাৎ যে জ্ঞান আপন রবের নিকট থেকে কোন মাধ্যম ব্যতীত অহি তথা ইলহাম দ্বারা কলবে উদয় হয় তাকে সিনার জ্ঞান তথা লাধুনিক জ্ঞান বলে।
আল্লাহপাক বান্দার মাথার দিকে তাকান না, আল্লাহপাক তাকান বান্দার কলবের উপর। আল্লাহ মানুষের মাথায় মোহর মারেন না, তিনি মোহর মারেন মানুষের কলবের উপর। শয়তান ধোঁকা নিক্ষেপ করে বনী আদমের মাথায় না, শয়তান ধোঁকা নিক্ষেপ করে বনী আদমের কলবের উপর। নিয়তের সম্পর্ক মাথার সাথে না, নিয়তের সম্পর্ক কলবের সাথে।ঈমানের সম্পর্ক মাথার সাথে না, ঈমানের সম্পর্ক কলবের সাথে। পবিত্রতার সম্পর্ক মাথার সাথে না, পবিত্রতার সম্পর্ক কলবের সাথে। জ্ঞানের উদয় মাথায় হয় না, জ্ঞানের উদয় হয় কলবের উপর। মানুষ জীবিত থাকলেও কলব মৃত থাকে, মানুষের চর্মচক্ষু মাথায় থাকে, আর অন্তর চক্ষু তথা দিব্যদৃষ্টি কালবে থাকে।
জান্নাতের প্রশান্তি মাথা দিয়ে আসে না, প্রশান্তি আসে কলবের মাধ্যমে। জাহান্নামের ধ্রুমবিহীন অগ্নি মাথা জ্বালায় না, জাহান্নামের অগ্নি জ্বালায় অন্তর তথা কলবটি। রুহুল আমিন মহানবীকে জ্ঞান তথা কোরান মাথায় চাপ দিয়ে দেন নাই, রুহুল আমিন মহানবীর ক্বালবে উদয় হন। আল্লাহর নূর মাথায় ফুটে না, আল্লাহর নূর কলবের উপরই ফুটে উঠে। আল্লাহ দ্বীনের জন্য মাথা উন্মুক্ত করেন না, আল্লাহ দ্বীনের জন্য কলব উন্মুক্ত করে দেন। মাথায় হল শয়তানের আরশ, কলব হলো আল্লাহর আরশ।মাথায় রূহ জাগ্রত হয় না, রূহ জাগ্রত হয় কলবের উপর। মাথার জ্ঞান অনুসরণ – অনুকরণের প্রতীক, কলবের জ্ঞান সৃজনশীলতার প্রতীক। মাথার জ্ঞান প্রতিযোগিতা করে, কলবের জ্ঞান সংযমী ও বিনয়ী করে তুলে। মাথার জ্ঞানী পন্ডিত তথা বিদ্বান, কলবের জ্ঞানী স্বশিক্ষিত। মাথার জ্ঞান সমীম, কলবের জ্ঞান অসীম। দুনিয়া ইনসানের মাথায় থাকে না, দুনিয়া অবস্থান করে ইনসানের কলবের উপর। মাথার জ্ঞানীদের সাথে আল্লাহ জাতরূপে অবস্থান করেন না, লাধুনিক জ্ঞানীদের সাথে আল্লাহ রব তথা জাতরূপে থাকে।
- সিনার জ্ঞানী: যেমন- আদম, মুমিন, মুহসিনিন, মুত্তাকী , আব্দুহু, সবরকারী ইত্যাদি,
- মাথার জ্ঞানী: যেমন- পন্ডিত, যুক্তিবাদী , বিদ্বান , তার্কিক, বৈকরণিক, শাস্ত্রবিশারদ ও আইনজ্ঞ ইত্যাদি।
যিনি মাথার জ্ঞানে জ্ঞানী তিনি বস্তুবিজ্ঞানী, যিনি সিনার জ্ঞানে জ্ঞানী তিনি আত্মার বিজ্ঞানী। মাথার জ্ঞানী সবাক, আত্মার জ্ঞানী নির্বাক। মাথার জ্ঞান যেখানে শেষ, সিনার জ্ঞান সেখান থেকে আরম্ভ। মাথার জ্ঞানে অ্যালফাবেট থাকে, কিন্তু সিনার জ্ঞানে কোনো অ্যালফাবেট নেই। জ্ঞানের স্বরূপ হল কলমের জ্ঞান, কলমের জ্ঞানের উৎপত্তির স্থল হল সিনার জ্ঞান। সিনার জ্ঞান বস্তুবিজ্ঞানের অতীত যা বি অন সাইন্স। মাথার জ্ঞান আপেক্ষিক, সিনার জ্ঞান সার্বিক। মাথার জ্ঞান খন্ডিত, সিনার জ্ঞান অখন্ড।মাথার জ্ঞান মূর্ত আর সিনার জ্ঞান বিমূর্ত। একটির প্রমাণ দেওয়া যায়,অপরটি ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ।
লাধুনিক তত্ত্ব
রাজা- বাদশা পায় না তোমায়,
কুস্বভাবের কারণে-
দুনিয়ার ধন বিষ্ঠা বস্তু,
ধরিয়ে রাখতে চায় ভুবনে।
মনি- মুক্তা দুনিয়ার ধন,
এসব শুধু অশান্তির কারণ-
সংযমে থেকে কর সাধন,
শান্তি পাবে জীবনে।
আরেফ ব্যক্তির সুহাব্বতে থেকে,
পূর্বের স্বভাব হয় ত্যাগ করিতে,
লোভ লালসা বর্জনেতে,
শান্তি আসে কয় কেরানে।
আমিত্ব ত্যাগ করিয়া,
তুমি মূল তাতে স্বনির্ভর হইয়া-
তার স্বভাবে স্বভাব বানািয়া,
তাকিয়ে থাক আত্মদর্শনে।
পাঠ্যশিক্ষা সাধারণ জ্ঞান,
তাসাউফ শিক্ষা শুদ্ধ জ্ঞান,
লাধুনিক শিক্ষা আধ্যাত্মিক জ্ঞান,
ইলহাম দিবে প্রানে প্রাণে।
স্বভাব সুক্ষ্ম মানুষ যাঁরা,
কামভাবে খন্ড হয় না তাঁরা,
শাহজাহান কয় আদম ধরে মানুষ হয়েছে যারা,
শান্তিতে থাকে সর্বখানে।
(সংযমের সংবিধান কিতাব : লাধুনিক তত্ত্ব)
তাসাউফ তত্ত্ব
তাসাউফের জ্ঞান পাইলে,
পাঠ্যশিক্ষা লাগে না –
কোরান- পুরাণ শাস্ত্র পড়ে,
আল্লাহ সবাই দেখে না।
এলমে শরিয়ত, এলমে তরিকত,
এলমে হাকিক, এলমে মারফত,
এলমে তাসাউফ, এলমে লাধুনি,
হাসিল কেন কর না।
গুরুর কলবে কলব মিলািয়া,
রাসুল হইতে তাওয়াজ্জু আনিয়া,
থাক সর্বক্ষণ জিকির ধরিয়া,
মোরাকাবা ছাইড় না।
গন্থকিতাবে আল্লাহ নাই,
আদম সুরতে আল্লাহ কোরানে পাই,
তাসাউফ ধরে দেখিতে পাই,
আমল ছাড়া আল্লাহ পায় না।
সংবিধানে রাস্তা দেখায়,
আদম আদম ভজলে সব পাওয়া যায়।
পরাগায়ণে সুফল পাওয়া যায়,
অনুদান সকলে পায় না।
কবি শাহজাহান অসীমের দান পাইয়া,
আমারে আমি চিনিয়া-
ধর্মগন্থের ঊর্ধ্বে গিয়া,
শ্রীরূপ ধরেছি ভুলিব না।
(সংযমের সংবিধান কিতাব : তাসাউফ তত্ত্ব)
“তিনি ( আল্লাহ) যাহাকে ইচ্ছা হিকমত প্রদান করেন এবং যাহাকে হিকমত প্রদান করা হয় তাহাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। (২ঃ২৬৯)।”
“অত:পর উহারা সাক্ষাৎ পাইল আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাহাকে (আমি) আমার নিকট হইতে অনুগ্রহ দান করিয়াছিলাম ও আমার নিকট হইতে শিক্ষা দিয়াছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। (১৮:৬৫)”
“আল্লাহ ইসলামের জন্য যাহার বক্ষ( কলব) উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছেন এবং যে তাঁহার নূরের (বলয়ে) রহিয়াছে , সে কি তাঁহার সমান যে এরূপ নয়? দুর্ভোগ সেই কঠোরহৃদয় ব্যক্তিদের জন্য, যাঁহারা আল্লাহর জিকির বিমূখ! উহারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে। (৩৯:২২)”
“যুক্তিতর্ক কথাবার্তা, আইনের যেখানে শেষ হয়ে যায়, সেখান থেকেই ভালোবাসা শুরু হয়। (কালান্দার জাহাঙ্গীর আঃ)। ”
– আর এফ রাসেল আহমেদ