হে সাকী (পর্ব-০১)
১.
হে সাকী!
কি অপূর্ব পেয়ালা পূর্ণ অমৃত সরাব: সরাবের স্বচ্ছ প্রতিটি ফোঁটায় আমার মাহাবুবের এশক্ব টগবগিয়ে ওঠছে। সরাবের প্রতিটি টগবগিয়ে ওঠা অমৃত জলবিন্দু কি সুন্দর করে আমার বন্ধুর জিকিরে মশগুল আছে। প্রেমিক ভিন্ন চোখ আমার মাওলার এশক্বের প্রতিটি স্বচ্ছ জল বিন্দুর নৃত্য দেখতে পায় না। আশেকের ঐ মিষ্ট ঠোঁট ব্যতীত আমার বঁন্ধুর এশক্বের অমৃত সুধার স্বাদ অস্বাদন করতে পারে না। মামুন ঐ সরাবের ছিপিতে লেগে থাকা হাল্কা কিছু অমৃতের স্বাদ পেয়ে উন্মাদের ন্যায় মাতাল হয়েছে। যার দরুন, পরিবার ও সমাজ তাকে আর ভালবাসে না। অদূরে থাকা মৌলুবি সাহবেও তার চার দেয়ালে ঘেরা মসজিদে আমায় আর খুঁজে পায় না। আমার সন্ধ্যান ঐ স্থানে পাবেই বা কেনো? যেখানে আমার বন্ধু নাই, ঐ স্থান মামুন কবে-ই ত্যাগ করেছে। ঐ চার দেয়ালে ঘেরা ঘরটির ভিতর কি আমার মাহাবুব তথা আমার বন্ধু আছে? কিন্তু সাকী দেখো সরাব পূর্ণ্য পেয়ালায় দৃষ্টি রেখে, আমার মাহাবুব আমার মতই মাতাল হয়ে আছে আর টগবগিয়ে ওঠা প্রতিটি স্বচ্ছ জলবিন্দুতে তাঁর পাগলদের এশক্বের অমৃতের ন্যায় সরাবের স্বাদ বিলিয়ে দিচ্ছে। পাগল, আশেক, জাকের, দেওয়ানা, মজনু তথা ফানা হওয়া প্রতিটি ব্যক্তি ঐ সরাবের এক ছিপি পান করে থাকে।
২.
হে সাকী!
দেখেছো কি অদ্ভুত মায়ার খেলা। এ খেলা বেঁধে রাখার খেলা, এ খেলা অতি নিকটে টেনে নিয়ে আসার খেলা। যে খেলায় কেউ জয়ী নয় সকলেই পরাজিত। যিঁনি-ই নিজেকে জয়ী মনে করেন সেঁও পরাজিত। মায়া খুবই মারাত্মক একটা টান, যা যোজন যোজন দূরত্বে থাকা বস্তুকেও অতি-নিকটে নিয়ে আসে, যার দরূন এই মায়াতেই সমস্ত সৃষ্টিক‚ল আবদ্ধ। কিন্তু মায়াকে নিয়ন্ত্রণ করেই চলছে মায়া নগরীর এই নাট্য-খেলা। যেমন পিতা-পুত্রে, স্বামী-স্ত্রীতে, মাতা-সন্তানে, কারীগর-তাঁর তৈরীকৃত জিনিসপত্রে এবং পরিশেষে ¯্রষ্টা-তাঁর সৃষ্টির মায়ায় আবদ্ধ। প্রত্যেকটা ধর্মের-কর্ম করণ-ই মায়ার একটা অংশ। ধর্ম যখন পালনে ব্যস্ত, মায়া তখনও তার করণে আবদ্ধ। মায়া ব্যতীত খোদাও মিলে না।
৩.
হে সাকী!
আমাদের জীবন সায়াহ্নের সুখ নামক নদীতে জোয়ার-ভাটা পড়বে কিন্তু সাবধান! প্রেমে যেনো কখনো ভাটা না পড়ে। প্রেমের প্রয়োজনে সর্বস্ত্র ত্যাগ কর কিন্তু কিছু পাওয়ার জন্যে প্রেমকে ত্যাগ করো না। জেনে রাখো, ফ‚ল শূণ্য কাননে কী ঘ্রাণ শুকলে ফুলের ঘ্রাণ মিলে? যখন কানন ফুল শূণ্য থাকে তাকে কী কানন বলে? মানুষ ভরা পৃথিবীর মধ্য থেকে সেই মানুষের তালাশ করতে হবে। যেখানে মানুষ শূণ্য সেখানে কি করে মানুষ-মানুষের সন্ধ্যান করবে?
৪.
হে সাকী!
তোমার নিকট যে পথের/জ্ঞান/চিন্তা ধারার সমাপ্তের দেয়াল পড়েছে খিজিরদের নিকট সে পথের হাজারো নহর শুরু মাত্র। কেনো না ইদুরের গর্তো খুড়ে দেখো, তার গর্তের শেষ ভাগে যে নহরের সীমানায় সমাপ্তের দেয়াল গড়া তার অদৃষ্টেই নতুন ধানের গোলা ভর্তি নহরের পথ শুরু হয়েছে। যাহাতে কৃষকের ক্ষেতের নতুন ধানে ইদুরের গর্তো পুর্ণ রয়েছে। তেমনি যদি খিজিরের জ্ঞানে জ্ঞান প্রাপ্ত হও তবে সমাপ্তের দেয়াল ভেঙ্গে হীরা-মণি-মুক্তা খচিত রহস্য জ্ঞান ভান্ডারের সন্ধ্যান লাভ করিতে পারিবে।
৫.
হে সাকী!
অতি নিকটে না আসলে যেমন কাউকে প্রেম শিকলে বাঁধা যায় না তৎদ্রæপ অতি নিকটে না আসলে আঘাত ও করা যায় না কিন্তু আমার বন্ধুর প্রেম এবং আঘাত দু’টোই আমার কাছে মধুময় তার বিষ মাখানো তীরটাও মধুময়। যা আমার হৃদয়ে প্রেমের ক্ষত তৈয়ার করে সে ক্ষতটাও মধুময়।
লেখা- সৈয়দ মামুন চিশতী