বীর্য পাক ও পবিত্র।
বীর্য পাক ও পবিত্র। অনেকেই বীর্যকে অপবিত্র মনে করে থাকে। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্বল্প মূল্যের বাজারজাতকৃত ভ্রান্ত ইসলামীক বই গুলোতেও বীর্যকে নাপাক বলে প্রচার হচ্ছে। কিন্তু কুরআন ও হাদিস কি বলে দেখুন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﺃَﻟَﻢْ ﻧَﺨْﻠُﻘْﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ ﻣَﻬِﻴﻦٍ –
অর্থঃ“আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করি নি? (মুরসালাতঃ ২০)
আল্লাহ্ তায়ালা আরও বলেন..
ﻓَﻠْﻴَﻨْﻈُﺮِ ﺍﻟْﺈِﻧْﺴَﺎﻥُ ﻣِﻢَّ ﺧُﻠِﻖَ ﺧُﻠِﻖَ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ ﺩَﺍﻓِﻖ-
অর্থঃ “অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে”। (সূরা তারিকঃ ৫-৬)
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত দ্বয়ে যেই পানির কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে নির্গত মনী বা বীর্য। এটি পবিত্র না অপবিত্র, আলেমদের থেকে এ ব্যাপরে দু’টি মত পাওয়া যায়। সঠিক কথা হচ্ছে এটি পবিত্র। এই পানি পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ”আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর কাপড় হতে হাত দিয়ে ঘষে মনী (বীর্য) পরিস্কার করতাম। তিনি সেই কাপড় পরে নামায আদায় করতেন”। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ৫৭৫ ইঃফাঃ)
এটি জানা কথা যে ঘষাঘষি করে মনী পরিস্কার করলে তা সম্পূর্ণরুপে পরিস্কার হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাতে দাগ থেকে যাবে। আর তা সহ নামায পড়া প্রমাণ করে যে মনী অপবিত্র নয়। অপবিত্র হলে এই অবস্থায় রাসূল (স:) নামাজ পড়তেন না।
আশ্ শরহুল মুমতিউ (১/৩৮৮) এ উল্লেখ আছে যেঃ “এই পানি দিয়েই নবী, রাসূল অলী -আওলীয়া ও আল্লাহর সৎ বান্দাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সমস্ত প্রিয় বান্দাদেরকে আল্লাহ্ তাআলা অপবিত্র উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করবেন, তা হতেই পারে না।”
ওহাবীদের একজন অন্যতম ইমাম ইবনে তাইমীয়া বলেনঃ ‘সঠিক কথা হচ্ছে মনী পবিত্র’।এটিই ইমাম শাফেঈ এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্মালের প্রসিদ্ধ মত। তবে ঈমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেনঃ ‘তা অপবিত্র। তবে ঘষাঘষির মাধমে তা দূর করাই যথেষ্ট।’ ইমাম মালেক (রঃ) বলেনঃ ‘ধৌত করা আবশ্যক।’
এ সমস্ত মতের মধ্যে প্রথমটিই সঠিক।
বীর্য যদি নাপাকী হইতো তাহলে যেখানে বীর্য লাগে, সেখানে পরিস্কার এর কথা বলা হইতো, যেমন পেশাব পায়খানার বেলায় করতে হয়। কিন্তু বীর্যের ক্ষেত্রে পুরো শরীর ধৌত করতে হয়, অর্থাৎ গোসল করতে হয়। কারন এটা আল্লাহর হুকুম। যেমন কেউ অযুর পর বাত কর্ম করলে অর্থাৎ গুহ্যদেশ দিয়ে বায়ু বের বের হলে আবার অযু করতে হয়। কিন্তু গুহ্যদ্বার কিন্তু আমরা কেউ পরিস্কার করি না। পরিস্কার করি হাত পা অযুর মাধ্যমে। কারন এটা আল্লাহর হুকুম। গোসলের ব্যাপারটাও তাই।
আর পাক হইলেই যে খাইতে হবে, এমন কিন্তু নয়। মাটিও কিন্তু পাক, জুতাও পাক, কাঠও পাক, বইও পাক, থালা বাসনও পাক। তাই বলে কিন্তু আমরা এগুলো খাই না কেউ। তবে কেউ যদি খায়, সেটা তাঁর ইচ্ছা। রুচির উপর নির্ভর করে (যারা খাওয়া নিয়ে প্যাক প্যাক করে)।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমাদের দেশের অনেকের মুখেই শুনা যায় মানুষকে এক ফোটা নাপাক পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি বানোয়াট ও দলীল বিহীন কথা। সুতরাং এ ধরণের কথা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
এতো দলীল দেওয়ার পরেও যারা এটা মানে না যে বীর্য পাক, তারা হল কাফের ও আর মু্শরিকদের অন্তর ভুক্ত। কারন তারা সত্য। অস্বীকারকারী। আর কাফের আর মুশরিকরা হল নাপাক।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ ﻧَﺠَﺲٌ
অর্থঃ ‘হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় মুশরিকরা নাপাক।’ (সূরা তওবা: ৯ আয়াত)
আর হযরত মুহাম্মদ (স) বলেনঃ “মুমীন কখনো নাপাক হয় না।” (আল হাদিস)
লেখাঃ DM Rahat